ইসলাম ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবাধিকারের ধর্ম। কোরআন ও হাদিসে বহুবার স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—কোনো মানুষকে অবিচার বা জুলুমের শিকার করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন—
“তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর; তা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধেও হোক না কেন।” (সূরা আন-নিসা: ১৩৫)
অতএব, অন্যায়ভাবে কাউকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া, কিংবা জোরপূর্বক পদচ্যুত করা একপ্রকার জুলুম এবং বিশ্বাসঘাতকতা। কারণ দায়িত্ব (আমানত) আল্লাহর নিকট থেকে অর্পিত। কেবলমাত্র অযোগ্যতা, গাফেলতি বা বিশ্বাসভঙ্গের প্রমাণিত কারণে কাউকে পদ থেকে অপসারণ করা যেতে পারে। পক্ষপাতিত্ব, হিংসা, প্রতিশোধ বা রাজনৈতিক স্বার্থে কাউকে সরানো সম্পূর্ণরূপে ইসলামী নীতির পরিপন্থী।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেনঃ
“যে ব্যক্তি কোনো আমানতের দায়িত্বে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম)
এমনকি কারো উপর দায়িত্ব অর্পণ করার পর জোরপূর্বক তাকে সরিয়ে দেওয়া শুধু ব্যক্তির প্রতি নয়, গোটা সমাজের প্রতি অবিচার। এতে আস্থা নষ্ট হয়, সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে এবং দায়িত্বশীলতার জায়গায় ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
ইসলামের মূলনীতি হলো—
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: প্রতিটি পদক্ষেপ প্রমাণ ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে হবে।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ ধরা: শুধু গুজব, অপবাদ বা হিংসা থেকে কাউকে পদচ্যুত করা যাবে না।
আমানতের মর্যাদা রক্ষা: যে পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তা একটি আমানত; অযথা অপসারণ করা আমানতের খেয়ানত।
আজকের সমাজে আমরা দেখছি—প্রতিষ্ঠানে, সংগঠনে বা রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক যোগ্য মানুষকে জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এটি ইসলামি নীতির পরিপন্থী, বরং আল্লাহর গজব ডেকে আনে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
“জুলুমকারীরা কখনো সফল হয় না।” (সূরা আল-আনআম: ২১)
পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি সত্যিই অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে ইসলাম তাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে অপসারণ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থ, হিংসা বা ক্ষমতার দাপটে কাউকে বরখাস্ত করা গুনাহে কবিরাহ এবং কিয়ামতের দিন কঠিন জবাবদিহির কারণ হবে।