বাংলা একাডেমির এবারের বইমেলায় মেধাবী সাংবাদিক, লেখক ও কণ্ঠশিল্পী আমির“ল মোমেনীন মানিকের ২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আরতুগ্র“ল বাঙালি শিরোনামের উপন্যাস।অপরটি হচ্ছে টিভি সাংবাদিকতার অ আ ক খ। উপন্যাস আরতুগ্র“ল বাঙালি বইটি পাওয়া যাচ্ছে বই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২২ নম্বর স্টলে। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৫ টাকা। অন্যদিকে টিভি সাংবাদিকতার অ আ ক খ বইটি পাওয়া যাচ্ছে বই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩৩৯-৫৪০ নম্বর স্টলে।
জানতে চাইলে তরুনদের প্রিয় এ লেখক ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রতিবছর আমার সরব উপস্থিতি থাকে বই মেলায়। কিন্তু‘ করোনা পরিস্থিতি এবং সামগ্রিক বাস্তবতায় ছন্দপতন হয়েছে স্ব-শরীরে উপস্থিতির। তবে মন পড়ে আছে বই মেলায়। বইগুলো পাঠক সমাজে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ভক্ত অনুসারীরা বইমেলায় এসে বই নিচ্ছেন। ফোন করে বইয়ের অর্ডার দিচ্ছেন।
মানিক ভক্ত মুহাম্মাদ লিখন ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতিবছর বই মেলায় আসি। বই সংগ্রহ করি। অনেক লেখকের বইয়ের মধ্যে আমার প্রিয় লেখক আমিরুল মোমেনীন মানিকের বই সবসময়ই আমার কাছে পছন্দের। মানিক ভাইয়ের শৃজনশীল ও বাস্তবভিত্তিক বই গুলো পড়ে অনেক কিছু শিখেছি।
ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি, গান পরিবেশনসহ বিভিন্ন মানবতাবাদী সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন এ লেখক।গত বছর সৃজনশীল প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে গল্পের বই ‘রহস্যগন্ধী তরুণী’এবং কাব্যগ্রন্থ’ ‘আগুনের জুতো পায়ে হাঁটছি। আর সেভেন্টিওয়ান টেলিমিডিয়া প্রকাশ করেছে ভ্রমণগল্প ‘এক ঝোলা গান নিয়ে বিলেতে’। অন্যদিকে, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল মানিকের জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘বিপবী আনোয়ার ইব্রাহিম’।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি সঙ্গীত ও সাহিত্যকর্মী হিসেবেও নিজেকে সমান্তরালে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মানিক। কর্মঠ,পরিশ্রম প্রিয়, মেধাবী ও সৃজনশীল মানিকের জন্ম জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার এক নিভৃত শ্যামল গাঁও গোবিন্দপুর নাংলা কাঠপাড়া গ্রামে। তার পিতা মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন ছিলেন স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরে জামাল বাহিনী গড়ে তুলে ১৯৭১ খ্রিষ্টোব্দ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। মা মিসেস রোকেয়া জামাল ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী।
আমির“ল মোমেনীন মানিক মূলত গদ্য লেখক হিসেবে পরিচিত।সমাজের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, অসঙ্গতি ও বাস্তবতা তিনি তুলে ধরেন তার লেখা ও গানে। গুনী এ লেখকের অন্য বইগুলো হলো- সুর-সঞ্চারী(২০০২), ইবলিস(২০০৫), বাডি জার্নালিস্ট(২০০৮), বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শি¶ক(২০১২), রাজনীতির কালো শকুন(২০১৩), বঙ্গবীর এক্সপ্রেস (২০১৪), জনচাকর(২০১৫), মুখোশপরা মুখ (২০১৫), খবরের ফেরিওয়ালা (২০১৬), সাংবাদিক সাংঘাতিক (২০১৭), রোহিঙ্গা তরুণী (২০১৮), রাত নেমেছিলো বুকে (২০১৯), সবুজ পরির গান (২০১৯)।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের বইমেলায় ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শিক্ষক’ তর“ণদের মধ্যে সর্বো”চ বিক্রিত বই। মানিক, বিভিন্ন সময়ে ‘ওরা জাগতে চায়’, ‘তর“ণকণ্ঠ’,‘মুক্তবাচন’ ও ‘সহজকথা’ নামের সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন।
বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতায় মানিককে বলা হয় ‘শুদ্ধ উচ্চারণের সংবাদকর্মী’। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশের প্রথম ভিডিও নিউজ পোর্টাল চেঞ্জ টিভি. প্রেস। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ইউটিউব জার্নালিজমের ধারণা উপস্থাপন করেন।
সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে মানিক জামালপুরের মেলান্দহ উমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন এবং উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হন। এরপর জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং পরে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স করেন মানিক।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মেলান্দহ বার্তা নামের একটি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুর“ করেন মানবতাবাদী এই মানুষটি। এরপর দৈনিক সোনার দেশসহ বেশ ক’টি পত্রিকায় কাজ করেন তিনি। ভারতের এনডিটিভি’র নির্বাহী প্রযোজক অভিজিৎ দাশগুপ্তের কাছ টিভি সাংবাদিকতার হাতেখড়ি নেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বৈশাখী টেলিভিশনে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হন। বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন দিগন্ত টেলিভিশনে। ছিলেন তিনি মাই টিভির বার্তা সম্পাদক। বর্তমানে এশিয়ান টিভিতে তিনি টক-শো উপস্থাপনা করছেন। দীর্ঘদিন খবরপাঠ করেছেন। আমির“ল মোমেনীন মানিক ইতোমধ্যে জীবনমুখী ও ব্যতিক্রমী গানের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে শক্ত ও মজবুদ অবস্হান তৈরি করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতে জীবনমুখী গানের জগতে তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি।
এ পর্যন্ত আমিরুল মোমেনীন মানিকের ৮টি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। অবাক শহরে [২০১৩], আয় ভোর [২০১৫] ও মা [২০১৫]-এই ৩টি গানের এ্যালবামের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান মানিক। দুই বাংলার নন্দিত সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতার সঙ্গে তার গাওয়া গান ‘আয় ভোর’, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন বেশ কয়েকটি এ্যাওয়ার্ড। উলেখযোগ্য হলো: রয়টার্স মেকিং টিভি নিউজ এ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো ক্লাব জার্নালিজম এ্যাওয়ার্ড, উদীচী ইতিহাস প্রতিযোগিতা পুরস্কার, সাঁকো এ্যাওয়ার্ড, ভিন্নমাত্রা এ্যাওয়ার্ড, শের-ই বাংলা স্বর্ণপদক, আরশীকথা সম্মাননা (ত্রিপুরা, ভারত), সাংস্কৃতিক সম্মাননা, (পশ্চিমবঙ্গ-ভারত ২০১৭), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা।
#CBALO/আপন ইসলাম