পানির অপর নাম জীবন, সেই জীবনের সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষ । পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর আকারে ধারণ করেছে বাংলাদেশের এই উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গের কোন কোন গ্রামে শতকরা অর্ধেক টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না । সরজমিনে দেখা গেছে যে, যে সকল এলাকায় জলাশয় কিংবা পুকুর সংখ্যা যত কম, সে সকল এলাকায় পানির সংকট তত তীব্র থেকে তীব্রতর আকারে ধারণ করেছে । বিশেষ করে বিল কিংবা চর এলাকায় বড় বড় পুকুর এবং জলাশয় খুব একটা দেখা যায় না, সেই সকল এলাকায় এখন পানির সংকট সবচেয়ে বেশি। বর্ষার মৌসুমে এই সকল এলাকায় পানির বিস্তার জলরাশি থাকলেও, শুকনো মৌসুমে এসে সৃষ্টি হয় পানির আহাকার। কারণ ঐ একটাই পানি সংরক্ষণের জন্য কোন পুকুর কিংবা জলাশয় নেই এই সকল এলাকায় ।
কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে ভূ-গর্ভের পানি নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ প্রকল্প পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে; ফলে শত শত বিঘা জমির ধান এই শুকনো মৌসুমে এসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । ফলে ভবিষ্যতে দেখা দিবে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষের চরম খাদ্য সংকট ।
আজ থেকে দশ বছর আগেও এমন পানির সংকট দেখা যায় নাই বলে দাবি করেছে অনেক এলাকার মানুষ । এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৪০ সালে মধ্যে এই শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে কৃষিকাজ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি জানিয়েছেন অনেক প্রবীণ কৃষক। পানির অভাব জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক হারে বৃদ্ধি পাবে; এমন কী কোন এক সময় এই এলাকা অর্ধ-মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে বলে দাবি অনেকের।
পানির সংকটে কৃষিকাজ সহ গবাদি পশু পালন এবং গৃহস্থালির সকল কাজ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে দাবি উত্তরবঙ্গে সকল এলাকার মানুষের । পানির এই তীব্র সংকট থেকে তারা মুক্তি চায় । কিন্তু মুক্তি দিবে কে?
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, মহানন্দা, পদ্মা , বড়াল, ইছামতী, ইরাবতি, আত্রাই, ধরলা, বাঙ্গালী, নাগর ইত্যাদি নদী ও নদী । পদ্মা এবং যমুনা নদী ব্যতীত অধিকাংশ নদীতে পানি নেই । পানি না থাকার কারণ হল উত্তরে বাঁধ নির্মাণ এবং নদীর গভীরতা কমে যাওয়া । বর্ষার মৌসুমে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে, এখন ঐ সকল নদী গুলো গভীরতা বৃদ্ধি করা বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র দায়িত্ব এবং কর্তব্য ।
ভূগর্ভস্থ পানি সংকটের অনেক গুলো কারনের মধ্যে প্রধান কারণ হল নদী-নালায় পানি না থাকা, পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, অসচেতন ভাবে পুকুর এবং জলাশয় ভরাট, ভূ-গর্ভের পানি অপচয়, নদী-নালা দখল করে ভরাট, ইউক্যালিপ্টাস বৃক্ষ অধিক হারে রোপণ, জনসচেতনতা কমে যাওয়া ইত্যাদি ।
শুকনো মৌসুমে ভূ-গর্ভের পানির গভীরতা নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল আর্সেনিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে । পানির গভীরতা যে সকল এলাকায় যত কমে যাচ্ছে, সে সকল এলাকায় এই আর্সেনিক সমস্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে । কারণ যে সকল এলাকায় আর্সেনিক আছে সে সকল এলাকার ভূ-গর্ভের পানির ব্যবহার তত কম, ফলে অন্য এলাকার পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় এই আর্সেনিক এলাকার পানি ঐ এলাকায় ভূ-গর্ভে স্রোতে সৃষ্টি করছে, ফলে আর্সেনিক যুক্ত পানি ভূ-গর্ভে ছড়িয়ে যাচ্ছে নানা দিকে । ভবিষ্যতে এটা একটা চরম সমস্যা হিসাবে দেখা দিবে বলে মনে করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ ।
ভূগর্ভস্থ পানি সংকট মোকাবিলায় সরকারকে প্রস্তুত হতে হবে । সকল প্রকার পুকুর এবং জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে । নদী নালার গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে । সরকারি সকল খাস জমিতে নতুন নতুন পুকুর এবং জলাশয় কাটতে হবে । সকল ধরনের রাস্তার পাশ দিয়ে পানি প্রবাহের জন্য নালা তৈরি করতে হবে যাতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এবং শুকনো মৌসুমে খুব সহজে পানি পাওয়া যায় । এখনি সময়, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে; নতুবা আগামী ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভূ-গর্ভের পানির সংকট কী হতে পারে তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারো জানার থাকবে না । সরকারকে বলবো যত তারাতারি সম্ভব ভূগর্ভস্থ পানির সংকট নিরসনে পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করুন ।
শাবলু শাহাবউদ্দিন
শিক্ষার্থী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পাবনা বাংলাদেশ ।