সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

করোনায় অর্থনীতির ক্ষতি ৮৫ হাজার কোটি টাকা

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় গত বছরের মার্চ মাসে। এরপর লকডাউন, মৃত্যু এবং সব শেষে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। তবে মাঝের সময়টা গেছে অর্থনৈতিক মন্দায়, যার সরাসরি প্রভাবে চাকরি হারিয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। দারিদ্র্য বেড়েছে। আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচক ছিল নেতিবাচক। সব মিলিয়ে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, টাকার হিসাবে যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার প্রথম ধাক্কায় দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। করোনা এখনো শেষ হয়নি, বরং বাড়ছে। আমাদের রপ্তানি নেতিবাচক, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির হারও কমে গেছে। তাই এখনই ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। নয়তো ৮৫ হাজার কোটি টাকার অঙ্ক আরো বাড়বে।’

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় ব্যবসা খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। বড় শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটিয়েছেন। গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের উৎপাদন খাত সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল। সাবান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও ওষুধসহ হাতে গোনা কয়েকটি খাতের উৎপাদন বাড়লেও বাকিগুলোতে ব্যাপক ধস নামে। বেশির ভাগ কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অথবা বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। সরকারি সংস্থা বিবিএসের হিসাব মতে, গত এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সময়ে ৩২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার পোশাক উৎপাদন হয়েছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ে প্রায় দ্বিগুণ ছিল।

বড় খাতের পাশাপাশি মহামারিতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল কুটির, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, মাঝারি বা সিএসএমই শিল্প খাত। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০-এ এসএমই খাতে সামগ্রিকভাবে আয় কমেছে প্রায় ৬৬ শতাংশ এবং প্রায় ৭৬ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য অবিক্রীত ছিল। বড়, মাঝারি ও ছোট খাতগুলোর বিপর্যয়ের ফলে সরাসরি প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থানে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে চাকরি হারিয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। বিশ্বব্যাংকের ‘লুজিং লাইভলিহুড : দ্য লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্টস অব কভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ঢাকায় ৭৬ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৫৯ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছেন বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসরত মানুষ। সেখানে চাকরি হারিয়েছেন ৭১ শতাংশ। আর অন্য এলাকায় হারিয়েছেন ৬১ শতাংশ।

এতে দেশে দারিদ্র্যের হারও বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে করোনায় অর্থনীতিতে মোট কত ক্ষতি হয়েছে, তা বের করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ‘সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। এতে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রাণহানিসহ ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৮৪ হাজার ৭৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ১২ বছর দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের কারণে অর্থনীতি স্বল্প সময়ে কভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরে এসেছে। কভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী চারটি নীতি কৌশল এবং পর্যায়ক্রমে ২৩টি অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর পরিমাণ এক লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এটি ১৪.৬ বিলিয়ন ডলারের সমান এবং জিডিপির ৪.৪৪ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ৯টি প্যাকেজ সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত। এর মধ্যে ‘গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ’ অন্যতম একটি কর্মসূচি। এটি সামাজিক সুরক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। এই একটি কার্যক্রম গৃহহীন ও ভূমিহীন অতিদরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলে আনবে। অবহেলিত, বিশেষ করে নারীদের সামাজিক ক্ষমতায়ন করবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮.২ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে আমরা ৫.২৪ শতাংশ অর্জন করেছি। স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জনের মাঝে ফারাক প্রায় ৩ শতাংশ। এই ৩ শতাংশকে ক্ষতি হিসেবে ধরা হয়েছে। এতেই করোনায় অর্থনীতির ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় লকডাউনের কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল—শুধু এই এক মাসে অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। আর ওই সময় কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর