সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

ধর্ষকের বিবস্ত্র বাংলাদেশ – সাইদুর রহমান

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৩৯ অপরাহ্ণ

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করেনি, বিবস্ত্র করেছে রাষ্ট্রকে, বিবস্ত্র করেছে দেশের স্বাধীনতাকে, বিবস্ত্র করেছে লালসবুজ পতাকাকে, বিবস্ত্র করেছে বিচারবিভাগকে। স্বাধীন দেশ আজ ধর্ষকের অভয়ারণ্য। আমরা ধর্ষকের সহ অবস্হানে আর থাকতে চাই না। ধর্ষকের বিচারের দাবীতে রাজপথ আজ উত্তাল, সমস্ত মিডিয়া, পত্রিকা উত্তালের সাগরে ভাসতেছে। এরপর কিছু আশ্বাসের বাণী নিয়ে ঘরে ফিরবে সবাই, পত্রপত্রিকার কোথাও হয়তোবা স্হান পাবে না ধর্ষণের খবর। কিন্তু বিচার বিভাগ নিরুত্তর কেন? আমার নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ চাই। রাজপথে ধর্ষকের বিচার জন্য মিছিল আর দেখতে চাই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ধর্ষণের মধ্যে দিয়ে ধর্ষণকারীরা ফিতা কাটলো নতুন বছরের। সমাজের মানুষের নৈতিক অধঃপতন যদি এ ভাবে অপ্রত্যাশিত ভাবে বৃদ্ধি পায়, তাহলে সমাজে ইজ্জত- সম্মান অথবা সামাজিক নিরাপত্তা সবই অসম্মানের দুর্গন্ধে সমাজ, সংসার ঢেকে যাবে। নিরবে নিবৃত্তে আত্বচিৎকার করবে সমাজের লাঞ্ছিত মানুষ গুলো। যুগের তালে সমাজের অবক্ষয় অথবা সমাজের মানুষরূপী জানোয়ারদের অপকর্মের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে । ভিন্নতা আসছে ধর্ষণেও । ধর্ষণের ব্যাপকতা বা নতুন মাত্রা দিচ্ছে ধর্ষণকারী।ধর্ষণকারীরা এ সমাজ সংসারের অশুভ শক্তি। ধর্ষণের নিষ্ঠুরতাই আজ সমাজের সবচেয়ে বড় ক্ষত হিসাবে স্হান পাচ্ছে।

 

বৃদ্ধা অথবা চকলেট খাওয়া শিশু থেকে শুরু করে পাঁচ সন্তানের জননীও ধর্ষণকারী নামক সমাজের কীটগুলোর বিকৃত যৌন হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অথচ সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীদের অবদান প্রশংসনীয়। অগগ্রতিতে তাদের অবদান বড় ভূমিকা রাখলেও ঘরের মধ্যে নারীর অবস্থা তেমন বদলায়নি। ধর্ষণের দৌরাত্ম্যের দাবালনে বাংলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা আজ কম্পিত । মনে হচ্ছে সবুজ, শ্যামল, স্বাধীন দেশটা দিনে দিনে ধর্ষণকারীদের দাপটে অদৃশ্য হয়ে যাবে সমাজের মূল্যবোধ। পত্রিকা, মিডিয়া, কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ধর্ষণের প্রতিদিনের খবরে নতুনত্ব পরিলক্ষিত হয়। যারা অতিৎসাহী হয়ে ধর্ষিতার ছবি সহ খবর প্রকাশ করেন, তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ ” ধর্ষিতা নয়, ধর্ষকের ছবি প্রকাশে উৎসাহিত হই । ” মসজিদ, কওমি মাদ্রাসার কিছু আলেম নামের কলঙ্ক, তাদের অভিনব ফান্দে পরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা নিতে আসা মেয়েরা। এই আলেম নামক জালেমদের হাত থেকে মেয়ে অথবা ছেলে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। মেয়েরা হচ্ছে ধর্ষিতা আর ছেলেরা হচ্ছে বলৎকার । এই সব জালেম আলেমদের বিরুদ্ধে আলেম সমাজের মুখ খোলা উচিৎ।

 

সমাজ ধর্মীয় শিক্ষকদের কাছ থেকে ধর্ষণের মতো অধর্মীয় কাজ কোনদিন জাতি প্রত্যাশা করেনি। আবার গতানুগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও ধর্ষণে পিছিয়ে নেই। শিক্ষাকে যারা ধর্ষণের টোপ হিসাবে ব্যবহার করে তাদের বিচার রাষ্ট্রীয় আইনের বাইরে এসে করতে হবে। প্রতিটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বাক্স রাখতে হবে। বেজাতদের( ধর্ষণকারী) আচরণে জাতি আজ হতবম্ব,কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেছে। প্রশাসন বা রাষ্ট্র যদি মনে করে, “বেজাতরা ” ভিন্ন গ্রহ থেকে গ্রহান্নিত হয়েছে। এটা হবে জাতির জন্য হতাশা ব্যঞ্জক । বেজাতরা যুগে যুগে ছিল। হয়তো বা তাদের দেহ থেকে এখন অতি বেগুনী রশ্মি নিঃসরন হচ্ছে বেশী। এই নিঃসরনে নারীকুল মাঠে, ময়দানে, বাসে, ট্রাকে, ট্রেনে এমন কি মসজিদ, মাদ্রাসায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা সিঁধকেটে কিংবা ঘরের দরজা ভেঙ্গে গণধর্ষণ মহাসমারোহে চলতেছে। বেজাতরা নিজের মেয়েকে পর্যন্ত ধর্ষণ করতে বিবেকে বাঁধেনা। বেজাতদেরকে আমরা পুরুষজাত থেকে ধিক্কারের সাথে বিতাড়িত করে দিতে চাই । বেজাতরা পুরুষ স্বরূপে দৃশ্যমান হতে পারবে না।কারন তাদের বক্ষ বিদির্ণ করে ” বেজাত ” চিহ্ন এঁকে দিব। এই বেজাতদের কোন দল, ধর্ম, বর্ণ, জাত, গোষ্ঠী মা, বোন নেই। সবাই আজ এদের কন্ঠনালি ছিন্ন করে, কন্ঠরোধ করতে বদ্ধ পরিকর।

 

ধর্ষকের বিকৃত যৌন আচারণে আমাদের নারী সমাজ আজ আতংকিত । ওরা সমাজের মারাত্মক ব্যধি ।ওদের বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ওদের অশুভ লম্বা অংশটুকু কুকুরের খাবারে শুভা পায়। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ শুধু রাষ্ট্রীয় ভাবে একা প্রতিরোধ করা সম্বব না। ধর্ষণের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রকে বের হয়ে আসতে হবে। আইন থাকলে কি হবে? যদি আইনের সঠিক প্রযোগ না থাকে। ধর্ষণের জন্য আইন এখন অনেক শক্তিশালী কিন্তু বিচারহীনতার জালে আবদ্ধ আইনের ধারা। তাই শুধু আইন দিয়ে সমাজকে ধর্ষণ মুক্ত করা সম্ভব নয় । সমাজের প্রতিটি মানুষের সাহায্য ও সহযোগীতা একান্ত দরকার।পাশাপাশি সামাজিক বিচার সালিশে ন্যায় বিচার অতন্ত্য জরুরী। ধর্ষণ রোধে আইনের সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি চাই জড়ালো সামাজিক আন্দোলন। বর্তমানে সারা দেশে ২০ হাজারেরও বেশী ধর্ষণের মামলা বিচারাধীন। এই সব মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। ধর্ষণকারীকে মানসিক ভাবে চাপে রাখার জন্য সমাজচ্যুত করা অতিজরুরী। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করে, ধর্ষণ প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে।

 

ধর্ষণকারির পরকালে কি রকম শাস্তি হতে পারে, তার বর্ননা মসজিদ, মন্দির, গির্জায় দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী একজন ধর্ষকের কি বিচার হতে পারে, তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তরভুক্ত করাতে হবে। বিদেশী সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন প্রকার অশ্লীল ছবি প্রদর্শন যাতে করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নারীকে বিভিন্ন আত্বরক্ষা মূলক কৌশল শিখতে হবে। নারীকে মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে ব্যবহারে সাবধানী হতে হবে। ধর্ষণের রাষ্ট্রীয় আইনের যথার্থ প্রয়োগ করতে হবে। ধর্ষণের বিচারের চেয়ে ধর্ষণ প্রতিরোধ অতিজরুরী। প্রকাশিত ধর্ষিতাকে সমাজ কলঙ্কের দায়মুক্তি সহজে দেয় না। পরবর্তী প্রজন্মান্তরও এর দায়ভার এড়াতে পারেনা। ধর্ষণের পর ধর্ষিতা ও ধর্ষিতার পরিবারের সামাজিক অবস্হা মাটিতে মিশে যায়। সমাজের কেউ তাদেরকে প্রকাশ্যে ঘৃণার বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখায়, কেউ আবার ধর্ষিতার পরিবারেকে সমাজচ্যুত করার জন্য চক্রান্তের জাল বিস্তার করে।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর