সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :

কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায়

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বুধবার, ৩ জুন, ২০২০, ৮:০৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনার আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় দেশের ১ কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনা হচ্ছে। এ লক্ষে নতুন বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হবে ৭৬ হাজার কোটি টাকা, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কার্যক্রম বেগবান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্রের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে সরকার। একজন বেকার যোগ্যতা অনুযায়ী পাবেন কাজ। চলতি বাজেটে সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আগামী পাঁচ বছরে এই বরাদ্দ দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এদিকে, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বেগবান করতে উন্নত দেশের রোল মডেল অনুসরণ করবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, সরকারের ২৩ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নে ১৪৫টি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এই বরাদ্দ আরও বাড়ানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রূপকল্প-’২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে চরম বা অতিদারিদ্র্য দূর করা হবে। এ কারণে প্রতিবছর বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ করবে সরকার।
জানা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট দাতাদেশগুলো। দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে ইতোমধ্যে বাজেটে কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দশ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত শেষ করতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সরকারের নেয়া এসব কর্মসূচী দেখে সন্তুষ্ট দাতাসংস্থাগুলো। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় দারিদ্র্য বিমোচনমুখী প্রকল্পগুলোতে সংস্থাটি অর্থায়ন বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী বাজেট উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। করোনার কারণে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আর্থিক সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বাড়িয়ে ৯৭ লাখে উন্নীত করা হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটিতে নিয়ে যাওয়া হবে। চলতি বাজেটের তুলনায় আগামী বাজেটে বরাদ্দও ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৭৬ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে দেশে আরও নতুন করে অনেক বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগামীতে এদের সহায়তার আওতায় আনতে আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ ১৫ হাজার বাড়িয়ে ৯৭ লাখ ১৫ উন্নীত করা হবে। বর্তমানে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৮১ লাখ।
গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তাসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থাই হলো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) ১৪টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী চিহ্নিত করেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম প্রতিবেদককে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা। এ কারণে প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে, অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ৯ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বেশি। বরাদ্দকৃত অর্থ চলতি অর্থবছরের সার্বিক বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রায় ১ কোটি দরিদ্র মানুষ সরাসরি সরকারের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা পাচ্ছেন। শুধু বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৪ লাখ। এছাড়া প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বিধবা, বেদে সম্প্রদায় এবং লিভার ও কিডনি রোগীরা এই কর্মসূচীর আওতায় রয়েছেন।
সংশিষ্টরা বলছেন, সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মকান্ড সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দারিদ্র্য হ্রাসে একটি কার্যকর উপায় হিসেবে স্বীকৃত। এ লক্ষে ২০১৫ সালে প্রণীত ‘ন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএসএস) অব বাংলাদেশ’ বা জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়। এই কৌশলপত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। চরম দরিদ্র-হতদরিদ্র এবং অধিক ঝুঁকিগ্রস্ত জনগণ। বিশেষত মা ও শিশু, কিশোর, যুব, কর্মজীবী, প্রবীণ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণ। ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন আয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান এবং শ্রমবাজারে তাদের প্রবেশ সহজ করা, নগরকেন্দ্রিক জনগণ ও সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণ করা। দুর্যোগ মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন কার্যকর সহায়তা প্রদান করে তা নিশ্চিত করা। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকা- সম্পর্কে উপকারভোগীদের মধ্যে সচেতনতা -বুদ্ধি এবং সম্ভাবনাময় অবদানকারীদের উদ্বুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। তবে প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত নামিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৭ সালে হ্রাস পেয়ে তা ২২ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্জিত গতিশীলতা ও হতদরিদ্রদের জন্য টেকসই নিরাপত্তাবেষ্টনির মাধ্যমে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা, অতিদরিদ্র ও দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টেস্ট রিলিফ, জিআর ছাড়াও সরকার উদ্ভাবিত একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ণ, গৃহায়ন, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচীর পাশাপাশি ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ড, ভিজিডি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও দুস্থ মহিলা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, চর জীবিকায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর