বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর বাজারে আওয়ামী লীগের দৃুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০জন আহত হয়েছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার দিবাগত মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রোববার রাতে সংঘর্ষর ঘটনা ঘটলেও সোমবার দুপুরে দু’পক্ষের আহত ১৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকেই থানায় মামলা বা লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটকও করেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত ১০ টার দিকে হরিণাথপুর বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী (স্থগিত নির্বাচনের) আলহাজ্ব লতিফ খানের অনুসারী ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জহির রায়হানের সঙ্গে সতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তৌফিকুর রহমানের অনুসারী মোক্তার হোসেন খানের বাকবিতন্ড ঘটে। মোক্তার হোসেন খান ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য (মেম্বার) পদে এবার প্রার্থী হয়েছিলেন। মোক্তার হোসেন খান তার প্রতিদ্বন্দ্বি জহির রায়হানকে বলেন এবার তালিকায় নাম থাকলেও অনেক গরীব ও অসহায় মানুষ প্রধান মন্ত্রীর দেয়া উপহার নগদ সহায়তা পায়নি। মোক্তার হোসেন খান তার প্রতিদ্বন্দ্বি জহির রায়হানের কাছে টাকার হিসেব চান। এতে দুইজনের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী (স্থগিত নির্বাচনের) আলহাজ্ব লতিফ খানের কর্মী সমর্থকরা জহির রায়হানের পক্ষে যোগ দেন। অন্যদিকে সতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তৌফিকুর রহমানের কর্মী সমর্থকরা মোক্তার হোসেন খানের পক্ষে যোগ দেন। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত ২টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন।
হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে সংঘর্ষ হলেও সোমবার বেলা ১২টার পরে প্রথমে তৌফিকুর রহমানের সমর্থক ৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর পরপরই চেয়ারম্যান লতিফ খানের সমর্থক ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি হওয়া সকলে ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়েছেন।
হরিনাথপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রাতের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বাজার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক ব্যবসায়ী ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় তাদের দোকান খোলেন নি। দু’পক্ষের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় তারা ফের সংঘাতে জড়াতে পারেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
হরিণাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রোববার রাত সাড়ে ৮টায় হরিণাথপুর বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তৌফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একদল লোক দলীয় কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় তার (লতিফ) সমর্থকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। রাত ২টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছে বলে জানান লতিফ খান।
হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তৌফিকু রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বর প্রার্র্থী মোক্তার হোসেন ও জহির রায়হানের মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ওই দুই প্রার্থী সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা। চেয়ারম্যান লতিফ খান ঘটনা ভিন্নদিকে নিতে এ ঘটনার সঙ্গে তাকে জড়াচ্ছেন। তিনি ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নন। সংঘর্ষের ১২ ঘন্টা পর তার কর্মী সমর্থকদের হাসপাতালের ভর্তির কারন জানতে চাইলে তৌফিকুর রহমান বলেন, রাতে হাসপাতালে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিলনা। হাসপাতালে যাওয়ার পথে হামলার আশঙ্কা ছিল।
অন্যদিকে লতিফ খান বলেন, হামলায় তার ১০ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। স্থানীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসায় আহতরা সেরে উঠবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু তা না হওয়ায় একজনকে বরিশাল মেডিকেলে ও চারজনকে হিজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মোক্তার হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের টাকা নিয়ে অনিয়ম করায় তিনি রোববার রাতে বর্তমান মেম্বর ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী জহির রায়হানের কাছে প্রতিবাদ জানান। এর জের ধরে তার ওপর হামলা হলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসীম কুমার সিকদার জানান, হরিনাথপুর বাজারে মারামারির খবর পেয়ে রাতে তিনি একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছেন। হরিণাথপুর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। মারামারির ঘটনায় কোন পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
#আপন_ইসলাম