সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

রোমান্টিক প্রেমের গল্প মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (৫ম পর্ব) -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০, ৪:২৯ অপরাহ্ণ

মায়াবতী-দয়াল কুমারে প্রেম ভালবাসার সংসার ভালই চলছে। দয়ালের কোন কাজ নেই, কাজ করিতে চাইলেও শ্বশুর তাকে কোন কাজ করিতে দেয়না। শুধু খাওয়া-দাওয়া আর মায়াবতীকে নিয়ে চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর বাড়ীতে দাওয়াত খাওয়া চলছে । দুপুরের খাবার খেয়ে দয়াল বিছানায় বালিশে মাথা হেলিয়ে আধা শুয়া অবস্থায় শুয়ে মায়ার সাথে গল্প করিতেছে। এমন সময় রাজার ছোট ভাই এক পেয়াদা সাথে নিয়ে এসে বলে দয়ালকে তার মা দেখার জন্য আকুল হয়ে কান্না কাটি করিতেছে। এও বলে সে জন্য দয়ালকে নিতে এসেছে। দয়াল বলে কে তোমাকে পাঠাইছে , মা না বাবা। সেটা ছিল রাজার এক চালাকি। ছোট ভাইকে যেভাবে বুঝিয়েছে, সেইভাবে বলতেছে। না আপনার মা আমাকে পাঠাইছে । আপনার মা কান্না করিতে করিতে চোখে ঘা বানিয়েছে। রাজা মশায় নাকি তোমাদের মেনে নেবে বলে আবাস দিয়েছে রানী মা আমাকে জানিয়েছেন। তখন দয়ালের মনে মায়ের শুন্যতা বেদনার মত উ:উ: করে বাজতে থাকে। সে যেন কতদিন হলো তার মাকে দেখে না। তার মা তাকে কতই না ভালবাসে।

 

তার খোকাকে ছাড়া একদম খাবার খায় না। সব সময় খাবারের সেরা অংশ টুকু দয়ালের জন্য রাখত। তাই মা যেহেতু তাকে ডাকছে। তাকে তো যেতেই হবে। তখন দয়াল বলে মায়াবতী আমাদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য তৈরী হও। এক্ষুনি যাইতে হইবে। তখন তার চাচা জানায় এমন অবস্থায় তো বউমাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাজার ছেলের বিয়ে বলে কথা! ভাই বলেছে, আবার অনুষ্ঠান করে ডাকডোল পিটিয়ে মায়াবতীকে নিয়ে যাবে। এখন তোমার মা বলেছো তোমার সাথে এ বিয়ের আরো আয়োজন করিতে হবে। সেই জন্য শলা পরামর্শ করিবে। আর তুমি তো একেবারে যাচ্ছো না। দেখা করে আবার এখানে চলে আসবে। তোমাকে দেখে তোমার মাও খুশি হবেনি। তাইনা ভাতিজা। তখন মায়াবতী বলে তাহলে তুমি একাই যাও । তোমার জন্য কতনা কেদে কেদে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে । দেখা করে তাড়াতাড়ি তুমি চলে এসো কিন্তু। তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত আমার ভাল লাগবে না। অতএব দেখা করেই তুমি চলে এসো। দয়াল কুমার তার শাশুরী ও দিদিমাকে বলে এবং ঘরের ভিতরে গিয়ে মায়াবতীর কপালে একটু ভালবাসার চুমু একে চাচার সাথে চলে আসে। রাজ বাড়িতে এসে দেখে তার মা কান্না করে একদম অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে । কয়দিন হলো কোন খানাপানি মুখে নেয়নি। দয়ালকে দেখে তার মা ছোট্র বাচ্ছার মত সজোরে কান্না শুরু করে দিল। আর বলছে, ওরা নাকি জাদু-টোনা করে তোকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে ।

 

আমার কোল খালি করে আমার অবুঝ সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে । দয়াল বলে তুমি এসব কি বলছ মা? কে জাদু করেছে? আমি সাবালক হয়েছি । আমি আমার ভাল-মন্ধ বোঝার বয়স হয়েছে । আমি ওকে ভালবেসে বিয়ে করেছি । তখন তার মা বলে না বাবা, ঐ পাড়ার নগেন কবিরাজ বলেছে, তোমার ছেলেকে ওরা কবিরাজি জাদুটোনা করে তোমাদের থেকে পৃথক করে নিয়েছে । সেই জন্যই তো তোর বাবা তোর চাচাকে দিয়ে তোকে নিয়ে এসেছে। বিকালে নগেন কবিরাজ আসিবে। ঝাড় ফুক দিয়ে তোর উপর থেকে জাদুটোনা সরিয়ে দিবেন। তাহলে তুই আর ওদের কাছে যাবি না। আমাদের ছেলে আমাদের কাছেই থাকবি। দয়াল বলে, ও তাইতো বলি এতো সহজে বাবা রাজি হয়েছে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে, প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি । কিন্তু তোমার কথা চিন্তা করেই আমি এসেছি। তোমাদের যদি মায়াবতীকে নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি। তাকে বাদ দিয়ে শুধু আমাকে রাখতে চাও। তাহলে আমার মৃত দেহ তোমরা পাবে। জীবন্ত দয়ালকে তোমরা দেখতে পাবে না। শুনে রেখ বলে দিচ্ছি । দয়ালের কথা শুনে তার মা আরো কান্না করতে থাকে। রাজা বাড়ির ভিতরে এসে রানীকে বলে দয়াল এসেছে? রানী কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে হ্যা এসেছে ।

 

তখন রাজা তার মন্ত্রীকে বলে, চারিদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী কর। যাতে করে দয়াল বাড়ী হতে বাহির হতে না পারে। রাজা রানী কে বলে একটু সবুর করো নগেন কবিরাজের ঝাড় ফুকে আমাদের দয়াল ভাল হয়ে যাবে । ও মনে আর ঐ মেয়ের কথা মনেই আসবে না। তখন আর তোমার কান্না করতে হবে না। ছেলে আমাদের ঘরেই থাকবে। এসব কথা ভিতর হতে দয়াল শুনে শুনে বুদ্ধি পাকাচ্ছে। কিভাবে বাড়ী হতে বাহির হওয়া যায় । সে মনে মনে শুধু মায়াবতীর কথা ভাবছে আর চিন্তা করিতেছে, তার অনুপস্থিতিতে মায়াবতী না জানি কতই না চিন্তা করিতেছে । অন্যদিকে মায়াবতী রাজ পরিবারের রাজপুত্রের রাজকীয় বেশে বউ হয়ে রাজ বাড়ীতে যাবে সেই চিন্তায় মনের আনন্দে দোল খা”্ছ।ে কত না স্বপ্ন দেখছে । দয়াল কুমার ঘরে বিছানায় ঘুমানোর ভান করে শুয়ে আছে। এমন সময় রাজা দয়ালের ঘরে এসে ডাকছে । কিন্ত দয়াল শুনছে না , জোরে জোরে নাক ঢেকে ঘুমানোর ভান করছে । রাজা বলে, আহারে, আমার অবুঝ ছেলেটাকে জাদুটোনা করে নিয়ে গেছে। ঐ বাড়ীতে কাঠের নোংরা বিছানায় ছেলেটার বোধ হয় ঘুম হয়নাই। ঘুমাও বাবা ঘুমাও । তোমাকে আর ঐ বস্তিতে আর যেতে হবে না। তোমাকে আগে সুস্থ্য করি তার পর তোমাকে ভাল দেখে আবার বিয়ে করাবো। দয়াল এসব কথা শুনছে আর ভাবছে তার বাবা কত খারাপ প্রকৃতির মানুষ । একজন অবলা , সহজ সরল মেয়েকে ঠকাতে কত তার পরিকল্পনা। গরীব বলে ওরা কি মানুষ না। ছি: ছি: কত ছোট নজর এদের। মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে সম্মান দিতে জানেনা। এদের ঔরষে জন্ম নিয়েই যেন তার পাপ হয়েছে বলে চিন্তা করে আর বুদ্দি আটে কিভাবে এ বন্দিশালা হতে বাহির হওয়া যায় ।

 

এমন সময় দয়ালের দুজন মাসতাতো বোন আসে তাদের বাড়ীতে বেড়াতে। একজনের নাম রনিকা আর একজনের নাম কনিকা। কনিকা মেয়েটা বেশ স্বাস্থবান খেতে দয়ালের মত লম্বা চওড়া। সে প্রথমে আসে দয়ালের ঘরে প্রবেশ করে তার মেসো কে দেখে প্রনাম জানিয়ে বলে মেসো দয়ালে কি হয়েছে? ও এমন ভাবে দিনে দুপুরে নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে । তখন রাজা মশায় কনিকা বলে দয়ালকে বলো কি হয়েছে । ওর কাছে জেনে নিও । থাক আমার অনেক কাজ আছে আমি একটু রাজ দরবারে যাই। বলে রাজা দয়ালের রুম ত্যাগ করে চলে যায়। তখন দয়াল ঘুম ভাংগার ভান করে আস্তে আস্তে বলে কি খবর কনিকা কখন আসলে। খবর দিয়ে আসবে না। কনিকা বলে না এমনি তে চলে আসলাম। কনিকা পাশের রুমে তার জামা কাপড় ঘুুছিয়ে আলনা তে রাখে। দুপুর হওয়ায় কনিকার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ ঝড়ছে । তাই দেখে কনিকার মাসি বলে মা কনিকা গোসলটা সেরে এসে খাবার খায় । সে কখন বোধ হয় খেয়ে দেয়ে বের হয়েছিস । এখন বোধ হয় ক্ষিদে লেগেছে। কনিকা মাসির কথামত বাথরুমে গোসল করতে যায় । এ সুযোগে দয়াল কনিকার রুমে গিয়ে কনিকার এক সেট কাপড় নেয় । কনিকার সালোয়ার কামিজ পড়ে মুখে পাউডার মেকাপ দিয়ে ঢেকে আস্ত একটা মেয়ে মানুষ হয়ে হেলেঢুলে বাড়ী হতে বাহির হয় । গেটে দুজন পেয়াদা তাকে দেখে বলে, আপনারা দুবোন এই মাত্র আসলেন , আবার একজন চলে যাচ্চেন। তখন মেয়ে কন্ঠে বলে মাসির জন্য একটা গিফট কিনেছিলাম । তা ভুলে দোকানে রেখে এসেছি। নিতে যাচ্ছি ।

 

পেয়াদা মনে মনে ভাবছে এইতো মেয়েদের মনের অবস্থা। গতকাল তার বউ খাবারের বাটিতে লবন দিতে ভুলে গেছিল । এরকম ই এদের অবস্থা । পেয়াদা অতি সহজে দরজা খুলে দিলে, ভগবান রাম-কৃষ্ণকে ডাকতে ডাকতে দয়াল বাড়ি হতে বাহির হয়ে যায় । সে দ্রুত রাজরাড়ীর আঙ্গিনা পার হয়ে যায় । চলে যায় মায়াবতীদের বাড়ীতে। এদিকে কনিকা গোসল সেরে ভাত খাওয়ার জন্য দয়াল কে ডাকতে যায় । দেখে দয়াল ঘরে নেই। কনিকা তার মাসিকে বলে মাসি দয়াল তো ঘরে নেই। তার মাসি বলে ঘরে নেই মানে আবার কি? ওতো পেয়াদের নজরবন্দী । ও কিভাবে বাহিরে গেল। একথা রাজার কানে যাওয়া মাত্রই রেগে পেয়াদের তলব করিলেন। পেয়াাদারা বলে দয়ালতো বাহিরে যায় নাই। পেয়াদারা জানায় আজকে শুধু বাড়ি হতে আপনাকে আর দয়ালের এক মাসতোতো বোনকে বাহির হতে দেখেছি । রাজা বলে এই তোরা কি বলছিছ, ওরা দুবোনতো বাড়ীতেই আছে। এদিকে ঘরে কনিকা তার একসেট কাপড় খুজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মাসিকে জানায় ।

 

তখন রাজা অতিসহজে অনুমেয় করে যে, কনিকা ড্রেস পড়ে পেয়াদের চোখে ধুলা দিয়ে দয়াল বাড়ি হতে বাহির হয়েছে । তখন রাজা পেয়াদা দুজনকে তাদের চাকরী হতে বরখাস্ত করেন। অন্যদিকে দয়াল মায়াবতীদের বাড়ীতে গেলে মায়াবতী তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। সে জানতে চায় কিভাবে তাকে বরণ করিবে এসব প্রস্তুতি হয়েছে নাকি বিভিন্ন কিছু। তখন দয়াল চোখ মুছতে মুছতে বলে তোমার থেকে আলাদা করার জন্য বাবা চাচাকে পাঠিয়েছিল আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য । তখন একথা শুুেন মায়াবতী হাউমাউ করে কেদে উঠে দয়ালকে জড়িয়ে ধরে বলে, চাইনা তোমার রাজার বাড়ীর রানীর মর্যাদা। তোমাকে নিয়ে এই ভাঙ্গা কুঠিরেই থাকিব। তোমাকে আমি হারাতে পারবোনা। তুমিই আমার সাত রাজার ধন। দয়ালও বলে আমি আর যাব না ঐ অত্যাচারী রাজার সন্তান হতে। সে পিতার তার সন্তানের ভাল চাওয়াকে সহ্য করিতে পারেনা। আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর