শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

ই-পেপার

শিরিষ বৃক্ষের বিষাদ দিন! – সাইদুজ্জামান সাগর

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১, ৩:৪০ অপরাহ্ণ

মুনজুর সহজ সরল মুখমন্ডল, কালছে গাঁয়ের বরণ। বহুমুখি তার পেশা। বৃক্ষ দালাল হিসেবে বেশ খ্যাতি কামিয়েছে গত এক যুগে। দাপ্তরিক জটিলতার ভয়ে যেসব বড় বড় বৃক্ষ স্বাভাবিক নিয়মে কাটতে পাড়ে না কেউ। সে কাজ মুনজু প্রায়ই করে থাকে। এমনি এমনি তো আর খ্যাতি পাওয়া যায় না? বহু দিন শ্রম দিয়ে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়েছে। তবেই তো জগৎ সংসার চিনেছে তাকে!

রাস্তার পাশ দিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রোপণ করেছিল শিরিষ বৃক্ষ, কড়ই, সৃষ্টিকড়ই, এন্ডিকড়ই। তিন দশকে বৃক্ষগুলো বেশ বড় হয়েছে। সবুজাভ, হলুদাভ সাদা পুষ্পের সৌন্দর্য এবং সুগন্ধি পথচারীদের মুগ্ধ করে। শিরিষ পুষ্পের সুগন্ধ প্রাণবন্ত হওয়ার তৃপ্তি মেটায় স্থানীয়দের। প্রতিদিন বহু পাখিদের আশ্রয় দেয়। ধারণা করা হয় দুইটি পূর্ণবয়স্ক গাছ চার জনের একটি পরিবারের সারা বছরের অক্সিজেনের চাহিদা মেটায়। গাছ প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির আধার পুনরায় পূর্ণ করতে পারে।

সম্প্রতি বনবিভাগ, আইইউসিএন, ডব্লিউসিএস, এর একটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় গত ১৪ মাসে ৩টি বাঘ, ১২টি হাতি হত্যা করা হয়েছে, ডলফিন মারা গেছে ২০টি, তিমির মৃত্যু ৪টি, দুই লক্ষ ৫৭ হাজার একর বনভূমি বেদখল। দখলমুক্ত হয়েছে এক হাজার ৫৭ একর বনভূমি, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত এ হিসাব। করোনা মহামারির সময় লকডাউন সহ নানা কারণে প্রকৃতিতে মানুষের হস্তক্ষেপ কমছে। ফলে বিশ্বের অনেক দেশের জীববৈচিত্র্যে নতুন প্রাণ ফিরেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র আমাদের দেখতে হচ্ছে।

একদিন মুনজুর নজর কাড়লো এন্ডিকড়ই! পাশেই একটি বাড়ি, বাড়ির মালিক সুখ’বরের সাথে সন্ধি করলেন মুনজু। ‘কম্পিউটার্স’ দোকান থেকে একটি দরখাস্ত প্রিন্ট করে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পিন্টুর কার্যালয়ে হাজির হলেন। চেয়ারম্যান সাহেব দরখাস্ত হাতে নিতেই মুনজু বললেন লোকটার বাড়ির টিনের চালা গাছের পাতা ফুল পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি গাছ তাই কাটতে পারছে না। আপনার মত জনদরদী চেয়ারম্যান তো আগে সদরবাসী পায়নি! পিন্টু বললেন আপনাদের ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি সুখে-দুখে, বিপদে আপদে আপনাদের পাশে থাকায় আমার কাজ। “এই মুনজু কাগজপত্রের কাজ তুমিই তো পারতে, ওনাকে হয়রান করার কি দরকার ছিল?’ দরখাস্তে স্বাক্ষর লাগবে তাই ওনাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। হুম.. স্বাক্ষর নিয়ে সুখ’বর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য পাঁচশ টাকা দাও! সুখ’বর মৃদু হেসে ভাবলেন এরকম আরো স্বাক্ষর দেওয়ার সুযোগ থাকলে? সুখ’বর মুনজুর চেয়ে কম নয়, পিন্টুর সৌজন্যতা পেয়ে বাড়ির উত্তর দিকে একটি সৃষ্টিকড়ই অন্য বেপারীর কাছে বিক্রি করে চুপ মেরে আছে।

দু’দিন পর পিন্টু মুনজু গেলেন বরেন্দ্র প্রকৌশলী সৈয়দ সাহেবের কার্যালয়ে, মুনজু বললো স্যার দুইটি রাস্তায় আপনার দপ্তরের চারটি গাছ আছে। সৈয়দ সাহেব দাঁত বের করে হাসলেন। ২০২০ সালের জুলায়ে আস্ত দাঁড়ানো জীবিত গাছ কাটার সময় স্থানীয়দের প্রতিবাদে সৈয়দ সাহেব উত্তর দিলেন নওগাঁর রাণীনগর সদরের খাগড়া-ছয়বাড়িয়া সড়কে ঝড়ে পড়ে যাওয়াএন্ডিকড়ই সহ চারটি গাছ নিলামে মুনজু বেপারীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। একই বছর ইউএনও এবং এলজিইডি’র প্রকৌশলী মিলে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরের আটটি ইউক্যালিপটাস একটি বিশাল আকৃতির জীবিত কড়ই গাছ নথিপত্রে ঝড়ে ভাঙ্গা মরা দেখিয়ে সালাম বেপারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও চলতি বছরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে রেস্তোরাঁ ও হাঁটার পথ নির্মাণের প্রতিবাদে এবং বৃক্ষ বাঁচাতে ব্যাপক আন্দোলন দানা বাঁধে। যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায়ও সচেতনতার অভাবে বৃক্ষ রক্ষা করা প্রায় দুষ্কর!

যতদিন এসব নির্বাচিত প্রতিনিধি সরকারি কর্মকর্তা ও মুনজু সালামের মত বেপারীর উপর আইনের কঠোর প্রয়োগ না হবে, ততদিন পৃথীবীর জন্য সজীব গল্পো লেখা কষ্টকর! সতেজ পৃথিবী গড়তে বৃক্ষ রোপণ এবং শিরিষের মত বড় বড় বৃক্ষ সংরক্ষণ করে বৃক্ষদের বিষাদ দিনের পরিশেষ করতে হবে। তবেই স্বাস্থ্যকর সুন্দর পরিবেশে পৃথিবী এগিয়ে যাবে।

 

 

#আপন_ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর