চাঁদ দেখার মাধ্যমেই রোজার আনন্দের দোর খোলে। রমজানের প্রথম দিনেই সাহরীর আনন্দে গোটা পাড়া কোলাহলে মেতে উঠে।প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যুগ থেকেই আমরা সাহরীর গ্রহণের মাধ্যমে রোজার নিয়ত করে রোজা আরম্ভ করি। রাসূলের করা কাজ সে হিসেবে আমাদের উম্মতের জন্য সাহরী খাওয়া সুন্নত।
এছাড়া সাহরীই একমাত্র মাধ্যম যেটা দ্বারা ভিন্ন ধর্মের রোজার সাথে আমাদের পার্থক্য করে দেয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের ও ইয়াহুদী-নাসারাদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া। (বুখারী ও মুসলিম)
সাহরী আরবী শব্দ যা ‘সাহর’ শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ রাতের শেষাংশ, শেষ তৃতীয়াংশ বা ভোর রাত। পরিভাষায় রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতে অর্থাৎ সুবহে সাদিকের পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তাকে সাহরী বলা হয়। রোজা রাখার নিমিত্তে এ খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সদা-সর্বদা রোজার উদ্দেশ্যে সাহরী খেয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর প্রিয় উম্মতকে তা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন। হাদীস শরীফে বলা আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরীতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারী: ১৭৮৯)
এছাড়াও সাহরীর গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তিনি আরো বলেছেন, যদি একঢোক পানিও হয় তা তোমরা সাহরীতে গ্রহণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ও তার ফেরেশতারা সাহরী গ্রহণকারীর উপর রহমত বর্ষণ করেন। (মুসনাদে আহমদ: ১১১০১)
মহান আল্লাহ আমাদের জন্যে সাহরীকে বিরাট রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) এর যুগে অর্থাৎ ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহরী খাওয়ার নিয়ম ছিলোনা। ইশার নামাজের পর খেয়ে কিংবা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে রোজা শুরু হয়ে যেতো। এবার কেউ শেষ রাতে উঠে খেতে চাইলেও সুযোগ ছিলোনা এবং স্ত্রী সহবাসেরও কোন সুযোগ ছিলোনা। হাদীসে এসেছে, একবার সাহাবী সিরমা উবনে কায়েস মাগরিবের নামাজ পড়ে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলেন। হযরত ওমর (রাঃ) ইশারের পর স্ত্রীর সাথে মিলিত হলেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইশার পড়ে ঘুমিয়ে গেলেন। পরবর্তীতে জেগে উঠে কিছু খেয়ে নিলেন। পরেরদিন ভোরে যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসবের সমাধান জানতে চাওয়া হলে আল্লাহ তালা এই আয়াত নাযিল করেন, ‘খাও, পান করো ফজরের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত।’ (সূরা বাকারা: ১৮৭, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ১/৫১১)।
এরপর থেকে সাহরীর খাওয়ার নিয়ম শুরু হয়। তবে কেউ যদি সাহরী না খেতে পারে তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। মনে রাখা উচিত সাহরী খাওয়া সুন্নত। সেটা যদি এক গ্লাস পানি দিয়েও হয় সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
সাহরীর ক্ষেত্রে অন্যতম আরেকটি বিষয় হলো সাহরী যত বিলম্ব করে খাওয়া যায় তত ভালো। ইফতারের ঠিক বিপরীত। ইফতার খুব তাড়াতাড়ি করতে হয় আর সাহরী নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে বিলম্বে করা সুন্নত। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যত দিন এ উম্মত বিলম্বে সাহরী খাবে আর দ্রুত সময়ের সাথে সাথে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪৬)
#CBALO/আপন ইসলাম