রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (৮ম পর্ব) -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

মায়াবতী ও দয়াল কুমার তার চাচা কে নৌকা পর্যন্ত রেখে আছে । তার নৌকায় উঠার পর তারা দুজন সে গ্রামের ধুলো-বালির রাস্তার ধার দিয়ে পায়ে হেটে মাসীর বাড়ীর দিকে আসতে থাকে। সে সময় রাস্তার ধার দিয়ে টমটমি বাজিয়ে আইসক্রীম বিক্রেতা হেটে যাচ্ছিল আর বলছিল আইসক্রীম নিবেন, আইসক্রীম নিবেন । তখন মায়াবতী দয়াল কে বলে একটি আইসক্রীম কিনে দাওনা গো। কত দিন হলো আইসক্রীম খাই না। তখন দয়াল আইসক্রীম বিক্রেতাকে ডাক ছুরে, ও ভাই আইসক্রীম ওয়ালা ভাই দাড়াও, আইসক্রীম দিয়ে যাও। ডাক শুনে আইসক্রীম বিক্রেতা ঘুরে এসে তাদের দুটো আইসক্রী দিয়ে যায় । তারা দুজন আইসক্রীম খেতে খেতে মাসীর বাড়ী চলে আসে। বাড়ীর আসার পথে সে গ্রামের রতন মাতব্বরের ছেলে রন্টু তাদের ফলো করে। সে পিছন হতে খেয়াল করে যে, কোন বাড়ীতে এ জুটির আগমন ঘটেছে ।

 

সে তার সহযোগী প্রকাশ কে বলে দেখিস তো ঐযে ছেলে-মেয়ে দুটো কার বাড়ীতে এসেছে বার এদের মতলব কি? বিয়ে করেছে নাকি ভাগিয়ে এসে প্রেম প্রেম খেলা করছে। যদি আামাদের লাইনে আনতে পারি, তাহলে কিছু মাল কামানো যাবে । প্রকাশ বলে খোজ নিচ্ছি আমি। রতন মাতব্বরের ছেলে রন্টু আর প্রকাশ এলাকায় কেউ প্রেম করে বিয়ে বা কোন প্রকাশ ধান্দাবাজির ঘটনা দেখলে, তাদের জিম্মি করে সমাজপতিদের ভয় দেখিয়ে বা সমাজে অসুবিধা করার হুমকি দিয়ে টাকা কামিয়ে থাকে। প্রকাশ রন্টুর কথামত তাদের পিছু পিছু এসে দেখে তারা রাজীবদের বাড়ীতে এসেছে । রাজীব তাদের সহপাঠি ছিল। মায়াবতীর মাসতাতো ভাই রাজীব রাক্ষুসী নদীতে নৌকা ডুবে মারা গেছে । মায়াবতী ও দয়াল কুমার বাড়ীতে আসার পর দয়ালকুমার বলিতেছে, তুমি একটু মাসির কাজে সহযোগিতা কর , আমি একটু ঘুমাই। দয়াল বিছানায় ঘুমায় এবং মায়াবতী বাড়ীর ভিতরে মাসির সাথে তরকাটি কুটার কাজে সহযোগিতা করার জন্য বসে। তখন তার মাসি বলে, তুই জামাইএর কাছে যা। আমি একাই কাজ করি। জামাই বাবাজি একা একা ঘুমাইতেছে । তখন মায়াবতী বলে , মাসি তুমি না কেমন? দিনে দুপুরে কি জামাইএর সাথে শুয়ে থাকতে হবে। মাসি বলে, তোদের বয়সে আমরা কত আনন্দ করেছি । দুই এক বছর তো এ আত্বীয়বাড়ী ও আত্নীয় বাড়ীতে আনন্দে ঘুরে বেড়াইছি ।

 

জামাই এর পাছ একটু ছাড়িনি। মায়াবতী বলে তুমি এখন চুপ কর। মায়াবতীর মাসি খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। মায়াবতী বলে মা তুই এক কাজ কর, রাজীবের ফুফাতো বোন বুবলি এসেছে। ও অনেকদিন বলে তোমার বোনের মেয়ে আসলে খবর দিয়ো । ওরা সব সময় তোর কথা বলে। তোর জামাই সাথে নিয়ে গেলে ওরা ভীষন খুশি হবে। মায়াবতী বলে বুবলি দিদি এসেছে , তাহলে তো ভাল খবর। কতদিন হলো তার সাথে দেখা হয় না। তাহলে তোমাদের জামাই একটু ঘুম পারুক। তার পর দুপুরে স্নান করে খাওয়া-দাওয়া করে যাবো। এর পর মাসির সাথে মায়াবতী কাজ করিতে থাকে। দয়াল কুমার ঘুম থেকে উঠে গোসল করার জন্য মায়াবতীকে ডাকে। মায়াবতী ও দয়াল কুমার নদীতে স্নান করিতে যায় । নদীর তীরে বসে দুজন গল্প করার ছলে গোসল করতে থাকে । পাশে গোসলরত লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে এরা আবার কোথা থেকে এলো। এতো সুন্দর ছেলে-মেয়ে আগে তো কখনও দেখেনি। তারা নদীতে ছোট ছেলে-মেয়েদের মত পানি ছোড়া-ছুড়ি খেলতে থাকে এবং মায়াবতী গামছা দিয়ে দয়ালের পিঠে গামের ময়লা পরিস্কার ও সাবান লাগিয়ে দেয় । আবার তারা একসাথে নদীতে হালকা দুরত্বের মধ্যে সাতার খেলতে থাকে । এভাবে তারা অনেক সময় ধরে গোসল করে । নদীতে স্নান করে ফেরার সময় রাস্তার মধ্যে দয়াল কুমারের সাথে রন্টুর কথা হয় ।

 

রন্টু তার কাছে জানতে চায় । সে কোথা থেকে এসেছে কাদের বাড়ী তে এসেছে । ্ও মেয়েটার সাথে তার কি সম্পর্ক ইত্যাদি। তখন দয়াল কুমার তাকে জানায়, সে রাজীব দের বাড়ীতে এসেছে । ও মেয়েটা রাজীবের মাসতাতো বোন এবং তার বৈধ স্ত্রী । সে আরো বলে, আরো কিছু যদি জানতে ইচ্ছে হয়, তাহলে সিকিম রাজ্যের রাজা দশমন্তোর কাছে লোক পাঠিয়ে আমার খবর নিলে আরো কিছু জানতে পারবে। সে ভাবে এখানে সে কোন বিপদে পড়িলে তার বাবা তাকে ঠিকই উদ্ধার করিবে ভেবে সে জানায় আমি ঐ রাজ্যের ভবিষ্যত রাজা। তখন রন্টু বলে, আপনি রাজার ছেলে হয়ে এমন অবস্থা কেন? তখন দয়াল বলে দাদা এটা বিধাতার লিখন, যায় না খন্ডন। তাই এই অবস্থা। তখন আর রন্টু তার কাছে সুবিধা করিতো পারিল না। রন্টু ভাকে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে, তার বাবার মাতব্বরী পর্যন্ত হারিয়ে যাবে।তাই রন্টু দয়ালকে বলে রাজীব তার সহপাঠি ছিল, যেহেতু রাজীবের বোন জামাই মানে আমার ও তাই না। দয়ালকে রন্টু তাদের বাড়ীতে নিমন্ত্রন জানায়, সে যেন তাদের বাড়ীতে একদিন মেহমান হিসেবে আসেন। দয়াল আর মায়াবতী ভেজা কাপড়ে বাড়ী চলে আসে। কাপড় পাল্টিয়ে তারা খাবার খেয়ে বুবলিদের বাড়ীতে যায় । বুবলিদের বাড়ীতে গিয়ে দেখে বুবলির স্বামী ও এসেছে । বুবলির স্বামী নির্মলকে দেখে দয়ালের খুব ভাল লাগে । সে ভাবে যাক একজন লোক পাওয়া গেল যে, তার সাথে একটু সময় কাটানো যাবে। নির্মল একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করে। সে লেখাপড়ায় মাস্টার্স পাশ ।

 

বুবলিও লেখাপড়ায় বেশ ভাল ছিল। এইচএসসিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয় । বুবলির ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়া । কিন্ত তা হয় নাই একই গ্রামের বখাটে ছেলে প্রকাশের জন্য। সে সব সময় বুবলি কে ডিস্টার্ব করিতো। রাস্তায় ওৎ পেতে থাকতো। সামনে আসলেই বলতো আমি তোমায় ভালবাসি। চলো একটু নদীর পাড় দিয়ে ঘুরে আসি। দেখো এতো লেখাপড়া কি হবে। আমার বাবার অঢেল ধনসম্পদ খেয়ে শেষ করিতে পারিবেনা। তুমি তো আমার রাজরানী হবে। তখন বুবলি তাকে অনেক বুঝিয়ে তার থেকে মুক্তি পাচ্ছিল না। বুবলিকে একবার জোর করে উঠিয়ে নেওয়ার সময় গ্রামবাসীর সম্মুখ বাধার কারনে তাকে রেখে যেতে বাধ্য হয় । বুবলি অসাধারন সুন্দরী হওয়ায় তার জন্য প্রকাশ পাগল হয়ে যায় । শেষে বুবলির বাবা তার মেয়ের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দ্রুত ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দেয়। এভাবেই বুবলির জীবন থেকে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে যায় । বুবলি ও অনেকদিন পর মায়াবতীকে ও তার স্বামীকে দেখে খুব খুশি হয় । দয়াল বুবলির স্বামী নির্মল এর সাথে পরিচয় হয় । তাদের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে ভাল সম্পর্ক তৈরী হয় । বুবলির মা তাদের জন্য সেমাই পায়েশ রান্না করে। বুবলি মায়াবতীর স্বামীকে সাথে নিয়ে নির্মলের সাথে বসে একসাথে সবাই সেমাই পায়েশ খায় । তখন বুবলি জানায় আজ তাদের গ্রামে নৌকা বাইচ হবে। মায়াবতী বলে তাহলে তো ভালই হবে ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর