গত ৬ আগস্ট (শুক্রবার) থেকে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা পর্যন্ত আফগানিস্তানের মোট ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। এমন পরিস্থিতিতে অল্প সময়ের জন্য সেনা পাঠিয়ে সেখানে অবস্থানরত দূতাবাসকর্মী ও নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ব্রিটেনের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে আফগানিস্তান। সঙ্কট উত্তরণে আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জাতিসংঘ বলছে, আফগানিস্তান মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
১৮ প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ
আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত তালেবানের হাতে যাওয়া ১৮ প্রদেশের নামগুলো হলো– কান্দাহার, গজনি, হেলমান্দ, নিমরুজ, ফারাহ, জুযজান, কুন্দুজ, বাদাখশান, তাখার, বালগান, সামনিগান, সারপুল, বাদগিস, গাওর, হেরাত, লস্করগাহ, শেবেরগান, বলখ। দুই দশকের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের সর্বশেষ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তালেবান তখন একের পর এক এলাকা দখল করে নিয়ে এগোচ্ছে রাজধানী কাবুলের দিকে।
স্বল্পমেয়াদে আবার সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র
বৃহস্পতিবার তারা দেশটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার ও হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। বেশিরভাগ কর্মীকে সরিয়ে নিয়ে সেখানে শুধু মূল কূটনৈতিক উপস্থিতি থাকবে। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, দূতাবাস থেকে কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র। আগস্টের শেষ নাগাদ এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করার আশা করছেন তিনি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কাবুল শহর থেকে সরিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে বলে পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য বলেছে, তাদের নাগরিক এবং আফগান দোভাষীদের সরিয়ে আনতে ৬০০ সেনা মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি তাদের সব নাগরিককে অবিলম্বে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বলেছে। আর জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করে বলেছে, তালেবান বাহিনী কাবুল দখল করে নিলে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এমন পরিস্থিতিতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, তালেবান একক শক্তি নয়। তাদের মধ্যেও বহু স্বার্থের বিভাজন রয়েছে। আমার ধারণা দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে সমন্বয়ের আহ্বান ইইউর
সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি উত্তরণে দেশটির সরকারকে তালেবানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বরেল। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তানকে রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসা, সব অংশীদারদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো এবং ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্যে তালেবানের সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।