শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

ই-পেপার

শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিতে সংহতি জানালো সেসিপ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত  রিসোর্স শিক্ষকরা

ডা.এম.এ.মান্নান,স্টাফ রিপোর্টার:
আপডেট সময়: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৩৭ অপরাহ্ণ

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট এর আহবানে আয়োজিত শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সেসিপ প্রকল্পের রিসোর্স শিক্ষকবৃন্দ।
সোমবার দুপুর ১২ ঘটিকায় রিসোর্স শিক্ষক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন, সিনিয়র সভাপতি আলম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোঃ বরকত উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক তরিকুর রহমান ও নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম মঞ্জু সহ বিভিন্ন উপজেলার ২০-২৫ জনের রিসোর্স শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের ২০% বাড়িভাড়া ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
“শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে ন্যায্য দাবি মানতে হবে” স্লোগান বেষ্টিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে অবস্থান করেন রিসোর্স শিক্ষকরা পাশাপাশি এমপি ভুক্ত শিক্ষকদের কে বিশুদ্ধ পানি ও বয়স্ক শিক্ষকদের জন্য ডাব সরবরাহ করেন। এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে নিজেরা এর সুবিধাভোগী হবেন না সত্বেও এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা ও শিক্ষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধতা থেকে সবসময় শিক্ষকদের পাশে থাকবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
শিক্ষকরা বলেন দেশের ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেন অথচ এই এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকরা মানবতার জীবন যাপন করেন। যে দেশে মেট্রোরেল, চার-লেন সড়ক, কর্ণফুলী টানেল ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো শতশত মেগা প্রজেক্ট চালু থাকে সে দেশের মাধ্যমিক সেক্টরের একজন সহকারি শিক্ষক চাকরিতে প্রবেশ করে বেতন পান ১২ হাজার ৭৫০ টাকা।এরকম দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্য কোন দেশে আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যায় নেপাল ও ভুটান এর মতো দেশের চেয়েও বাংলাদেশের শিক্ষকরা বেতন কম পান। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার অথচ বাংলাদেশের মাধ্যমিক সেক্টরের একজন সহকারী শিক্ষকের মাসিক বেতন হচ্ছে ১০৪ ডলারের কাছাকাছি।যা দেশের অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব বা শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের অনীহার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
রিসোর্স শিক্ষকরা উল্লেখ করেন বর্তমানে শিক্ষা সেক্টরে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মেধাবীদের এই পেশায় যুক্ত করা ও শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করা। শিক্ষকদের যে বেতন কাঠামো তাতে মেধাবীরা এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কারিকুলাম প্রণয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গুলোও ব্যর্থ হবে।
২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক তাদের নিজ উপজেলার বাইরে এমনকি নিজ বাড়ি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। তারা এতটাই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন যে প্রধান ধর্মীয় উৎসবেও আর্থিক কারণে নিজ বাড়িতে আসতে পারেন না ও পরিবারের খোঁজ নিতে পারেন না। একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ হল শিক্ষার্থীদের কে অনুপ্রাণিত করা। শিক্ষক হচ্ছেন একজন মডেল। একজন শিক্ষকের রুচিবোধ,পোষাক ও শারীরিক ভাষায় যদি দারিদ্রতার প্রকাশ ঘটে তাহলে তিনি কোনোভাবেই তার মূল কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন না পাশাপাশি তিনি সমাজ, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের কাছে নিগৃহের শিকার হবেন। তাই শিক্ষকদের এই ন্যায্য তিন দফা দাবি কে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নাই এবং শিক্ষকদেরকে রক্ষায় রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।
রিসোর্স শিক্ষকরা আরো উল্লেখ করেন বর্তমানে আমরা সৌভাগ্যবান যে দীর্ঘদিন পরে হলেও আমরা এমন একজন শিক্ষা উপদেষ্টা পেয়েছি যিনি শিক্ষকতা পেশাকে হৃদয়ে ধারণ করেন। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী, বিনয়ী, ভদ্র, মার্জিত ও রুচিশীল ব্যক্তি। এরকম শিক্ষক বান্ধব একজন উপদেষ্টার মাধ্যমে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতেও যে হবে না তা শিক্ষক সম্প্রদায় মনে প্রানে বিশ্বাস করে তাই দল-মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষক নেতাদেরকে একত্রিত করে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি গুলো শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে উপস্থাপন করতে হবে তবেই কাঙ্খিত সফলতা অর্জিত হবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের দাবি আদায়ে অন্য শিক্ষক নেতাদের অবদানগুলোকে কোনভাবেই ছোট করে দেখা উচিত নয়।
যেকোনো উপায়েই হোক না কেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি গুলো মেনে নেওয়ার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন রিসোর্স শিক্ষকরা।
বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী যখন কোন ব্যক্তি ২. ১৫ ডলারের কমে দৈনিক জীবন যাপন করে তখন তাকে চরম দারিদ্র্যসীমা বলে। মাধ্যমিকের একজন সহকারী শিক্ষকের পরিবারের লোক সংখ্যা যদি চারজন হয় তাহলে প্রয়োজন হয় প্রায় ৯ ডলার অর্থাৎ মাসে ৩৬০ ডলার কিন্তু একজন সহকারী শিক্ষক বেতন পান মাত্র মাসে ১o৪ ডলারের কাছাকাছি। তার পরিবারের জন্য জনপ্রতি তিনি দৈনিক এক ডলারেরও কম খরচ করে চরম দারিদ্র সীমারও অনেক নিচে বসবাস করেন আর এই শিক্ষকদের হতাশাগ্রস্ত করে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি ৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কিনা প্রশ্ন থেকে যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর