রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (২য় পর্ব) -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ৮ জুন, ২০২০, ৮:১৯ অপরাহ্ণ

কাঠুরে পরেশ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় । মায়াবতী ঘরে থেকে ঠুকরে ঠুকরে কাঁদতে থাকে। রাজপুত্র দয়াল কুমার মায়াবতী খোঁজ জানার জন্য তাদের বাড়ীতে আসে। তখন মায়াবতীর পিতা রাজপুত্র কে বুঝায় সে যেন আর না আসে। লোকে দেখলে নানান কথা বলতে পারে। তখন রাজপুত্র পরেশকে বুঝায় সে মায়াবতীর খোঁজ নিতে এসেছে। সে গতকালও স্কুলে যায় নি। তার পিতা জানায় সে আর স্কুলে যাবে না। তাকে বিবাহ দেয়া হবে। তখন রাজপুত্র বলে আপনি তো অন্যায় করছেন। একতো সে সাবালক হয়নি, তারপর আর একজনের অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিবেন । তা হয় না। আপনি ওকে স্কুলে যেতে দিন। ওর কোন সমস্যা হলে আমি দেখব। আপনি ওর ব্যাপারে আমার উপর ছেড়ে দিন। তখন মায়াবতীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসে বলে দয়াল বাবাজি তো ঠিকই বলেছে ।

 

ওর বিয়ের বয়স হয়নি। ও ভাল ছাত্রী ওর জীবনটা নষ্ট করিওনা। তখন পরেশ কাঠুরে শিক্ষক ও রাজপুত্রের কথামত সিদ্ধান্ত হতে সরে আসে। প্রতিদিন মায়াবতী রাজপুত্রের সাথে স্কুলে যাওয়া আসা করতে থাকে। তাদের মধ্যে গভীর হতে গভীর প্রেম-ভালবাসার বন্যা বয়ে যায় । রাজপুত্র পাখি শিকারের সময় অনেক ফল-মুল ও মায়াবতীর জন্য নিয়ে আসে। পুজার সময় ছুটিতে দয়াল কুমার আর মায়াবতী বনের গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যায় । তারা গল্প করিতে করিতে একদম বনের গহীন অরন্যে চলে যায় । সেখানে তারা দিক হারিয়ে ফেলে । শেষে অনেকক্ষন হাটতে হাটতে শেষ সীমানা পেয়ে যায় । ঐসময় মায়াবতী ভীষন ভয় পেয়ে যায় । সে মনে মনে ভাবছে একজন যুবকের সাথে একা গহীন অরণ্যে চলে এসছে । দয়াল কুমারের মনে যদি খারাপ মতলব থাকে । তাহলে কি হবে এসব ভাবতে থাকে । কিন্ত দয়াল কুমার যে একজন সৎ মানুষ সেদিন তার পুরোপুরি বিশ্বাস হয় । তার পর থেকে তার সাথে ঘুরতে বের হতে সে বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনি । এভাবে চলতে থাকে অনেকদিন।

 

একদিন বনের পাশে বটগাছের নিচে দুজন এক সাথে বসে গল্প করছিল। বখাটে বনমালী তাদের এ অবস্থা দেখে রাজার এক গোমস্তাকে বলে দেয় । গোমস্তার কথা শুনে রাজা দশমন্তো তো রেগে আগুন। তার এমন কান্ড মেনে নেওয়া যায় না। রাজা রানীর সাথে চিন্তা করে , ছেলে তো এমনি যাযাবর টাইপের, বখলে তো রাজসিংহাসন ছেড়ে চলে যায় । সেই ভয় ও করে। ঐদিন দয়াল বাড়িতে আসলে রাজা জিজ্ঞাসা করে তুমি নাকি বনের পাশে কোন এক কাঠুরের বাড়ীতে যাও! তার মেয়ের সাথে নাকি কি সম্পর্ক ? এসব করা চলবে না। তুমি হলে এ রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজা। এতো হালকা আবেগ নিয়ে চললে হবে না। তোমাকে কঠোর হতে হবে। লেখাপড়া করে বিদ্বান হয়ে রাজ্যের হাল ধরতে হবে। দয়াল চুপ-চাপ শুেেন মায়ের কাছে খেতে যায়। মাকে বলে শোন মা মায়াবতী মেয়েটি খুবই বুদি¦মতী ও সাহসী । আমি ওকে ভালবাসি।

 

দয়ালের মা বলে একথা যেন তোর বাবা জানতে না পারে। এসব তোদের বংশে চলবে না বাবা। যুগযুগ ধরে এ বংশের লোকেরা রাজবংশের সাথে আত্বীয়তা করেছে। তুই কিনা কাঠুরের মেয়ের সাথে! দয়াল বলে যাই বলো মা ,আমি ওকেই ভালবাসি, ওকে নিয়েই আমার পথচলা শুরু করিব। খাবার খেয়ে দয়াল বিছানায় শুতে যায় । দয়াল ভাবে মায়াবতীকে নিয়ে । কিভাবে তাকে নিয়ে জীবন শুরু করিবে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাজা দশমন্তো পেয়াদা পাঠায় কাঠুরে পরেশের বাড়ীতে বাড়তি কর আরোপ করার জন্য । পেয়াদা বলে তোমার ডাবল কর দেয়া লাগবে। তা নাহলে, রাজা তোমাকে রাজ্য হতে তাড়িয়ে দেবে। কাঠুরে ভাবতে থাকে কি ভাবে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করিবে। এমন সময় দয়াল কাঠুরের বাড়ীতে এস হাজির । পেয়াদাদের দেখে বলে কি জন্য এসেছো? তখন রাজার পত্র দেখায় । দয়াল কুমার কাঠুরে কে সেপরিমান টাকা দিতে চায়। কিন্তু পরেশ রাজি হয়না। তখন দয়াল বলে আমি যদি আপনার ছেলে হতাম তাহলে নিতেননা। মনে করেন আমি আপনার ছেলে । অনেক যোরাযুরি করে শেষে টাকাগুলো দেন। দয়ালের দেয়া টাকা নিয়ে রাজ দরবারে দিয়ে আসে। তখন রাজা পরেশকে বলে তুমি কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছ নাকি? এত টাকা অল্প সময়ে দিয়ে দিলে। তখন রাজা তাকে তার উদ্দেশ্যের কথা বলেন। তোমার মেয়েকে দয়ালের পিছন থেকে সরাতে হবে।

 

না হলে পেয়াদা দিয়ে পিটিয়ে তোমাকে রাজ্য হতে বাহির করে দেব। তখন পরেশ বলে আচ্ছা ঠিক আছে মেয়েকে বুঝিয়ে ঠিক করিব। আপনি রাজপুত্রকে ধরে রাখবেন কিন্ত। রাজা চিন্তা করতে থাকে এ উদাসীন মার্ক া ছেলেকে কিভাবে ধরে রাখবেন। একটি মাত্র পোলা মাইর দিলেও কষ্ট লাগে। তখন সে বাসায় গিয়ে রানীর সাথে চিন্তা করতে করতে শেষে চিন্তা করে। পাশের রাজ্যের রাজার মেয়ের সাথে বিবাহের পয়গাম পাঠানো হোক। চিন্তামতে পরের দিন একজন ঘটক পাঠান পাশের রাজ্যে যুবরাজের বিয়ের জন্য । ঘটক গিয়ে বিয়ের বন্দোবস্ত করে আসে। এদিকে মায়াবতীর বিয়ের কোন প্রস্তাব আসলে, বখাটে বনমালী কুমন্ত্রনা দিয়ে সে প্রস্তাব আটকে দেয় । শেষে পরেশ কাঠুরে সিদ্ধান্ত নেয় যে, বনমালীর সাথে বিয়ে দেবে। সব ঠিক ঠাক। রাজার বাড়ীতে বিয়ের ডেকেরেশনের কাজ চলছে রাত দিন। বাজার ঘাট চলছে। কিন্ত দয়াল কুমার কিছুই জানে না। রাজা চিন্তা করে ওকে ফাকি দিয়ে নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসাবেন। সে কথামত, দাওয়াতের কথা বলে রাজা অল্প কয়েকজন লোক নিয়ে পাশের রাজ্যে যায় । দয়াল বলে কিসের দাওয়াত। রাজা বলে পাশের রাজ্যের রাজকন্যার অন্নপ্রাশন সেই দাওয়াত খাওয়ার জন্য যাচ্চি ।

 

সেখানে গিয়ে তো দয়াল কুমার হতবাক। দেখে বিয়ের শানাই বাজছে। বাড়ীতে রংবেরং সাজে সজ্জিত বাড়ী । দয়াল কুমার কিছুই বলে না। সে চিন্তা করে কিভাবে এখান থেকে সটকে পড়বে। যখন ঘোর সন্ধা হতে চলেছে , তখন দয়াল বলে আমার প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে হবে। পেয়াদা সহ পাশে ল্যাট্রিনে কাজ সারতে যায় । সে খানে ল্যাট্রিনের উপরে চাল ছিল না। পেয়াদের বলে এইযে, তোমাদের তো খুশি করার সময় পাই না। এখানে ১০টি মোহর আছে । এগুলো নিয়ে পাশে দোকান আছে । সেখানে কিছু খরচ করো গে। এই বলে পেয়াদের পাঠিয়ে ল্যাট্রিনে প্রবেশ করে। ল্যাট্রিন কোনমতে করে সে ল্যাট্রিনের দেয়াল টপকিয়ে পাশের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সীমান্তবর্তী নদীর তীরে আসে। সেখানে দেখে নৌকা ওপারে। তখন সে নদী সাতরিয়ে তার রাজ্যে চলে আসে। ঐ দিকে পেয়াদারা এসে ল্যাট্রিনের সামনে দারিয়ে আসে। রাজা এসে বলে এখনও দয়ালের কাজ শেষ হয়নি। তখন পেয়াদারা বলে কই বের হচ্ছে না তো। ঘন্টা দুয়েক পর সবার টেনশন ল্যাট্রিনের ভিতর তো রাজপুত্রকে সাপে কাটেনি।

 

বিভিন্ন চিন্তা শেষে রাজার আদেশ ল্যাট্রিন দরজা ভেঙ্গে ফেল । দরজা ভেঙ্গে দেখে রাজপুত্র ভিতরে নেই। তখন ঐ রাজ্যের রাজা রাজা দশমন্তোকে অকথ্য ভাষায় অপমান করেন। বলেন এর জন্য তার মেয়ের কিছু হলে তাকে ছাড়বেনা বলে শাসায় । তখন রাজা দশমন্তো ভাবে এ কার্য্যের জন্য ছেলেকে আর ছাড় দেয়া যাবে না। তাকে একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে। এদিকে মেয়েটির লক্ষ্যভ্রষ্ট রক্ষা করতে সেদেশেরই উজিরের পুত্র তাকে বিয়ে করিতে রাজি হয় । তারপর রাজা দশোমন্তো সে রাজ্যের রাজার রোষানল হতে মুক্তি পায় । (চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর