নিজস্ব প্রতিনিধি:পাবনার দিলালপুরে ভাড়া বাসায় একই পরিবারের তিনজনকে খুন করেছে স্থানীয় মসজিদের ইমাম। তার নাম তানভীর হোসেন (২৫)। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ার পর সে এসব তথ্য স্বীকার করে। জানা যায়, দেড় বছর আগে নিহত নি:সন্তান দম্পতির দুর্বলতায় এই ইমাম বুনে যায় পালিত পুত্র। মুলত টাকা পয়সা ও স্বর্নালঙ্কারের লোভে এই দম্পতি ও তাদের পালিত মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করে খুনি তানভীর। লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তার তানভীর নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে। রোববার দুপুরে পাবনা পুলিশ লাইন মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, অবসরপ্রাপ্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার ও তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন ছিলেন নি:সন্তান। মা বাবা ডাক শুনতে একদিন বয়সী শিশু সানজিদাকে পালক নিয়ে লালন পালন করছিলেন। এর মধ্যে দেড় বছর আগে বাড়ির পাশে ফায়ার সার্ভিস মোড়ে অবস্থিত মুদি দোকানে ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর এর সাথে পরিচয় হয় নিহত ছুম্মা থাতুনের। তানভিরের ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে সন্তান হিসেবে আপন করে নেন। তানভীরও তাদের বাবা-মা হিসেবে ডাকতে থাকেন।
ব্যাংক, পোস্ট অফিসে টাকা লেনদেন সহ পরিবারের সকল কাজ তানভীরকে সাথে নিয়ে করতেন আব্দুল জব্বার। তানভিরও তার বিশ্বাসের জায়গায় তিল পরিমান ক্ষুত ধরতে দেয় নাই। এখান থেকেই জব্বারের টাকা পয়সা ও স্বর্নালঙ্কারের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে তার। পরিকল্পনা করতে থাকে হত্যাকান্ডের। গত ২৯ মে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামে চলে যায় তানভীর। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ৩১ মে পাবনা ফিরে আসে সে। ওইদিন রাতে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অবস্থান নেয় তানভীর। তারপর ঘটায় লোমহর্সক ঘটনা। রাত ২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জব্বার, তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন ও মেয়ে সানজিদা (১২) কে কুপিয়ে ও কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ঠা-া মাথায় বাথরুমে গিয়ে শরীরে ও কাপড়ে রক্ত ধুয়ে গোসল করে। তারপর নগদ ২ লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি ও স্বর্নের গহনা লুট করে বাড়ীর গেটে তালা লাগিয়ে চলে যায়। তখন তার ইমামতি মসজিদে ফজরের আজান পরচ্ছিল।
গত শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়ি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শনিবার রাতে নওগাঁর নিজ বাড়ি থেকে তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত তানভীরের শাস্তি নিশ্চিতে সব ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, শামীমা আক্তার, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) খন্দকার রবিউল আরাফাত লেলিন, সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ, ডিবি পুলিশের ওসি ফরিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।