সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:১৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের এক দশক পরে গতি এসেছে দেশের পুঁজিবাজারে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবসে একদিনে ৮ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সূচক বেড়েছে। করোনা অতিমারীর কারণে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সঙ্কুচিত হওয়া, ব্যাংক আমানতে সুদের হার কমে যাওয়া, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি এবং পুঁজিবাজারে নিঃশর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ে সব ধরনের মানুষের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে। নতুন আশায় দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন বাজারে। গত দুই মাসে দেড় লাখের বেশি বিনিয়োগকারী নতুন পুঁজিবাজারে এসেছেন। তাদের আশা করোনার মধ্যে ২০২০ সালে যেভাবে পুঁজিবাজার দ্যুতি ছড়িয়েছে ২০২১ সালে আরও তেজিভাব বজায় রাখতে পারবে। এরই অংশ হিসেবে বছরের প্রথম কার্যদিবস রবিবারে প্রধান শেয়ারবাজারে সার্বিক সূচক একদিনে সর্বোচ্চ ২১৬ পয়েন্ট বেড়েছে। সব ধরনের সূচকই বেড়েছে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। এছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

 

পুঁজিবাজারে নিয়মিত টাকার প্রবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূচক ইতিবাচক থাকলেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগকারীদের দেখে শুনে ভাল শেয়ারে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষায় পুঁজিবাজারটিতে কঠোর নজরদারির দাবিও জানানো হয়েছে। অতীতের মতো বড় কেলেঙ্কারি যেন ফের না ঘটে সেইদিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মৌল ভিত্তিসম্পন্ন ভাল কোম্পানির আরও আইপিও অনুমোদনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ানো হবে। এই বাজারকে নিয়ে কোন বড় গোষ্ঠী ইচ্ছা করলেই আর খেলা করতে পারবে না। জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবর্ণ সময়। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্মরণকালের বড় ধসের আগ পর্যন্ত কমবেশি সবাই মুনাফা করতে পেরেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই বড় ধরনের ধস নামে বাজারে। একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করলেও আস্থা ফেরাতে ব্যর্থতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় তলানিতে নেমে আসে বাজারটি। এরই মধ্যে চলতি মার্চে দেশে অতিমারী করোনা সংক্রমণে পুঁজিবাজার বাধ্য হয়ে ৩৮ কার্যদিবস লেনদেন বন্ধ রাখতে হয়। যেটি বিশ্বের আর কোন দেশেই হয়নি।

 

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নতুন কমিশনের উদ্যোগে গত জুন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার। বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মনে করেন, বাজারের গতি ধরে রাখতে হলে ভাল শেয়ারের পাশাপাশি নতুন পণ্য যুক্ত করতে হবে। এ জন্য দ্রুত বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করার কথাও বলেন কেউ কেউ। তাদের মতে, শুধু মূলধননির্ভর (ইক্যুইটি) বাজার দিয়ে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না। আবার ব্যাংকনির্ভর বা ব্যবসায়ীদের সাময়িক বিনিয়োগনির্ভর বাজারের ধারা থেকে বেরিয়ে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। পুঁজিবাজারের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারে আইন লঙ্ঘন করে কোন ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে হচ্ছে কিনা, সে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পাশাপাশি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিরসনে বন্ড মার্কেট কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে নতুন ও ভাল কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। চলতি মার্চে করোনা সংক্রমণের কারণে ভীত হয়ে বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে একদিনেই পুঁজিবাজারে বিগত আট বছরের বেশি সময়ের ব্যবধানে বাজারে সূচকের সর্বোচ্চ পতন ঘটে। বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় গত ১৯ মার্চ থেকে লেনদেন এক ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়। পুঁজিবাজার সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয় বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়পোযোগী সিদ্ধান্তে করোনাকালে পুঁজিবাজারে বড় পতন থেমেছিল।

 

একইসঙ্গে বর্তমান পুনর্গঠিত সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বহুমাত্রিক কার্যক্রমে পুঁজিবাজার নতুন করে সবার মাঝে আশার আলো জাগাচ্ছে। ২০২১ সালে পুঁজিবাজারের আলো আরও ছড়াবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রথমদিনের লেনদেনেই বোঝা যাচ্ছে চলতি বছর হবে পুঁজিবাজারের বছর। বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইপিও অনুমোদনের বৈচিত্র্য এসেছে। স্থানীয় ইলেক্ট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন ও মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার তালিকাভুক্তি বিনিয়োগকারীদের নতুন করে পুঁজিবাজারে সক্রিয় হতে উৎসাহিত করেছে। এই দুই কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও পুঁজিবাজারের চাঙ্গাভাব ডিএসইর বাজার মূলধনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। গত বুধবার দিন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ডিএসইর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৩২ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায় নেমেছিল। চলতি বছরে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ সমূহের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত দাঁড়ায় ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। মহামারীর মধ্যে লেনদেন পুনরায় শুরুর মাত্র তিন মাসেই চাঙ্গাভাব ফিরে আসে, যা বছরের অবশিষ্ট সময়েও অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। সরকারী উদ্যোগ ও বিএসইসির কিছু কার্যকরী পদক্ষেপে দশ বছর পর প্রাণ ফিরে পায় বাজার। তলানিতে নেমে যাওয়া পুঁজিবাজারে সহায়তা করতে ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনি।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর