পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার টংগঝিরি পাড়ায় বড়দিন উপলক্ষে গীর্জায় প্রার্থনা করতে গেলে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৭টি বসতঘর। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে।
অগ্নিকান্ডের পর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা নামে একজন ব্যক্তি লামা থানায় ৭জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। পরে রাতেই পুলিশ লামার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত মামলার ৪জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০), মইশৈ ম্যা ত্রিপুরা (৪৮), টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা জোয়াতিং ত্রিপুরা (৫২) এবং টংগঝিরি পাড়ায় বাসিন্দা মো.ইব্রাহিম (৬৫)। তাদের আদালতে প্রেরণের কাজ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বান্দরবানের লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহাদাৎ হোসেন জানান, ঘটনার পর লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ার গঙ্গাং মনি ত্রিপুরা মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করে।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোছাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী জানান, লামার ঘটনায় এই পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি আরো জানান, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কয়েক পরিবার নতুন ভাবে বসতী করে ওই এলাকায় বসবাস শুরু করায় তাদের মধ্যে দ্বন্ধে এই ঘটনা হয়েছে বলে ধারনা করছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গত তিন মাস পূর্বে লামা উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার উপজেলার সরই ইউনিয়নের পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় বসতি শুরু করেন। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গীর্জায় প্রার্থনা করতে যায়, এই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা পাড়ার কাঁচাঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়, এতে ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এদিকে এই ঘটনার পর ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
পাড়ার বাসিন্দা গুংগা মনি ত্রিপুরা জানান, গত ১৯ নভেম্বর স্টিফেন ত্রিপুরা সহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবৎ অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন, অর্থ না দিলে পাড়াবাসীকে হুমকিও দেন। এ প্রেক্ষিতে আমরা হুমকি দাতাদের বিরুদ্ধে লামা থানায় মামলা করি।
পার্বত্য উপদেষ্টার নিন্দা :
বান্দরবানের লামায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী গুন্ডাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, বান্দরবান গোয়েন্দা সংস্থা ইঙ্গিত দিয়েছে, পলাতক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সন্দেহভাজন গুন্ডা জায়গা দখলের নামে এই জঘন্য হামলা চালিয়েছে। বান্দরবান জেলা কর্তৃপক্ষ ইতঃমধ্যে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর পুনর্নিমাণের জন্য সব ধরনের সহায়তা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আরও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও এ সংক্রান্ত আরও সহায়তা প্রদান করা হবে।