দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আহরণ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছর ২০১৯-২০-এ মোট আদায় হয়েছিল ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে অনেকটাই গতি ফিরে পেয়েছিল অর্থনীতি। চলতি বছরের শুরু থেকেই আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহে গতি এসেছে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। তবে আগের বছর নেতিবাচক থাকায় এবার প্রবৃদ্ধি বেশি মনে করছেন তারা। এটিকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হিসেবে আখ্যায়িত করে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এবার যে পরিমাণ আদায় হয়েছে, তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।
রাজস্ব বোর্ডের সবশেষ সাময়িক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে আয়কর থেকে আদায়
হয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে আয়করে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে আয়করে প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের অন্যতম উৎস ভ্যাটে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে ভ্যাটে ঘাটতি ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধি প্রায় ১১ শতাংশ। অপরদিকে আমদানি শুল্ক খাতে আদায় হয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে আমদানি পর্যায়ে ঘাটতি দাঁড়ায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
ফলে সামগ্রিকভাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় বা ঘাটতি হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট ৩ লাখ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিনা প্রশ্নে কালো টাকার সাদা করার সুযোগ, রাজস্ব ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন, উৎসে কর আহরণে জোরদার ও রাজস্ব বোর্ডের মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের ফলে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। যদিও করোনার কারণে গত বছর উভয় খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল এনবিআরের।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে রাজস্ব আহরণের চিত্র নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, এ জন্য রাজস্ব আহরণও বেড়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে রাজস্ব আহরণ আরও বেশি হওয়ার কথা। কারণ রাজস্ব জিডিপিতে আমাদের অবদান কম। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। তিনি আরও বলেন, এ বছর কোভিডের মধ্যে রাজস্ব আহরণ অবশ্যই ভালো। কারণ গত বছর নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
জানা গেছে, আয়কর খাতে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান লার্জ ট্যাক্সপেয়ার ইউনিট (এলটিইউ)। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে গেল বছর তাদের আহরণ ২৪০১১ কোটি টাকা। মোবাইল ফোন কোম্পানি, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ, সিমেন্ট, সিরামিকসহ বৃহৎ প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর আদায় করে তারা। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগও তাদের প্রবৃদ্ধিতে ভালো ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এলটিইউর পরই রাজস্ব সবচেয়ে বেশি আসে ঢাকার করাঞ্চল-১ থেকে। কোম্পানির পাশাপাশি পেশাজীবীদের আয়কর আহরণ করে তারা। ১৫ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত এক বছরে চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চলাচল সীমিত হওয়ায় ছোট প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা কমেছে। তবে বড় প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করেছে। ফলে সিরামিক, মোবাইল ফোন, ব্যাংক, বৃহৎ কনজিউমার প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় বেড়েছে এনবিআরের।
#চলনবিলের আলো / আপন