নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হার্ট অ্যাটাক: হৃদরোগ ব্যস্ত জীবন যাপনের কারণে অনেক সময় আমরা আমাদের শরীরের যত্ন নিতে অবহেলা করি। এছাড়াও, লোকেরা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি উপেক্ষা করে, কেও সেভাবে গুরুত্ব দেয় না। এই অবহেলার ফলাফল প্রায়ই মারাত্মক হয়। যদি আমাদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি ও প্রতিকার গুলো জানা থাকে তবে আমরা নিজেদের হার্ট অ্যাটাকের থেকে রক্ষা করতে পারি। এছাড়াও, এই সম্পর্কে লোককে সচেতন করে আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি। আমরা যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকি তবে তার লক্ষণগুলির ভিত্তিতে যে কোনও রোগ শুরুতেই ধরা যেতে পারে। একই সময়ে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেও রোগ সম্পূর্ণ সংশোধন করা যায়। সুস্থ হার্টের জন্য টিপস: আজকে আমরা আলোচনা করবো, হার্ট অ্যাটাকের থেকে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবেন।
হৃদযন্ত্র বিকল হতে থাকলে তার লক্ষণগুলি কি কি? হার্ট কে সুস্থ রাখতে গেলে আমাদের কি কি করণীয়? হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ শ্বাস নিতে সমস্যা, খাশি এবং জোরে শ্বাস নেওয়া, বিরক্ত বোধ বা মাথা ঘোরা, অস্বস্তি বোধ করা, শরীরে ঘাম, বমি বমি ভাব অনুভব করা, বুকে ব্যথা এবং চাপ অনুভব এবং হৃদয়ের মাঝে টান অনুভব করা। হাতের মতো শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা হওয়া, সাধারণত বাম হাতকে প্রভাবিত করে তবে উভয় হাতেই ব্যথা হতে পারে। যদিও হার্ট অ্যাটাকের কারণে প্রায়ই জোরে বুকে ব্যথা হয়, আবার কিছু লোক কেবল হালকা ব্যথার অভিযোগ করেন। কিছু ক্ষেত্রে, বুকে ব্যথা হয় না, তবে অন্যান্য লক্ষণগুলি দেখা যায়। বিশেষত মহিলা, বয়স্ক এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে। আপনি যদি কোনও ধরণের হৃদরোগের শিকার হতে না চান তবে এই প্রতিকারগুলি অনুসরণ করুন। এটি আপনাকে কেবল হৃদরোগ থেকে দূরে রাখবে না, আপনি সুস্থতাও বজায় রাখবেন। নিয়মিত শারিরিক পরিশ্রম করুণ: শারিরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম হার্ট সহ পুরো শরীরের জন্য উপকারী। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট ভারি ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করুণ, হতে পারে তা হাঁটা, দৌড়ানো অথবা সাঁতার। তবে হার্ট ভালো রাখতে হলে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন কিলোমিটার দৌঁড়ানোর উপদেশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন: অনেকের জন্য এটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তার সন্দেহ নেই।
আজ বললে আজই সিগারেট ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু চেষ্টা তো করাই যায়। প্রথমে সিগারেটের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করুণ। তারপর ছেড়ে দিন। এতে দেহে কোলেস্টেরলের মধ্যে সমতা থাকে। শুধু তাই নয়, হার্টবিট ও রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। শরীরের ওজন কমান আপনার শরীরের মাত্রারিক্ত ওজন হৃদয় বহন করতে পারবে না। তাই ওজন কমান। ওজন নিয়ন্ত্রণে আনুন। হার্টের সমস্যার সঙ্গে অন্য অনেক শারীরিক জটিলতাও দূর হবে। দূষিত বায়ু এড়িয়ে চলুন: আবহাওয়াবিদদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে দূষিত বায়ুর পরিমাণ বেড়েছে। সাধারণত বাতাসে থাকা অতিরিক্ত ধাতব পদার্থ নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে স্কন্ধদেশের ধমনিপ্রাচীরকে আরো পুরু করে তোলে, যে কারণে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই, সময় পেলে প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটান। কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং বেশি রক্তচাপ আমাদের হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই, কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার সবসময় মনিটর করুণ। যদি কোন সমস্যা হয় নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মুঠোর ব্যায়াম করুণ: টানা চার সপ্তাহের মুঠো সঞ্চালন-প্রসারণ ব্যায়ামও আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে। হাইপারটেনশন জার্নাল জানিয়েছে, এর মাধ্যমে আপনি রক্তের ঊর্ধ্বচাপ কমিয়ে আনতে পারেন প্রায় ১০ শতাংশ হারে।
ডিম খান: যাঁরা বলছেন, বেশি বেশি ডিম খেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ। কেননা, ব্রাজিলীয় গবেষকরা জানিয়েছেন, ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ই, বি-১২ এবং ফলেট করোনারি আর্টারিকে পরিষ্কার রাখে। তবে, কেউ যদি দিনে চারটি করে ডিম খেতে থাকেন, তবে তাঁকে এসব গবেষণার কথা ভুলে যেতে হবে। দিনে দুটি ডিম খাওয়া যেতেই পারে। শ্বাসের ব্যায়াম করুণ: নিজের ইচ্ছামতো গতিতে শ্বাস নিতে কিংবা ছাড়তে বলা হচ্ছে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন শ্বাসের ব্যায়াম করুণ। উদাহরণ হিসেবে, প্রথমে ৩০ সেকেন্ডে ছয়টি পূর্ণাঙ্গ শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পন্ন করুণ। এরপর সময়ের পরিমাণ কমাতে থাকুন। শ্বাস ধীরে ধীরে গ্রহণ করুণ ও ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এ ব্যায়াম আপনার হৃদ সংকোচনসংক্রান্ত চাপ কমাতে ধন্বন্তরি ভূমিকা রাখবে। সময়মতো ঘুমাতে যান: যাদের অনিদ্রা নামক রাজরোগ আছে, তারা অন্যদের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি হার্ট এটাকের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাই, প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমের জন্য প্রতিদিন বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রত্যহ ছয় থেকে আট ঘণ্টার নিদ্রা অবশ্য জরুরি। চর্বি যুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন: খাবারে থাকা চর্বি হৃৎপিণ্ডকে অকার্যকর করে তুলতে ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার ত্যাগ করুণ।
সুতরাং, খাদ্য তালিকা থেকে নিয়মিতভাবে চর্বির পরিমাণ কমাতে থাকুন, তবে অবশ্যই পুষ্টি তালিকার নিক্রম ছাড়িয়ে যাবেন না। এনার্জি ড্রিংকস বা কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করুণ: শক্তিবর্ধক এসব পানীয়কে ‘শত্রু’ হিসেবে গণ্য করুণ। কেননা, এসব পানীয় কোনোভাবেই আপনার কোনো ধরণের উপকারে আসবে না, উল্টো রক্তচাপ বাড়িয়ে মুহূর্তেই আপনাকে ধসিয়ে দেবে। চাপমুক্ত থাকুন: অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক চাপ এড়ানো এত সহজ নয়। তবে, এগুলোকে সামলাবেন কীভাবে সেটা তো শেখা যায়। যত রিল্যাক্স থাকবেন, শরীর তত চাপ নিয়ন্ত্রণ শিখবে। গবেষকরা বলেন, যেকোনো ধরনের ব্যায়াম চাপ দূর করে আপনাকে হালকা রাখতে সাহায্য করবে। চাপমুক্ত থাকতে যেটা আপনি পছন্দ করেন, এমন কোনো ব্যায়াম বেছে নিন। এ ছাড়া মেডিটেশন করুণ বা পছন্দের কিছু করুণ! যা চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খান: ছুটির দিনগুলোতে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে কিংবা অফিসে কাজের চাপে আমরা অনেক সময়ই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হার্ট ভালো রাখতে এগুলো খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত। এই অস্বাস্থ্যকর খাবার ক্যালোরি এবং কোলেস্টেরল বাড়াবে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করবে। আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখবেন।
নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন: আপনার যদি হার্টের সমস্যা থাকে বা আপনার বংশে যদি হার্টের সমস্যার ইতিহাস থাকে; তাহলে, এটাকে সিরিয়াসলি নিন। নিয়মিত আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিন । তার পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। ডাক্তারের কোন এপয়েন্টমেন্ট বাদ দিবেন না। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির (পিল, প্যাচেজ) ব্যবহার হার্টের ক্ষতি করতে পারে। তাই, এসব ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কম লবণ খান: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া মানুষের রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ রক্তচাপ মানুষের করনারি হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই, খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। আমরা এখন ফাস্টফুডে যে সমস্ত খাবার খাই এবং প্যাকেট জাতীয় যে সমস্ত খাবার খাই; যেমন: পিজ্জা, বার্গার, চিপস, টিনজাত খাবার ইত্যাদি এসব খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমানে লবণ থাকে। আমাদের কাঁচা লবণের পাশাপাশি এই ধরনের খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। ক্লান্তির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: যদি দেখা যায়, আপনি ঠিক মতো খেতে পারছেন না, ধূমপান বা মদ্য পান বেশি করছেন। তাহলে বুঝতে হবে, আপনার ভেতর অবসাদ কাজ করছে।
অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্য পান হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, অবসাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য যোগ ব্যায়াম বা ধ্যান বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচদিন যোগাসন করা অবশ্য প্রয়োজন। অতিরিক্ত চিন্তা থেকে দূরে থাকুন: দুশ্চিন্তা যেকোনো মানুষের সামাজিক জীবনের উপর যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে। এটি হার্টের জন্যও ক্ষতিকারক। কখনই চিন্তাকে মনে বাসা বাঁধতে দিবেন না। সব সময় মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন করুণ অথবা সুন্দর কোন গান শুনুন। মনে রাখবেন, আপনি যে চাপের মধ্যেই থাকুন না কেন; আপনি মানসিক ভাবে শক্ত না হলে, যেকোনো রোগ আপনার শরীরে জাঁকিয়ে বসবে। তাই, প্রথমেই ভয় না পেয়ে দুশ্চিন্তা থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে। সঠিক নিয়ম অনুসরণে আপনি অতি সহজেই জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আজকে যে সব পদ্ধতিগুলো দেওয়া হল, তা অনুসরণ করলে আপনি হার্ট অ্যাটাকের থেকে অতি সহজেই রক্ষা পাবেন, ইনশাআল্লাহ। মো. স্বপন হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।
CBALO/আপন ইসলাম