মানুষের সম্মান, মর্যাদা ও সুনাম রক্ষা করা ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। ইসলাম এমন এক জীবনব্যবস্থা, যা কেবল ইবাদত নয়—সমাজে ন্যায়, সত্য ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়। তাই ইসলাম মিথ্যা অপবাদ বা কারও বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“যে ব্যক্তি কোনো শালীন নারীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ তোলে অথচ চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তবে তাদের আশি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ করো না; তারাই পাপী।”
সূরা আন-নূর, আয়াত ৪)
এই আয়াত শুধু নারীর ব্যাপারে নয়—সমাজে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ বা অপবাদ রটানোর ভয়াবহ পরিণতি বোঝায়। মিথ্যা অপবাদ মানুষের চরিত্রহানি ঘটায়, সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে, এবং নিরপরাধ মানুষকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে ফেলে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা মিথ্যা অভিযোগ তোলে, সে জাহান্নামের আগুনে স্থান লাভ করবে।”
সহিহ মুসলিম)
অপবাদ কেবল কথার অপরাধ নয়, এটি হৃদয়ের পচন। মিথ্যা অপবাদ মানুষকে সমাজচ্যুত করে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং ন্যায়বিচারের ভিত নষ্ট করে দেয়। তাই ইসলাম এমন অপরাধীর প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
আজকের সমাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা জনসমক্ষে কারও বিরুদ্ধে যাচাই ছাড়া অপবাদ দেওয়া ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অথচ ইসলাম শিক্ষা দেয়—“তুমি যা শুনবে, তা যাচাই করো; অন্যথায় তুমি অজ্ঞতার কারণে কোনো জাতিকে ক্ষতি করতে পারো।” (সূরা আল-হুজরাত, আয়াত ৬)
মিথ্যা অপবাদ প্রদানকারীর শাস্তি শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও ভয়াবহ। আল্লাহ তায়ালা বিচার দিবসে প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অভিযোগের হিসাব নেবেন। সেদিন জবান, হাত, এমনকি দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সাক্ষ্য দেবে—কে কার সম্মান নষ্ট করেছে।
মিথ্যা অপবাদ কোনো সাধারণ ভুল নয়; এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক মারাত্মক রূপ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি পাপ, ন্যায়বিচারের পরিপন্থী, এবং সমাজ ধ্বংসের কারণ। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত জবানকে সংযত রাখা, সত্য যাচাই করে কথা বলা, ও মানুষের সম্মান রক্ষা করা।