বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

লামা কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের ৭ শিক্ষার্থীর সাফল্য অর্জন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১, ৪:০০ অপরাহ্ণ

মো. নাজমুল হুদা , লামা:
নিয়মতি মেডিটেশন, সুস্থ সফল সুখী জীবন’-এ শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ৫৮ জন বিজয়ীর মধ্যে বান্দরবানের লামা উপাজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বোধিছড়াস্থ কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ থেকেই পুরস্কার পেয়েছেন ৭ জন শিক্ষার্থী। এ যেন ধারাবাহিক সাফল্যের স্বাক্ষর।
প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক বিজয়ীকে ১০ হাজার টাকার বইও পুরস্কৃত করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। সাত শিক্ষার্থীর এ অর্জন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা উপজেলাবাসীর জন্যে একটি বিশেষ অর্জন। এ প্রতিযোগিতায় দেশ ও বিদেশের প্রায় দুই হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে গত ২১ জুন রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মাদাম নাহার আল বোখারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দেশ বরেণ্য গবেষক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম শমশের আলী। এতে শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের স্বপ্নদ্রষ্টা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বিশেষ অতিথি ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বয়সভিত্তিক পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী হাস্তরাম ত্রিপুরা পেয়েছেন চিত্রাঙ্কন বিভাগের পুরস্কার। উপজেলার সরই ইউনিয়নের টংগঝিড়ি পাড়ায় জন্ম হাস্তরামের। মাতৃহারা এ শিশুটি তার বাবার হাত ধরে প্রথমে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে যায় ২০০৭ সালে। ভর্তি হয় সূচনা শ্রেণিতে। বর্তমানেৃ হাস্তরাম দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি শান্ত ও বিনয়ী হাস্তরামের ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ সেই ছোট থেকেই। তার এই মেধাকে বিকশিত করার জন্যে তার শিক্ষকেরা সবসময়ই আলাদা খেয়াল রাখেন তার প্রতি। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে হাস্তরাম বলেন, চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্প নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে নিজ সম্প্রদায়ের নাম আরো উজ্জ্বল করতে চাই।
এছাড়া বাকি ৬ জনই পুরস্কার পেয়েছে ‘মেডিটেশন বিষয়ক ১০টি বাক্য লিখন’ ক্যাটাগরিতে। এদের মধ্যে বিজয় রাখাইন ২০১০ সালে সূচনা শ্রেণিতে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে ভর্তি হয়। কক্সবাজার থেকে আসা চার বছরের এ শিশু তখন ঠিক মতো বাংলা ভাষাই বুঝত না। ধীরে ধীরে তিনি স্কুলের আবাসিকে বড় হতে থাকেন। নিজ ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও লেখাপড়া সবই আয়ত্ত করতে থাকেন তিনি। বর্তমানে তিনি দশম শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগে অধ্যয়নরত। বই পড়া ও লেখালেখিতে রয়েছে তার খুব আগ্রহ।
বিজয়ী মিজানুর রহমান। একাদশ শ্রেণির ছাত্র তিনি। তারও বাংলা ভাষার প্রতি রয়েছে আলাদা আগ্রহ। তিনিও এ স্কুলে সাত বছর ধরে কৃতিত্বের সাথে পড়াশোনা করছেন। তার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে বলেন, ছোটবেলায় কোয়ান্টাম কসমো স্কুল যদি পাশে এসে না দাঁড়াত, তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না। বড় হয়ে আমি একজন অধ্যাপক হতে চাই।
এরপর কক্সবাজারের আব্দুল মোমেন ও রাঙামাটির হ্লানুমং মার্মা। তারাও পাঁচ বছর আগে ভর্তি হয় কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে। দুজনই এখন দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগের মোমেন স্বপ্ন দেখে একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী হবে। আর মানবিক বিভাগের হ্লানুমং স্বপ্ন দেখছে একজন আইনজীবী হওয়ার। তাদের দুজনেরই মতে, তারা সময়মতো এই স্কুলে ভর্তি না হলে পারিবারিক ও আর্থিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়তো লেখাপড়া করাটা খুব কঠিন হয়ে যেত। জীবনের জন্যে বড় লক্ষ্য আর ঠিক করতে পারত না তারা।
দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের আরেক ছাত্র নিজাম উদ্দিন। কুমিল্লা থেকে আসা মেধাবী এই কিশোরটির বাবা মারা যায় তার জন্মের পরের বছর। দুই ছেলেকে খুব কষ্ট করে তার মা বড় করছিল। নিজাম কোয়ান্টাম কসমো কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার মায়ের দুশ্চিন্তা অনেকটাই লাঘব হয়েছে। তিনিও স্বপ্ন দেখে একজন ডাক্তার হওয়ার।
এসএসসি পরীক্ষার্থী আশাচন্দ্র ত্রিপুরাও পেয়েছেন পুরস্কার। তিনি কোয়ান্টামে কারিগরি বিভাগের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তারও রয়েছে ভাষা ও লেখালেখির প্রতি বিশেষ আগ্রহ। তিনি কোয়ান্টাম কসমো স্কুলকে ধন্যবাদ জানান, কারণ যদি তিনি কোয়ান্টাম স্কুলে ভর্তি না হতেন, তাহলে অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা হতো না। কোথাও কাজে লেগে যেত হত তার।
এ বিষয়ে সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল আলম ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নুরুল আলম বলেন, সাত শিক্ষার্থীর এ অর্জন শুধু কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের নয়, এটি গোটা লামা উপজেলাবাসীর জন্য একটি বিশেষ অর্জন। আমরা উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মঙ্গল কামনা করছি।
বিশ্ব মেডিটেশন দিবসে ৭ শিক্ষার্থী বিজয়ী হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সৈয়দ আল আমিন বলেন, গত ২১ মে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। এই উপলক্ষ্যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কিশোর-তরুণদের মাঝে ধ্যান, ইতিবাচকতা ও মানবিকতা বিকাশের লক্ষ্যে মাসব্যাপী আয়োজিত হয় বাক্য লিখন, প্রবন্ধ-রচনা, চিত্রাঙ্কন, আলোকচিত্র, অডিও-ভিডিও প্রতিযোগিতা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com