সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

ধৈর্য্যর মাস মাহে রমযান – মাওলানা :শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা অনিয়ম, অসংযমী কাজ করে ফেলি। আমরা অধৈর্য হয়ে পড়ি এবং অন্যায় বা গুনাহের কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। অনেক সময় আমরা বিপদে পড়েও ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কিংবা নিজেকে শোধরানোর উত্তম সময় হচ্ছে মাহে রমজান। তাই রাব্বুল আলামিন রমজান মাসকে ধৈর্যের একটি বিজ্ঞানসম্মত কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

বাস্তব জীবনে আমাদের ধৈর্যের প্রয়োজন অনেক বেশি। ধৈর্য ধারণ করতে পারলে আল্লাহ তাআলা তার বান্দার জন্য পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ জাল্লাশানুহু বলেন, সবরকারীদের সুসংবাদ দিন যারা বিপদগ্রস্ত হলে বলে, অবশ্যই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সূরা বাক্বারা)

সত্যিকার অর্থে বাস্তব জীবনে প্রতিটি পদে ধৈর্য প্রয়োজন। যার ধৈর্য বেশি, তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি বেশি। কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। অভাব-অনটনে পড়লে হারাম আয়ের দিকে না গিয়ে সীমিত হালাল রোজগারের ওপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, তিনি তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন এবং এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’

ধৈর্য বা সবর হচ্ছে মোমিনের সাফল্যের চাবিকাঠি। হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘যে সবর করে আল্লাহ তাকে সবর ধারণে সাহায্য করেন। আল্লাহ সবরের চাইতে উত্তম ও প্রশস্ততা কাউকে দান করেন না।’ (বোখারি ও মুসলিম)

বিপদ আসলে সবরের প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই বিপদে মোমিনকে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে হয়। অপর এক হাদিসে এসেছে, রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন- ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক।’ (তিরমিজি)

এ হাদিসে রোজাকে সবরের অর্ধেক বলা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, রমজানের সার্থে ধৈর্যের মূল অর্থ ও তাৎপর্যের বিরাট মিল রয়েছে। আল্লাহ যেসব কাজ নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা হচ্ছে ধৈর্যের অর্ধেক। অপর অর্ধেক হচ্ছে তাঁর আনুগত্য বা ইবাদত করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেচেন, ‘ধৈর্য ধারণকারীদের বিনা হিসেবে তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সূরা জুমার)। সুতরাং দৈর্যের পুরস্কার কত বড় আমরা সহজেই তা অনুমান করতে পারি। রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘আল্লাহ ধৈর্য ধারণকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাক্বারা)

এই ধৈর্যের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক কি তা আমাদের বুঝতে হবে। সাধারণতঃ ধৈর্য তিন প্রকার। আল্লাহর আনুগত্য ও কষ্ট স্বীকারের ধৈর্য, নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে কষ্ট হয় সে ব্যাপারে ধৈর্য এবং তাকদির বা ভাগ্যের কষ্টদায়ক জিনিসের মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ।

মাহে রমজানে এই তিন ধরনের ধৈর্যই পাওয়া যায়। কেননা, রমজানে নআল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা এবং নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার কষ্ট আছে। এছাড়া ক্ষুৎ-পিপাসা, শারিরীক দুর্বলতাসহ ভাগ্যলিপির কষ্টও রয়েছে। এ জন্য রমজানকে ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে। তাই এ মাসে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং পরবর্তীতে তার বাস্তবায়ন করতে হবে।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘কোন মুসলমান বিপদগ্রস্ত হলে আল্লাহ এর দ্বারা তার গুনাহ মাফ করে দেন। এমনকি একটি কাঁটা ফুটলেও।’ (বোখারি ও মুসলিম)

অপর এক হাদিসে এসেছে, রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন- ‘বড় পুরস্কার বড় পরীক্ষার সঙ্গে রয়েছে। আল্লাহ যদি কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন, তাহলে তাদের বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা পরীক্ষায় রাজি থাকে, তাদের জন্য সন্তুষ্টি এবং যারা অসন্তুষ্ট হয়, তাদের জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

রাসূল (সা.)-এর জীবনে রয়েছে ধৈর্যের উত্তম উদাহরণ। তিনি যখন দ্বীনের প্রচারে তায়েফে গিয়ে প্রহৃত হন, তখন অধৈর্য হয়ে তাঁকে আঘাতকারীদের বদদোয়া করেননি। বরং বলেছেন- হে আল্লাহ, তারা অজ্ঞ, তারা জানে না, আপনি তাদের হেদায়েত করুন। আরো নানা রকম বিপদ-আপদে তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং অন্যকেও সে শিক্ষা দিয়েছেন।

বস্তুত ধৈর্য, সংযমের কোনো বিকল্প নেই। আর এই গুণাবলী অর্জনের বা চর্চার উত্তম সময় হচ্ছে রমজান মাস। রাব্বুল আলামিন আমাদের ধৈর্য ধারণের এবং তাঁর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী চলার তাওফিক দান করুন। -আমিন।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর