পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। ’ এ আয়াতে রোজা ফরজ হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। ভাব্বার বিষয় হলো, আল্লাহতায়ালা কখনই ইমানদারদের শাস্তি দিতে চান না। আবার বান্দারা পানাহার না করে থাকলেও যে তিনি খুশি হন তা নয়।
বান্দাদের ভুখা রেখে তার কোনো লাভও নেই। এর পরও তিনি কেন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন? মূলত এতে আমাদের নিজেদেরই ফায়দা রয়েছে। পবিত্র কোরআনেও সে কথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহ রোজা ফরজ করেছেন যাতে আমরা পরহেজগার হই। মুত্তাকি হই। রোজার হিকমত ও দর্শন হলো, মানুষের মধ্যে তাকওয়া বা পরহেজগারি সৃষ্টি হওয়া। জনৈক সাহাবি হজরত উবাই বিন কাব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, তাকওয়া কী? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি কি কখনো কাঁটাওয়ালা রাস্তা দিয়ে গেছো? সে উত্তর দেয়, হ্যাঁ গিয়েছি। কীভাবে গেছো? কাপড় জড়িয়ে নিয়ে খুব সাবধানতার সঙ্গে হেঁটেছি যাতে কাঁটার সঙ্গে কাপড় জড়িয়ে না পড়ে।
হজরত কাব (রা.) বললেন, এর নামই তাকওয়া। মানুষের এমন সাবধানতার সঙ্গে চলা, যাতে কোনোভাবেই গুনার ছিটেফোঁটা তার শরীরে না লাগে, পাপের কালিমা জীবনে না লাগে। এর নামই তাকওয়া। রোজা কেবল না খেয়ে থাকার নাম নয়। পানাহার করলেন না আর রোজা হয়ে গেল তা নয়। রোজা শুধু পেটের জন্য নয়। রোজা চোখের জন্যও। জবানের জন্যও, কানের জন্যও, মন-মস্তিষ্কের জন্যও। রোজা মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গের। একজন প্রকৃত রোজাদার মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গের রোজা রাখে।
একজন মানুষ যখন পূর্ণরূপে রোজাদার হয়, কেবল তখনই সে রোজার পূর্ণাঙ্গ ও চরম উৎকর্ষতা লাভ করে। এজন্যই হাদিসে বর্ণিত আছে, কিছু কিছু রোজাদারের জন্য না খেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। রোজা রেখে অন্যের গিবত করছে। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলছে। রোজা রেখে অন্যকে ধোঁকা দিয়েছে। রোজা রেখে অন্যের হক নষ্ট করেছে। যারা রোজা রেখে এসব করে, তারা রোজার সওয়াব পায় না। রোজার সওয়াব থেকে তারা মাহরুম থেকে যায়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সহিভাবে রোজা পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
#CBALO/আপন ইসলাম