রাজপুত্র দয়াল কুমার তার নবাগত স্ত্রী মায়াবতীকে নিয়ে রাজ পরিবার হতে বাহির হয়ে গেল । বাহিরে গিয়ে দয়াল কুমার চিন্তা করিতেছে। এখন তারা যাইবে কই? ভাবতে ভাবতে মায়াবতী বলল, চল আমাদের বাড়ীতে যাই। ওখানে হয়ত তোমার একটু কষ্ট হতে পারে। তারপরও চলো। মায়াবতীর কথা শুনে দয়াল কুমার সম্মতি জানায়। দুজনে বনের ধার দিয়ে সরু রাস্তায় পায়ে হেটে মায়াবতীদের বাড়ীতে যায় । এদিকে পুত্র বাড়ী হতে চলে যাওয়ায় দয়ালের মা অজোরে কাদতে থাকে। কাজকর্ম ফেলে , খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে শুধু কাদছে আর কাদছে। রাজা তার কান্না সহ্য করিতে পারছে না। সে বলে এমন ছেলে আমার সম্মানের দিকে খেয়াল করিলনা। শেষমেষ একটি ছোট জাতের মেয়ের সাথে চলেই গেল। কেন সে যা করেছে তো করেছে ঐ মেয়েকে ওখানে ফেলে আসুক । তাকে সাদরে গ্রহন করিবো। কিন্ত না মায়াবতীকে ছাড়া নাকি বাচবেনা। পচে মর ঐ মায়াবতীকে নিয়ে ।
তখন রানী আরো জোরে কান্না করতে থাকে। তখন রাজা রানীকে মারতে উদ্যত হয় । তখন রাজার ছোট ভাই বউ তাকে বলে দাদা এমন করেন না। হাজার হলে তো মা, মারই অন্তর জলে ছেলের জন্য । ছেলে যতই অপরাধ করুক , তারপরও মায়ের কাছে অবুঝ সন্তান। থামাও তোমাদের লেকচার, তোমরাই ছেলেটাকে বাদড় বানিয়েছো বলে রাজা ধমকের সুরে কথা বলেন। অন্যদিকে দয়াল-মায়াবতী পরেশ কাঠুরের বাড়ীতে যায় । তখন মায়াবতীর মা দয়ালকে বরন করার জন্য শাস্ত্রীয় কিছু নিয়ম পালনের চেষ্টা করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তখন পরেশ কাঠুরে তার স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বলে থামাও তোমাদের এসব । আমি ওদের সম্পর্ক মানিনা। কি হলো তোমার মেয়েকে ওরা মেনে নিল না। মেনে নিবে না। ওরা বড়লোক। ওরা গরীবের মেয়েদের সাথে ফুর্তি করা পছন্দ করে। কারও ঘরনী হওয়া পছন্দ করে না। ওরা যেখানে পারুক চলে যাক। আমার বাড়ীতে ও ওদের স্থান নেই। তখন মায়াবতীর দিদি মা এসে পরেশকে ধমকে থামিয়ে দিয়ে বলে, তুইও কি পাগল হয়ে যাচ্চিস। ও ছেলে তোর মেয়েকে মা-কালীর দিব্বি খেয়ে বিয়ে করেছে। সবার কাছে শুনেছ্ ি। রাজ পরিবারে সবার চেয়ে ও নাকি অন্যরকম। ও খুব ভাল মানুষ। ও খারাপ হলে, এতদিন তোর মেয়ের পিছনে লেগে থাকতো না। রাজ সিংহাসনের মায়া ত্যাগ করে তোর মেয়ের হাত ধরে চলে এসেছে। ওর সাথে কোন খারাপ আচরন করবি না কিন্তু।
ওরা এখন যাবে কই। তখন পরেশ তার মায়ের কথা শুনে শান্ত হয় । তখন বলে তোমরা যেহেতু মেনে নিয়েছো তাহলে আমার আর আপত্তি রইল না। তখন মায়াবতীর দিদিমার ্ কথামত পুনরায় বিয়ের আয়োজন করে। তখন পুরোহিত নিয়ে এসে তাদের পুনরায় বিয়ে পরানো হয় । তখন বিয়েতে দয়ালের বন্ধু বিজয় অংশ গ্রহন করে। বিয়ের অনুষ্টান শেষে দয়াল বিজয় কে নাস্তা করায় । তারপর বিজয়কে বিদায় দিয়ে দেয়। দয়াল তার শ্বশুরকে জানায়, সেও তার সাথে বনে কাঠ কাটার কাজ করিবে। সে এখানেই থাকিবে বলে শ্বশুরকে জানায়। পরেশ দয়ালকে জানায় তোমাদের এখানে আশ্রয় দেয়ার কারনে তোমার পিতা মানে রাজা মশায় কি ভাববেন জানি না? তবে যেহেতু আমার মেয়েকে বিয়ে করেছো। এখানে আমার কাছেই থাকো। এখন কোথায় বা যাবে? পরেশ কাঠুরের থাকার ঘরটি দুটি কামরা বিশিষ্ট একটি টিনসেড ঘর । একটি কামরাতে তারা নিজেরা এবং অন্যটিতে তার মেয়ে ও তার মা থাকে। আর একটি চুলার ঘর। বিয়ে শেষে এখন টেনশন বর-কনের জন্য বাসর ঘর সাজাতে হবে। তখন মায়াবতীর দিদি মা জানায় আমি আপাতত চুলার রুমে ঘুমাই। একথা শুনে পরেশ তাকে বলে না মা তুুিম চুলার রুমে থাকবে কেন। আমরা দুজনে থাকবো নে। তখন তার মা জানায় আচ্ছা ঠিক আছে এবার রুমটা সাজায় । তখন দোকান হতে রংবেরং এর কাগজ এনে ফুল বানিয়ে রুমটি সাজিয়ে নেয় । বিয়ের আরো কিছু সামাজিকতা শেষ করে রাত্রিতে শাস্ত্রীয় মতেই তাদের কে বাসর ঘরে দেয়া হলো। বাসর ঘরে গিয়ে মায়াবতী খুব ভয় পায়ছিল।
ভাবছিল তার আলোচনা-সমালোচনার এ বিয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে । রাজার দুলালের প্রেম-ভালবাসা তার জীবনের কতটুকু নিরাপত্তা দিবে এসব। তারপরও দয়ালের অতীত-বর্তমান তার প্রতি গভীর ভালবাসায় সে বিশ্বাস তাকে ছেড়ে কখনও যাবেনা। তাই বিছানায় শুয়ে প্রথমেই চুপি চুপি দয়ালকে বলে তুমি কখনও তো আমায় ছেড়ে চলে যাবে না? তোমার আমার প্রেমে ফাটল আসবে কি? তখন দয়াল মায়াবতীর মুখে আলতো ভাবে চেপে ধরে বলে, আজকে এভাবে বলতে নেই। আজকে আামাদের বিয়ের বাসর রাত। আজকে দুজন দুজনকে ভালবাসা বিনিময়ের সময় । দুনিয়াতে যত ঝড় জাপটা আসুক না কেন, কেহই তোমার আমার মাঝে ফাটল আনতে পারবেনা। দয়াল আর দয়াল একই বিছানায় এক সাথে এই প্রথম উভয়ের মধ্যে প্রেম আলিঙ্গন করিতেছে। দয়াল মায়াবতীকে জানায় আজ যেন আমি স্বর্গ পেয়েছি। হে বিধাতা পরজন্মেও আমাকে মায়াবতীকে দিও। আর যুগ যুগ ধরে যেন আমাদের প্রেম-ভালবাসা অটুট থাকে। ভোর বেলা মায়াবতীকে বলে একটা লুঙ্গি এনে দাও। দয়াল লুঙ্গি নিয়ে স্নান সেরে সকালের নাস্তা করে। ঐ সময় পরেশ কাঠুরে কুড়াল নিয়ে বনে যাচ্ছে। সে সময় দয়াল বাবা বলে পিছন থেকে ডাক দেয় । পরেশের আত্না যেন পরম তৃপ্তিতে ভরে যায় বাবা ডাক শুনে। সে ভাবে এরকম ছেলে যদি আমার থাকত এভাবেই ডাকত। সে বাবা ডাক শুনে যেন, দয়ালের প্রতি পুর্বের রাগ যেন স্নান হয়ে গেল। পরেশ ফিরে তাকিয়ে বলে, বাবা ডাকছ কেন? তখন দয়াল বলে, না মানে বলছিলাম যে, আপনার সাথে আমিও বনে যাব, আপনার সাথে কাজ করিব। তখন পরেশ বলে না বাবা এটা অসম্ভব ? তা কখনও না? এটা করিতে দেখলে, তোমার বাবার মান-সম্মান একদম শেষ হয়ে যাবে।
তারা হয়ত সাময়িক ভাবে রাগ করেছে। কিছুদিন পর তারা মেনে নিবে। তারপরও তুমি নতুন জামাই। তোমাকে এসব করতে দেব না। তুমি তো আমার ছেলের ই মতো। বাবা থাকতে ছেলেকে এই বিয়ের পরের দিনই কাজ করতে দেব ? কখনও না।দয়ালকে বাড়ীতে রেখে পরেশ বনে কাঠ কাটতে যায়। সে একদিন বনের কাঠ কাটার কাজ না করিলে, তাদের হাড়ীতে আগুন জ্বলে না। তাকে তো যেতেই হবে। দয়াল-মায়াবতী সারা দিন এবাড়ী ও বাড়ী ঘুরে বেড়াইতেছে। কিছুক্ষন পর বিজয় আসে তাদের দেখতে। মায়াবতী বিজয়ের জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। বিজয় আর দয়াল একসাথে নাস্তা খায় এবং গল্প করতে থাকে। তখণ বিজয় দয়ালকে বলে, জানিস গতকাল রাজার পেয়াদার কাছে শুনেছি। তোকে পরেশ কাকা প্রশ্চয় দেয়ার কারনে নাকি রাজা পরেশ কাকার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। আমি বলছি কি ?
তোদের জন্য আবার পরেশ কাকার বুড়ো বয়সে আবার কোন জামেলা পোহাতে হয়। পরেশ কাকা বনে থেকে আসলে তার সাথে শলাপরামর্শ করে দুরে কোথাও তোদের থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা? বখাটে বনমালী ও নাকি সবার কাছে কানা ঘুষা করে বলছে, রাজার পুত্র মায়াবতীকে বিয়ে করেছে আমোদ-ফুর্তির জন্য। সময় ফুরিলে কেটে পরবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তোদের এখানে থাকা বুঝি খুব একটা নিরাপদ না। তারপরও পরেশ কাকা র সাথে পরামর্শ করে যেটা ব্যবস্থা নেয়া যায়। বিজয় অনেক্ষন তাদের সাথে সময় কাটিয়ে চলে যায় । সারা দিন দয়াল আর মায়াবতী চুটিয়ে প্রেম করে। (চলবে)