নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তবে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দসহ এই আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি নয় লাখ টাকা। এর মধ্যে এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা আসবে। এছাড়া স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে নয় হাজার ৪৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদ উপস্থাপিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় এই বরাদ্দ ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এর আগে গত ১৯ মে বাজেটে উন্নয়নের প্রধান এ অংশটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি তৈরির সময় করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থখাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩ কেটি টাকা। তুলনামুলক বরাদ্দ বেড়েছে দুই হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষিখাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আট হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ বেড়েছে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার হচ্ছে এক লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এই তুলনায় নতুন এডিপির আকার বেড়েছে ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ছয় দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর বাইরে নয় হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৬৭৭টি। এর মধ্যে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ৮৯টি। আর একবারেই নতুন প্রকল্প রয়েছে ৪৬টি। এছাড়া এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৩৪৭টি। বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৯৬টি।
এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপ (পিপিপি) প্রকল্প রয়েছে ৬১টি। সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্প ৩৮২টি আর মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প রয়েছে ৩৪৩টি। এডিপি পর্যালোচনা করে গেছে, আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনংসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কৃষিখাতে বরাদ্দ আট হাজার ৩৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা। শিল্প খাতে তিন হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাতে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। যোগাযোগ খাতে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২৩ হাজার ৩৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গণসংযোগ খাতে ২৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সমাজকল্যাণ, মহিলাবিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাতে ৯৩০ কোটি টাকা। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৫৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জনপ্রশাসন খাতে চার হাজার ৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পানি সম্পদ খাতে পাঁচ হাজার ৫২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ৫১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ৫৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ফলে বরাদ্দ কমছে ৫৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এডিপি পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে সর্বনিম্ন বরাদ্দ পাচ্ছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়, যার পরিমাণ ৮৩ লাখ টাকা। যা মোট এডিপির শূন্য শতাংশ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এছাড়া পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৭ হাজার ৩৮৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৪৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১০ হাজার ৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নয় হাজার ৮৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নয় হাজার ৪০৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া সেতু বিভাগের জন্য সাত হাজার ৯৭২ কোটি টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ছয় হাজার ২৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হচ্ছে।