সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

যে ৫ নীতিবাক্য মুসলিম শিশুদের শেখানো জরুরি

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

মুসলিম শিশুরা ইসলামী আদর্শ ও ধর্মীয় চেতনা ধারণ করে বড় হবে এটাই স্বাভাবিক। ধর্মীয় মূল্যবোধের এই বীজ তার হৃদয়পটে গেঁথে দিতে হবে শিশুকালেই। এখানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ নীতিবাক্য বর্ণনা করা হলো—

 

১. যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা করা : যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা করার অর্থ হলো, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, রোগে-শোকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর দৃঢ়ভাবে ভরসা করা। সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। এটি মুমিন-মুত্তাকিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ‘যা-ই হোক, আল্লাহ ভরসা’—এমন অনুভূতি প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করতে শেখায়।

তবে সব কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার নাম আল্লাহর ওপর ভরসা নয়। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী বৈধ পথে কাজ করা এবং ফলাফলের বিষয়টি আল্লাহর কাছে ন্যস্ত করার নাম আল্লাহর ওপর ভরসা করা। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘…অতঃপর যখন তুমি কোনো কাজের দৃঢ় সংকল্প করবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনি তাদের ভালোবাসেন।’ সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি যথাযথ ভরসা করতে, তাহলে তিনি যেমন পক্ষিকুলকে রিজিক দান করেন, তেমনি তোমাদেরও রিজিক দান করতেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যাবেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

 

২. জীবনের সব ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শ ও মডেল হলেন মুহাম্মদ (সা.) : জীবনের সব ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শ ও মডেল হলেন মুহাম্মদ (সা.)—এই নীতিবাক্য সোনামণিসহ অভিভাবক, দায়িত্বশীল ও সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কথা, কর্ম ও সম্মতিমূলক আচরণের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা ও বাস্তব নমুনা প্রদর্শন করে গেছেন। তাই তাঁকেই একমাত্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত…।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)

 

৩. সৎ ও চরিত্রবান হতে হবে : পৃথিবীর বেশির ভাগ বস্তু অর্থের বিনিময়ে কেনা গেলেও চরিত্র কোনো কিছুর বিনিময়ে কেনা যায় না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কঠোর সাধনার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয় সচ্চরিত্র। চরিত্রের বলেই একজন মানুষ উত্তম হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। মা-বাবা, শিক্ষক-মুরব্বি ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতাবোধ, নিয়মিত সালাত আদায়, সত্যবাদিতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ওয়াদা পালন, আমানত রক্ষা, বিনয়-নম্রতা, ভদ্রতা, সৎ সাহস, বুদ্ধিমত্তা, অধ্যবসায়, পরোপকার ইত্যাদি গুণের সমন্বিত রূপই সচ্চরিত্র।

একজন সৎ ও চরিত্রবান ব্যক্তি পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যিনি চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমলের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে মুমিনের উত্তম চরিত্র।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)

৪. ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ : সন্তানের মনে সোনালি অক্ষরে এ কথা লিখে রাখতে হবে যে সব সময় ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে এবং অন্যায় প্রতিরোধ করতে হবে। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ। মুসলমানরা শ্রেষ্ঠ জাতি। আর এই শ্রেষ্ঠ জাতির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

 

৫. আদর্শ পরিবার গঠন এবং দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা : কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী পরিবার গড়ে তোলা এবং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও পরিবারকে সেই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে রয়েছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয় তা-ই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

মানুষের সেবা করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, মুসলিমকে সালাম দেওয়া এবং খাদ্য খাওয়ানোর প্রতি শিশুদের উৎসাহিত করা জরুরি। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজ সর্বোত্তম? জবাবে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তুমি অন্যকে খাদ্য খাওয়াবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮)

দেশ ও জাতির নিঃস্বার্থ সেবার প্রতিদান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত। এমনকি একটি বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার কারণে এক নারীর জাহান্নামে যাওয়ার কথা হাদিসে আছে। আর এক ব্যভিচারিণী এক তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে তাকে ক্ষমা করা হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ৩৩১৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সন্তানদের সোনার মানুষে পরিণত হওয়ার তাওফিক দান করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর