বেলাল হোসাইন,খাগড়াছড়ি:
অপহরণের ৩দিন পরও উদ্ধার হয়নি খাগড়াছড়ির রামগড়ের যৌথ খামার এলাকায় গত রবিবার (২৩ আগস্ট)অস্ত্রের মুখে অপহৃত হওয়া বেসরকারি কোম্পানি জুয়েল ট্রেডার্সের বিপণন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম (৩৫) ও কর্মচারী রাজু মিয়া(২৭)। এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ( প্রসীত গ্রুপ) জড়িত বলে জানায় রামগড় থানা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,ফেনী হতে খাগড়াছড়ি গামী পিকাপ গাড়ি (ফেনী-ন১১-১৪১) জুয়েল ট্রেডার্স এর প্লাস্টিকের পণ্য নিয়ে রামগড়ের
যৌথখামার নামক স্থানে পৌঁছালে ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের ৫ জনের একটি দল ২টি মোটর সাইকেলে করে এসে পিলাক ঘাট এলাকার পোস্ট
কমান্ডারের নেতৃত্বে এ অপহরণের ঘটনা ঘটায়।অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা গাড়িতে অবস্থানরত সবাইকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় এবং কিছুক্ষন পরে
সন্ত্রাসীরা গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে ছেড়ে দিয়ে বিপণন কর্মকর্তা মো:মনজুরুল আলম ও মিস্ত্রি রাজু মিয়া কে অস্ত্রের মুখে মোটরসাইকেলে বসিয়ে বৌদ্ধ পাড়ার দিকে নিয়ে যায়।অপহৃত মো:মনজুরুল আলম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার সাইদুল হকের ছেলে এবং মিস্ত্রি রাজু মিয়া নোয়াখালী সুধারাম থানার বাসিন্দা।সন্ত্রাসীরা গাড়ির চাবি রেখে দিলেও পুলিশ গিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করে রামগড় থানায় নিয়ে আসে।
জুয়েল ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী ফেনী মাস্টারপাড়ার ধর্মপুরের বাসিন্দা মেহেদী হাসান জুয়েল জানান,কয়েক মাস পূর্বে ইউপিডিএফে(প্রসীত খীসা)গ্রুপ তার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তখন তিনি নিরাপত্তার কথা চিন্তাকরে এককালীন তাদের ২৩ হাজার টাকা প্রদান করেন।বাকি টাকা তার কাছে চাওয়া হয়নি আর তাদের পক্ষ থেকে।গাড়ির চালক মিজানুর রহমান থেকে অপহরণের খবর শুনে তিনি বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।পুলিশকে অবহিত করার কারণে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে ক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদার টাকাও লাগবেনা আর তার কর্মচারীদের ও ছাড়বেনা বলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকেন।।গতকাল সোমবার পর্যন্ত অপহরণকারীদের সাথে তার ফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে তার সাথে আর কোন ধরনের যোগাযোগ করেনি অপহরণকারীরা।প্রশাসন কে বিভ্রান্ত করতে ইউপিডিএফের সজল নামের এক ব্যক্তি তার সাথে যোগাযোগ করে কর্মচারীদের ছেড়ে দিয়েছে বলে প্রশাসনকে মিথ্যে তথ্য দিচ্ছে। তিনি তাদের জীবন নিয়ে শংকায় আছেন বলে জানান।তিনি আরো জানান,অপহৃত মোহাম্মদ মনজুরুল আলমের মা তার অপহরণের খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।তিনি তাদের মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
গত ৩দিনেও অপহৃতদের উদ্ধার করতে না পারার বিষয়ে উদ্ধেগ জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলকাছ আল মামুন ভূইয়া অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এবং ঘটনার জন্য পাহাড়ে অবস্থানরত সশস্ত্র উপজাতি সংগঠন গুলোকে দায়ী করেন।
তিনি দাবী করেন, কিছুদিন আগে বাবুছড়াতে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো একের পর এক হত্যাকান্ড এবং অপহরণের সাহস পাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে এসব হত্যাকান্ড এবং অপহরণে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার দাবি করেন।এদিকে পার্বত্যচট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের রামগড় শাখার সমন্বয়ক মোহাম্মদ ইউনুস এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন।৪৮ঘন্টার মাঝে অপহৃত দের উদ্ধার করা নাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করবে বলে জানান তার দল।
অপহৃতদের উদ্ধারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শামসুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ
ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী গাড়ির চালক মিজানুর রহমান সোমবার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।তিনি আরো জানান,অপহরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে অবস্থান করে উদ্ধারের তৎপরতা চালালেও অপহৃতদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপ জড়িত বলে তিনি জানান।অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ এখনো জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।