নওগাঁর রাণীনগরে পৌষ সক্রান্তি দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী “বয়লাগাড়ি” মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বড়গাছা গ্রামের পূর্বমাঠে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। মেলার প্রথম দিন মূল আকর্ষন বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় “মাছ”। মেলায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মাছ বেচা-কেনা। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে সাধ্যমত কেনা হয় মাছ। আর হাজার হাজার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে। মেলার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার হয় ‘বউ মেলা’।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় মেলা এটি। শতবছর পূর্বে স্থানীয়দের উদ্যোগে বড়গাছা গ্রামের পূর্বমাঠে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা শুরু হয়। মেলাটি “বয়লাগাড়ি মেলা” নামে পরিচিত পায়। এরপর থেকে প্রতিবছর স্থানীয়দের উদ্যোগে পৌষ মাসে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের মত এবছরেও সোমবার সকাল থেকে বয়লাগাড়ি মেলা শুরু হয়। মঙ্গলবার ‘বউ মেলার’ মধ্যে দিয়ে শেষ হয় মেলা। মেলায় এ উপজেলা সহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকল প্রকার পণ্যসামগ্রীর দোকানপাট বসেছে। সবকিছুই মিলছে এ মেলায়। বিভিন্ন প্রজাতীর বড় বড় মাছ, হরেক রকমের মিঠায়-মিষ্টি, সহ অন্যান্য খাবারের জিনিস, মেয়েদের জন্য চুড়ি-ফিতা সহ গৃহসামগ্রী, শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা সামগ্রী ও নাগরদোলা সহ বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে মেলায়। মেলাতে ঘুরছে হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেনা-কাটা করছে আবার কেউ মেলা ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছেন।
মাছ বাজারে এলাকার প্রতিটি বাড়ির জামাইরা সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মাছ কেনার প্রতিযোগীতায় নামেন। যে যার সাধ্যমত কিনছে মাছ। মেলায় ১২ কেজি ওজনের একটি মাছ কিনেছেন যুবক সিহাব হোসেন। তিনি বলেন, মেলা উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি এসেছি। মেলার প্রথমদিন মূল আকর্ষন বড় বড় মাছ। তাই মেলা থেকে ১২ কেজি ওজনের একটি বড় কাতলা মাছ ৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। এরপর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে মেলা ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।
ঘুরতে আসা কিশোর এনামুল হোসেন, জহিরসহ অনেকেই বলেন, এ মেলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। প্রতিবছর আমরা এই মেলায় এসে অনেক কেনাকাটা করে থাকি। সেইসাথে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করি। এ মেলায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ, জামাই-মেয়ে সহ আত্মীয় স্বজনেরা এসে থাকেন।
বয়লাগাড়ি মেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু বলেন, পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়।