কামরুজ্জামান কানু,জামালপুর:
সদর হাসপাতালসহ জামালপুরের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি সেবা ব্যতীত সকল সেবা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগী দেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জামালপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গত ২৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের ওপর বহিরাগতদের হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল ২৭ ডিসেম্বর, রবিবার থেকে চিকিৎসার সেবা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার ডাকে এই কর্মসূচিতে সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা থেকে বিরত রয়েছেন চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা কর্মবিরতি চলবে।
আজ ২৮ ডিসেম্বর, সোমবার সকাল ১১ টায় জামালপুর সদর হাসপাতালে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা সেবা নিতে এসে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এতে তাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
মেলান্দহ উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আব্দুর রহিম মিয়ার বলেন, ‘সকাল ১০টার সময় আমি হাসপাতালে আসি। পরে জানতে পারলাম, চিকিৎসা দেওয়া হবে না। চিকিৎসা সেবা বন্ধ। এখন আমি বেসরকারি হাসপাতালে যামু, কিন্তু সেখানেও নাকি ডাক্তার নাই। এখন কি করমু আমরা চিকিৎসা না পাইয়া মইরা যামু নাকি?’
গত ২৫ ডিসেম্বর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামালপুর শহরের ইকবালপুর এলাকার করিমন (৬৪) নামের এক নারী মারা যান। অবহেলাজনিত কারণে এমন মৃত্যু হয়েছে—অভিযোগ তুলে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে হামলা চালায়। এতে কর্তব্যরত ডা. চিরঞ্জীব সরকারসহ চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসক গুরুতর আহত হন।
এর জের ধরে ওই দিন হাসপাতাল এলাকায় বহিরাগত লোকজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সদরের ইউএইচএফপিও ডা. মো. লুৎফর রহমান হামলার দিন পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর আহত হন।
হামলার পরদিন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত শহিদুল ইসলাম (৪২) ও সাইদুর রহমান (৩৮) নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ।
ঘটনা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. শাহ আলম গতকাল রবিবার দুপুরে পরিদর্শনে এসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
CBALO/আপন ইসলাম