পাবনার চাটমোহর উপজেলা বোঁথর গ্রামে উপমহাদেশের বিখ্যাত মহাদেব ও চড়ক পূজা সহ মেলা শুরু হয়েছে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে চড়ক গাছ উত্তোলন ও প্রতিমা আসনে বসার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে মেলা, তিনদিন পর্যন্ত চলবে। এই চড়ক পূজা ও মেলায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য হিন্দুর সমাগম ঘটে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন উপজেলার বড়াল নদের তীরের বোঁথর গ্রামটি হয়ে ওঠেছে তীর্থ ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে। সিন্ধু সভ্যতা থেকেই চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে এই চড়ক পূজা ও মেলা হয়ে আসছে। আবার অনেকে বলছেন, এ পূজার প্রচলন হয় বান রাজার আমল থেকে।
অনেকের ধারণা প্রায় পাঁচশত বছর ধরে চলছে এই পূজা ও মেলা। মূলতঃ চৈত্র’র ২২ তারিখে সন্ধ্যায় পাঠ ঠাকুরের পাটে ধূপ দিয়ে শুরু হয় পূজার প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা। বোঁথর শিব মন্দির থেকে পাঠ ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি বাড়ি। ২৬ ও ২৭ চৈত্র ফুল ভাঙ্গা ও কালি নাচ শুরু হয়। তারপর প্রতিমা আসনে বসে। মেলা শুরু হয় চৈত্র মাসের শেষের দিন ও বৈশাখের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন।
আগে মেলা হতো মাসব্যাপী। এখন হয় তিন দিন। চৈত্র সংক্রান্তির সন্ধ্যায় (সরকারি পঞ্জিকা মতে পহেলা বৈশাখ) প্রায় ১৩ হাত লম্বা চড়ক গাছ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোরানো হয়। এর আগে পূজারীরা ফুল, দুধ ও চিনি দিয়ে চড়ক গাছে পূজা দেয়। মহাদেব মন্দিরের চালে বাতাসা ছিটায় মঙ্গলার্থে। চড়ক পূজা উপলক্ষে মহাদেব আসনে তোলা হয় ২৮ চৈত্র আর ৭ বৈশাখ নামানো হয়। ১৩ জন প্রধান বৃত্তাকে ৬ দিন উপবাস থাকতে হয়।
বোঁথড় মহাদেব মন্দিও মেলা কমিটির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা জানান, পূজা উপলক্ষ্যে আমাদের এলাকায় উৎসবের আমেজ চলছে। দেশ-বিদেশের অনেক ভক্ত এ মেলায় আসেন। মনের বাসনা পূরণার্থে অনেক ভক্ত মানত করে থাকেন। কেউ পাঁঠাবলি দেন, কবুতর উৎসর্গ করেন, আবার কেউ বা পূজার অর্ঘ্য সাজানো ভরণ চালুন দেন।
চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অশোক চক্রবর্তী জানান, চাটমোহর পৌর শহর সংলগ্ন বড়াল নদের উত্তর পাড়ের আদর্শ একটি গ্রাম বোঁথর। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে উৎসবমূখর হয়ে ওঠে গ্রামটি। দেশ-বিদেশের আত্মীয়-স্বজন আসে এই মেলায়। এক সময় চলনবিল অঞ্চলের সকল নতুন-পুরাতন জামাইকে আনতে হতো মেলা উপলক্ষে। সকল পণ্যই মিলতো এই মেলায়। হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির ক্ষেত্র ছিল এই মেলা। সে সব এখন ইতিহাস। পাঁচশত বছরের বোঁথর চড়ক পূজা ও মেলার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ঠিক আছে, শুধু কমেছে মেলার জৌলুস।