টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বাবনা পাড়া গ্রামের এক মর্মস্পর্শী মানবিক গল্পের নাম মোছা. রুমা আক্তার। বয়স মাত্র ২৮, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা যখন পরিবার, সন্তান আর স্বপ্ন নিয়ে কাটার কথা, তখন তিনি লড়ছেন ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ একটি রোগের বিরুদ্ধে। গত দুই বছর ধরে তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। তার পাশে নেই স্বামী, নেই চিকিৎসার অর্থ, নেই কোনো নিশ্চয়তা- আছে শুধু বাঁচার আকুতি।
রুমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা বেঁচে থাকলেও তিনিও দরিদ্র ও অসহায়। তার স্বামী মো. ইনছান আলী, একজন রিকশাচালক, থাকেন গাজীপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী ও সন্তানকে খোঁজখবর নেওয়া তো দূরের কথা, কোনো আর্থিক সহায়তাও করছেন না। রুমার একমাত্র সন্তান ২ বছরের মেয়ে, মায়ের চোখে অশ্রু দেখে কিছু না বুঝেও প্রতিদিন ভয় আর অনিশ্চয়তায় কাটায়।
রুমার দেখাশোনা এখন তার মামা আব্দুল আলিম করছেন। তিনি নিজেও অত্যন্ত দরিদ্র। দিনমজুরির আয় দিয়ে নিজের সংসারই চালানো কঠিন। চিকিৎসকদের মতে, রুমার উন্নত চিকিৎসা করাতে হলে প্রয়োজন অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এত টাকা জোগাড় করা এই পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু চিকিৎসা ছাড়া রুমার জীবনও থেমে যেতে বসেছে।
এই অসহায় পরিস্থিতিতে নাগরপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামী মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। রবিবার(১৯ অক্টোবর ২০২৫) বিকালে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী কার্যালয়ে এক দোয়া অনুষ্ঠানে মোছা. রুমা আক্তারকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, মানবতার সেবা ইসলামের শিক্ষা। জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই সমাজের অবহেলিত, অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে। রুমার মতো একজন মা যখন চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর মুখে, তখন আমাদের দায়িত্ব তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। সমাজের হৃদয়বান, বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান- আসুন, রুমার পাশে দাঁড়াই।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুস সালাম, সহ সেক্রেটারি হাফেজ আজিম উদ্দিন, উপজেলা যুব জামায়াতের সভাপতি ডা. এম. এ. মান্নান, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ হারুন এবং মামুদনগর ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি হাফেজ মাসুদ হাসান।
চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমা আক্তার বলেন, আমি খুব কষ্টে আছি। টাকা নেই, চিকিৎসা নেই। কিন্তু আমি মরতে চাই না। আমার মেয়েটাকে বড় করতে চাই। যারা আমাকে সাহায্য করেছেন, আমি তাদের জন্য দোয়া করি।
তার মামা আব্দুল আলিম বলেন,নিজের সংসার চালানোই কঠিন। ভাগ্নির চিকিৎসার খরচ তো কল্পনার বাইরে। জামায়াতের এই সহায়তা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ভরসা।সকলেই আমার ভাগ্নির জন্য দোয়া করবেন।
আসুন, একটি জীবন বাঁচাতে আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে আসি।আল্লাহ তাআলা যেন রুমাকে দ্রুত শেফা দান করেন,আমিন।