” ইট মারলে পাটকেল খেতে হয় ” বিশ্ব উষ্ণায়নে ভারসাম্যহীন পরিবেশ তার জবাব দিচ্ছে। বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের মরণ ছোবলে স্হবির ও বিছিন্ন। বায়ুমণ্ডলে কোটি কোটি ভাইরাসের বিচরণ এটা নতুন কিছু না। কোটি ভাইরাসের মধ্যে একটা আগ্রাসনী ভাইরাস বিশ্ববাসী আর প্রযুক্তির মহাপ্লাবনের মুখে মুখোশ দিয়ে ঘরে বন্দি করে রেখেছে। পরিবেশের বায়ুমন্ডলকে বিশ্ববাসী তাদের ভোগবিলাসের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে পরিবেশের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ধ্বংস করে দিচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। তার প্রতিদান বিশ্বাবাসী পাবেন না, তা কি হয়? কত কোটি জীবাণুর জন্য টিকা আবিস্কার করবেন? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতেই প্রাণীকুলের সুরক্ষা নিহিত।
বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র গুলো উন্নয়নের নামে, শিল্পায়নের নামে, সমুদ্রের পানি সহ ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি স্হানকে দূষিত করে ফেলেছেন। তাদের অপরিকল্পিত নগরায়ন, বনভূমি ধ্বংস জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতাম কারন। পৃথিবী থেকে আসা ক্ষতিকারক রশ্মিকে ক্ষতিগ্রস্ত ওজনস্তর প্রতিহত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। করোনা ভাইরাস পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এর জন্য উন্নত রাষ্ট্রগুলো দায়ী। পৃথিবীতে শীর্ষে থাকা কার্বন নিঃসরণকারী দেশ গুলো হচ্ছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত । বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন ( ২৮%) ।
বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীটাকে একটা টাইম বোমার সাথে তুলনা করা যেতে পারে । যে কোন সময় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আমাদের মতো দেশ শুধু ভোক্তভোগী। উন্নত দেশগুলো তারা বিশ্ববাসীকে অসম অর্থনীতির লাল নিশান দেখানোর জন্য পরিবেশের বুকে রক্ত ঝরিয়েছে। করোনার ভয়াল থাবায় রক্তপাতহীন ভাবে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা থেমে গেছে। করোনার বিষাক্ত ছোবলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার কলকারখানা, স্হবিরতা আসছে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বাড়ছে মানুষে মানুষে দূরত্ব। করোনা মহামারী আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে, দুর্ভিক্ষের হাতছানি সময়ের ব্যবধান।
প্রানঘাতী বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের ভয়াল ছোবলে বিশ্ববাসী আজ অসাহায় ও নিরুপায়। বিশ্বের ২১৬ টি দেশ করোনা জ্বরের আতঙ্কে আতঙ্কিত। বিশ্বে ২৯ লাখ লাশের মিছিল আরও কত লাশ মিছিলে শরিক হবে সৃষ্টিকর্তাই জানেন! বিশ্বের সমস্ত প্রযুক্তি করোনার কাছে অবনত। জাতিভেদে এখন সবার সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা। করোনার বিষাক্ত ছোবলে প্রতিমুহূর্তে লাশের মিছিলে যুক্ত হচ্ছে লাশ। করোনা আক্রান্ত হলে সন্তান পিতাকে স্বীকৃতি দেয় না আবার পিতা দেয় না পুত্রকে স্বীকৃতি। বিশ্ব মানবতাকে আজ অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে করোনায়। মানবতার বাণী নিরবে নিবৃতে কাঁদে।
করোনার মূল কারন পরিবেশের অভিশাপ। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বলতে পৃথিবীতে সাম্প্রতিক কালের মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকেই বোঝানো হয়। এর প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপ ও বাতাসসহ বিভিন্ন সূচকের পরিবর্তন হয় ও পৃথিবীপৃষ্ঠে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন ( Global warning) পৃথিবীর পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করার জন্য একমাত্র দায়ী বলা যেতে পারে। আর ভারসাম্যহীনতার কারনে
দেশে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড় ধস, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দিনে দিনে বৃদ্ধিই পাচ্ছে। ফলে খাদ্য উৎপাদনে চরম ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। জগতের প্রাণীকূলকে প্রকৃতির রক্ত চক্ষুর ঘূর্ণিপাকে ফেলে দিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেনা উন্নত দেশগুলো।
ভারসাম্যহীন পৃথিবীর পরিবেশে আরোও প্রাণঘাতী ভাইরাস ঢুকতে পারে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্ববাসীর সমন্বিত উদ্যােগ দরকার। পরিবেশের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলে করোনার মতো অসংখ্য ভাইরাসকে পরিবেশেই ধ্বংস করতে পারবে। বিগত ৭ শত বছরে পৃথিবীতে যত মহামারী দেখা দিয়েছে কোভিড-১৯ এর বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশী। স্হায়িত্বকাল কত বছর হয় তা বলা কঠিন!
পৃথিবীতে ৭শত বছরের ইতিহাসে তথ্যগত ভাবে প্রমাণিত, প্রতি ১০০ বছর পর পর একটা মহামারী দেখা দেয়।
১৩২০ সালের মহামারী ” দ্য ব্ল্যাক ডেথ অব বুবোনিক “( মৃতের সংখ্যা ২০ কোটি মানুষ)।
১৪২০ সালের মহামারী ” দ্বিতীয় প্লেগ প্রলয় ” (মৃতের সংখ্যা সাড়ে আটকোটি)
১৫২০ সালের মহামারী ” গুটি বসন্ত ” (মৃতের সংখ্যা ৮০ লাখ )
১৬২০ সালের মহামারী ” মে ফ্লাওয়ার ” ( মৃতের সংখ্যা দেড়কোটি)
১৭২০ সালের মহামারী ” দ্য গ্রেট প্লেগ অব মার্শেই ” ( মৃতের সংখ্যা ২০কোটি)
১৮২০ সালের মহামারী ” কলেরা “( মৃতের সংখ্যা লাখে লাখে)
১৯২০ সালের মহামারী ” দ্য স্প্যানিশ ফ্লু ” ( মৃতের সংখ্যা ৫ কোটি)
২০২০ সালে মহামারী ” কোভিড-১৯ ” এ পযর্ন্ত সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ২৯ লাখ।সকল মহামারীর স্হায়িত্বকাল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর স্হায়ী হতে পারে। আরও দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। সুতারাং করোনায় শুধু মানুষেই মারবে না, মারবে অর্থনীতিকে, মারবে খাদ্য উৎপাদনকে আর ডাক দিবে দুর্ভিক্ষকে।
” মাস্ক পরুন , সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন “