পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হলো শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা। চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই মেলায় ধর্মীয় রীতি, লোকজ সংস্কৃতি আর মানুষের মিলন যেন এক অপূর্ব সুর সৃষ্টি করেছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর থেকেই মানুষের ঢল নামে মেলা প্রাঙ্গণে। মাঠজুড়ে বসে নানা পসরা, মাটির তৈরি খেলনা, কাঠের কারুকাজ, খাবারের স্টল, বাউল সংগীত ও নাগরদোলা। তবে মূল আকর্ষণ ছিল চড়ক গাছে ঝাঁপদান, যেটি এই মেলার কেন্দ্রীয় ধর্মীয় আচার।
স্থানীয় সন্ন্যাসীরা দিনের শুরুতেই কঠোর উপবাস ও পূজা-অর্চনায় অংশ নেন। এদিন তাঁরা শরীরে কাঁটা ফুটিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ধ্যান করেন এবং চড়ক গাছে ঝাঁপ দেন ঈশ্বরের সন্তুষ্টির আশায়। দিন গড়াতেই মেলা মাঠে জমে ওঠে গ্রামীণ উৎসব। সন্ধ্যায় চড়ক ঝাঁপ শুরু হলে দর্শনার্থীদের মুখে বিস্ময় ও ভক্তির ছাপ পড়ে। ধূপের ধোঁয়া, ঢাকের তালে তালে তৈরি হয় এক ধর্মীয় আবহ। লোকসংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে অষ্টমনিষার এই চড়ক মেলা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় এটি এখন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অংশ।
চড়ক পূজার পুরোহিত শ্রী মানিক নারায়ণ রায় চৌধুরী বলেন, “চড়ক হলো ত্যাগ আর ভক্তির উৎসব। এই ঝাঁপদানের মাধ্যমে ভক্তরা তাঁদের মানত রক্ষা করেন। এটি কোনো কুসংস্কার নয় বরং এক গভীর আত্মনিবেদনের প্রকাশ।”
স্থানীয় দর্শনার্থী শ্রী স্বপ্না রাণী পাল বলেন, এই মেলা শুধু ধর্ম নয়, আমাদের আনন্দেরও অংশ। এই মেলার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক গুরুত্ব অনেক।
চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ভবেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দিকে আমরা খুব সতর্ক ছিলাম। দর্শনার্থীরা যাতে নির্ভয়ে ধর্মীয় আচার ও আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সে দিকে আমরা নজর রেখে ছিলাম। তিনি আরো বলেন, মানুষের ভক্তি আর ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসাই অষ্টমনিষা ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা টিকিয়ে রেখেছে।”