সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

ওমর ফারুখ ত্রিপুরা হত্যাকান্ড এবং আমার পাহাড়ী ভাবনা – আরিফ চৌধুরীঃ

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১, ৮:৫৮ অপরাহ্ণ

অতি সম্প্রতি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে ওমর ফারুখ ত্রিপুরা নামে একজন পাহাড়ী (নব মুসলিম) নিহত হয়েছে। যে কোন মানবিক অনুভূতিশীল মানুষের মত আমিও উক্ত হত্যাকান্ডে মর্মাহত, ব্যথিত এবং প্রচণ্ড ক্ষোভাক্রান্ত। তবে আমার এই অনুভূতি গুলো এক বিন্দু পরিমানেও ধর্মীয় ও জাতিগত অবস্থান থেকে নয়,বরং মনুষ্যত্ববোধ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতা বোধ থেকে। পাহাড় বা পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসরত সকল মানুষই জাতি,ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ী। জাত,ধর্ম ও বর্ণ যার যার। সে বিচারে আমিও একজন গর্বিত পাহাড়ী। পাহাড়ে ধর্মান্তরের পক্রিয়া নতুন ও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। ত্রিপুরাদের মধ্যে বর্তমানে সিংহভাগই খৃস্টান, যারা তিন পুরুষ আগে কেউই খৃস্টান ছিলনা। তাদের অধিকাংশ হিন্দু এবং কিছু সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। দলে দলে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্ম পালনকারী ত্রিপুরারা যখন খৃস্টান মিশনারী ও বিদেশী এনজিওর প্রানান্ত প্রচেষ্টায় ধর্মান্তরিত হয়ে নবখৃস্টান হচ্ছিল তখন কি পাহাড়ে অশান্তির ঝড় উঠেছে? না উঠেনি। তাদের কেউ কি পরিবার বা সমাজচ্যুত বা বিতাড়িত হয়েছে? না হয়নি। কিন্তু কেউ যদি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় তা যেন হাজারো মাথা ব্যাথার কারন। নব মুসলিমরা তাদের পরিবার এবং সমাজে এক বিন্দুর জন্যও ঠাঁই পায়না। হয়ে যায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। একই পাড়ায় বৌদ্ধ বা হিন্দুর সাথে নবখৃস্টান বাস করতে পারবে কিন্তু নবমুসলিম পারবেনা। কিন্তু কেন? কারন এটা যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্রমূলক অভিযান। কারা এর পেছনে তা বিশ্বের কারো অজানা নয়।
বাঙ্গালী,ত্রিপুরা বা মার্মা কোন ধর্মের নাম নয় এগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারী জাতি। একটি জাতি একাধিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদকে ধারণ করে। কোন বিশেষ ধর্ম বা মতবাদের প্রতি ধ্বংসাত্মক ও উৎপাটনমূলক জাতি দর্শন নিয়ে পৃথিবীতে কোন জাতি টিকে থাকতে পারেনা। ওমর ফারুখ ত্রিপুরাকে কারা হত্যা করেছে তা নিশ্চয়ই সরকার খুজে বার করবে। আমি শুধু ওমর হত্যার বিচার চাইনা, আমি এ পর্যন্ত পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সকলের বিচার চাই, সে যে ধর্ম ও জাতির অন্তর্ভুক্ত  হউক না কেন। অনেকেই উমর ফারুখের মুসলমান পরিচয়টাকেই বড় করে দেখছেন এবং এটাকেই তার মৃত্যুর কারন হিসেবে ধরে নিচ্ছেন। অবশ্য এর পেছনে অনেক যুক্তিও আছে। আজকে যদি ফারুখে জায়গায় একজন বৌদ্ধ  বা খৃস্টান ত্রিপুরা নিহত হত তাহলে কি সকল ত্রিপুরা ভাই ও বোনেরা সম্মিলিতভাবে এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করতেননা? কিন্তু ফারুখের বেলায় তা হলনা কেন? তার ধর্মীয় পরিচয়টাই কি এর কারন? যদি তাই হয়, আপনারা ভুলে বসবাস করছেন। সজাতির এক সন্তানের এমন নির্মম হত্যাকান্ড শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিহিংসায় কোনদিনই সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা,এটা অমানবিক ও পাশবিক। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি আমরা চাইনা।
 পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ কালধরে চলমান সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক  প্রচেষ্টা ছিল ১৯৯৭ সালের ০২ ডিসেম্বর সম্পাদিত শান্তি চুক্তি। ইতিমধ্যে সরকার এই চুক্তির সিংহভাগ বাস্তবায়ন করেছে। ঐ চুক্তির বৈধতা চ্যালেন্জ করে সুপ্রীম কোর্টে মামলা রয়েছে। এই চুক্তির অজুহাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে ইতিমধ্যেই সংকোচিত করে ফেলা হয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে অধিকাংশ সেনা ক্যাম্প। ঝুকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে সকল শান্তিপ্রিয় পার্বত্যবাসীকে। চুক্তি সম্পাদনের পর একদিনের জন্যও চুক্তির সুবিধাভোগীরা ঐ চুক্তির প্রতি সম্মান দেখায়নি। নানা ভাবে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা আদায় করেও তৈরি করেছে বিভিন্ন নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। যারা আগের চেয়ে অধিক মাত্রায় খুন,গুম,চাঁদাবাজি ও লুটতরাজের মাধ্যমে পাহাড়কে অশান্ত ও অস্থির করে রেখেছে।
সেনাবাহিনী সর্বদা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। আজকে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার নানা রকম দেশী বিদেশী চক্রান্ত চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করার হীন প্রচেষ্টা যারা করছে তারাই এর মাস্টার মাইন্ড। আর এ কারনেই কোন অবস্থাতেই জাতির গর্ব সেনাবাহিনীকে এ অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার করা যাবেনা বরং পূর্বের চেয়ে আরো বেশী শক্তিশালী ও সংখ্যা বৃ্দ্ধি করে পূর্বের ক্যাম্পগুলো পূনর্বহাল সহ ঝুকিপূর্ণ জায়গায় নতুন ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। কেন জানি মনে হচ্ছে পার্বত্য এলাকায়  সেনাবাহিনী তাদের মৌলিক দায়িত্বের বাইরে অপ্রয়োজনীয় কিছু কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় বেসামরিক বিষয় যেমন শালিস বিচার করা,অবৈধ গাছ বাঁশ ধরা সেনাবাহিনীর কাজ হওয়া কতখানি সম্মানজনক তা সেনা কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়েই সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হবে। গাছ বাঁশ উদ্ধারের নামে যারা সেনাবাহিনী কে সাধারণ মানুষের ভয় ও বিতৃষ্ণার কারন হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে তারা কখনোই বাংলাদেশের মঙ্গল চায়না।
সাধারন মানুষতো সেনাবাহিনীকে ভয় পাবার কথা নয়,বন্ধুর মত সম্মান ও ভালবাসার কথা। পার্বত্য অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে গিয়ে যে সকল বীর সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য শহীদ হয়েছেন এবং হচ্ছেন পার্বত্যবাসী আপনাদের কখনো ভুলবেনা। এ অঞ্চলের শান্তি রক্ষায় ও উন্নয়নে আপনাদের অবদান যুগ যুগে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
ওমর ফারুখ ত্রিপুরার হত্যাকান্ডের বিষয়টি জাতীয় প্রচার মাধ্যমে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হলোনা কেন? তাদের সীমাবদ্ধতা কোথায়? যে বা যে সকল সংগঠন এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছেন,করছেন এবং বিচার চাইছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে দয়া করে কেউ এগুলো নিয়ে রাজনীতি করবেননা। নিশ্চিত না হয়ে বিশেষ কারো দিকে আঙ্গুল তোলা ঠিক নয়। সরকারকে অনুরোধ করব দ্রুত হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করুন এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। পাহাড়ে কোন সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী গোস্টীকে আর রাজ করার সুযোগ দেবেননা। তাদের সমূলে উৎপাটন করুন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে একাজে নিয়োজিত করুন। এজন্য তাদের অধিকতর ক্ষমতা দিন। শান্তিপ্রিয় সকল পাহাড়ীরা তাদের সাথে থাকবে। 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর