বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

সুশিক্ষিত হলেই স্বশিক্ষিত হওয়া যায় না – ডা: আয়েশা সুলতানা

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৩২ অপরাহ্ণ

কিছুদিন আগে পরিচিত এক বড় ভাই বিয়ে করছেন। উনার স্ত্রী এখনো স্টুডেন্ট। তাই তারা দু-জন দুই জায়গায় থাকেন। উনার স্ত্রী মেসে(হোস্টেলে)থাকুক উনার পরিবার এটা পছন্দ করছেন না,তাই উনি ভাবছেন স্ত্রীর পড়ালেখা বন্ধ করে দিবেন। আশ্চর্য হলাম.. বিয়ের আগে কিন্ত্ মেয়ে পক্ষকে কথা দিয়েছিল পড়া সম্পুর্ণ করবে,আর বিয়ের দু মাসের মাথায় তা বেমালুম ভুলে গেল? জিজ্ঞাসা করলাম ভাই পড়া বন্ধ করতে চান কেন? আর এক বছর পরে নিলেই তো হয়। উনি বললেন পরে কি হবে চাকরি তো আর হবে না! আমি আরো বেশী অবাক হলাম। বললাম চাকরি না করলেও একজন শিক্ষিত মেয়ে মানে একজন শিক্ষিত মা এটা কি খুব কম হয়ে যায়? আপনাদের সন্তানদেরকে পড়াশোনার জন্য কলেজ/ভার্সিটি পড়–য়া কোন ছেলে/মেয়ে নিয়োগ দিবেন, সেখানে আপনার স্ত্রী যদি শিক্ষিত হয় তিনি নিজেই নিজের বাচ্চাকে পরাতে পারবেন। আর ময়ের চেয়ে উত্তম শিক্ষক আপনি পৃথিবীর কোথায় খুজে পাবেন? আলহামদুলিল্রাহ উনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। কিন্ত এভাবে হাজার হাজার মেধাবী মেয়েরা মাঝপথে তাদের পড়া বন্ধ করে সংসার নিয়ে পরে থাকে তার কোন হিসেব নেই। কে বুঝাবে তাদের? আবার যারা পড়াশুনা কমপ্লিট(শেষ)করে তারা সবাই ভাল চাকরি করতে চায়,তাদের ধারণা শিক্ষিত হলেই চাকরি করতে হবে। না হলে কেন কষ্ট করে পড়লো? কেন? শিক্ষিত হয়ে সংসার চালানো যায় না? এতে কি মানসম্মান শেষ হয়ে যায়? অনেকের বলতে শুনেছি পড়াশুনা করে কিছু্ই করতে পারলাম না বলে আফসোস করতে। তাদের জন্য আমাদের আফসোস হয়। বলতে ইচ্ছে হয় আপনি শুধু সার্টিফিকেট নিয়েছেন,শিক্ষা নিতে পারেন নি।

 

সার্টিফিকেট হাতে থাকলেই এখানকার মেয়েরা স্বামীকে আর মুল্যায়ন করে না,ভুলে যায় সম্মান পেতে হলে সম্মান আগে দিতে হয়। মুল সমস্যা আমাদের মেয়েদেরই, দু-চারটে সার্টিফিকেট নিয়েই এরা নিজেদেরকে পুুুরুষ ভাবতে শুরু করে। এখন মেয়েরা ট্রেল্ড করে বিয়ে করে,গায়ে হলুদ করে, নানা রকম বেহায়াপনায় লিপ্ত হয়ে আবার আত্মপক্ষ সাফাই গায় আমরা কে কতটা ইসলাম মানি!! নিজের বেহায়াপনা সুন্দর করে সকলের ্উপর চাপিয়ে দেয়। সব কিছুতেই যেন এরা ট্রেল্ড খুজে। কে কতটা উলুঙ্গ হয়ে শো-অফ করতে পারে তার নেশায় লিপ্ত থাকে, হোক সে উলঙ্গপনা ভিতরের বা বাহিরের। তারপর যদি তাদের ধর্ষণ হয় তখন ন্যাকামি শুরু করে হিজার করতো,পর্দা করতো তবুও কেন ধর্ষণ হলো। ইসলাম পুর্ব আববে সেই ছোট্র মেয়েটি বলেছিল আমি আর কখনো তোমাকে বাবা বলে ডাকবো না,বিরক্ত করবো না,তোমার চোখের সামনেও আসবো না, তবুও আমাকে বাচতে দাও,তার কথা জানেন তো! সেই বাবার নাম হযরত দাহিয়াতুল ক্বালবি(রা:)। যিনি পরবর্তীতে রসুল(সা:)এর কাছে ইসলাম কবুল করেন। হযরত জিবরাইল (আ:) মাঝে মাঝে তার ছদ্মবেশ ধরেই রসুল(সা:)এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন। হাদিসের বর্ণানায় এসেছে, দাহিয়াতুল ক্বালবি(রা:)যখন রসুল(সা;)এর সামনে এসে তার ইসলাম পুর্ব জীবনের এই হদয়বিদরক ঘটনাটির বর্ণনা করছিলেন,তখন রসুল (সা:)এর চোখ থেকে পানি বেয়ে দাড়ি বিজে বিজে পরছিলো। কাদছিলেন মেয়েটির হতভাগ্য বাবা হযরত দাহিয়াতুলক্বালবি(রা)ও। রসুল(সা:)কাদতে কাদতে বলছিলেন,’’মানুষ কিভাবে পারে এমন নিষ্ঠুর হতে’’! এটা ছিল ইসলাম পুর্ব যুগে জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার নারী জীবনের ভয়াল চিত্র।

ইসলামের আবির্ভারের পর সমাজকে সেই নিষ্ঠর ব্যবস্থা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয় বিশ্ব মানবতার মহান নেতা রাসুল (সা:)। প্রচীন গ্রীসে নারীরা ছিলো আইনগতভাবে সংসারের অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তির মতো। তারা ছিলো পুরুষের দাস। বাজারে তাদের কেনা বেচা চলতো। সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও বৈবাহিক সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের পুরুষের অনুগত ও বাধ্য হয়ে থাকতে হতো। প্রচীন রোমান আইনে নারীদের বুদ্ধির স্বল্পতাকে দায়ী করে তাদেও সব রকম নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। হাম্বুরাবি আইনে নারীর উপর পুরুষের কতৃত্ব মেনে নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে নারীদের অমূলক ও চরম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রচীন হিন্দমতে,স্বামীর মৃত্যুর পর সতীদাহ প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর বেচে থাকার কোনো অধিকারও ছিলো না। ইহুদী সমাজে মেয়েদেরকে দাসীর কাতারে রাখা হতো। পিতা চাইলে তাকে বিক্রি করে দিতে পারতো।

ইসলাম নারীদেরকে সম্মনিত করেছেন। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশতের ঘোষনা দিয়েছেন। বাবার চেয়েও মায়ের সম্মানের বেশী প্রাধান্য দিয়েছে। আল্রাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন, ”তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্বব্যবহার করো।”(সুরা নিসা-১৯), রসুল (সা:)বলেছেন,”তোমাদের মধ্যে যার তিনটি কন্যা অথবা তিনটি বোনআছে, তাদেও সঙ্গে স্নেহপুর্ণ ব্যবহার করলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।”(তিরমিথি) অথচ এখন একদল খুবই সু²রুপে নারীদের মগজে এটা দিয়ে দিয়েছে যে ইসলাম নারীর অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। ইসলাম নারীকে সম্মানিত করতে চায় আর নারী সে সম্মান কে অধিকার ল্গংনের নাম দেয়। সর্বোপরি বলতে চাই সকল বাবাকে পদক্ষেপ নিতে হবে মেয়েদের এরকম ওদ্ধত্য আচারণ রুখে তাদেরকে প্ররণায় কোমলতায় ফিরিয়ে আনতে ,আপনার মেয়ে শিশুকে ভালবাসুন,সম্মান করুন।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর