ফাঁদ দিয়ে বক শিকার করে বস্তায় ভরে বিক্রির জন্য যাচ্ছিলেন দুই পাখি শিকারী। সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন সাংবাদিক। তাদের পথ আটকে পাখি শিকারের আইন সম্পর্কে শিকারীদের বোঝান ওই সাংবাদিক। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাদের শিকার করা ৪০টি বক মুক্ত করে দেন।
শিকারীর ফাঁদে আটক হওয়া বকগুলো ডানা ঝাঁপটে উড়ে যায় মুক্ত আকাশে। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা বকগুলো ফিরে পায় নতুন জীবন। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল নয়টার দিকে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পেশাদার দুই পাখি শিকারী হলেন, চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ আলী (৩৮) এবং নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা গ্রামের অসিম প্রামানিক (৩৬)।
পাখি প্রেমী সাংবাদিক হলেন- দৈনিক কালবেলা ও দ্যা বাংলাদেশ পোস্ট পত্রিকার চাটমোহর উপজেলা প্রতিনিধি ইকবাল কবীর রঞ্জু। তিনি মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক।
মঙ্গলবার সকাল নয়টা। কলেজে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক শিক্ষক ইকবাল কবির রঞ্জু। চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের ধানকুনিয়া এলাকায় পৌঁছালে দু’জন পাখি শিকারীকে দেখতে পান তিনি। রাস্তার পাশে দাঁড় করানো তাদের ভ্যান গাড়িতে বক ধরার সরঞ্জাম ও মুখ বাধা দু’টি পাটের বস্তার ভিতরে নড়াচড়া দেখেই সন্দেহ হয় সাংবাদিক রঞ্জু’র।
তখন তিনি শিকারীদের সাথে কথা বলেন। তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে চাটমোহরের বিভিন্ন বিলে ফাঁদ পেতে বক ধরছিলেন তারা। মঙ্গলবার ভোরে বক ধরতে আসেন চাটমোহরের বোয়াইলমারী বিলে। ফাঁদ পেতে ভোর থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ধরে ফেলেন ৪০টি বক। ক্রেতা পেলে কিছু বক বিক্রি করেন, কিছু বক নিজেরা খান। প্রতিটি বক একশ’ টাকা বা তার কিছু কম বেশি দামে বিক্রি করেন তারা। বকের মাংস খুব সুস্বাদু বলেও জানান শিকারীরা।
এরপর বক ধরার ক্ষতিকর প্রভাব ও পাখি শিকারের আইন সম্পর্কে তাদের বোঝাতে সক্ষম হন সাংবাদিক রঞ্জু। শিকারীরা আর বক ধরবেন না বলে জানান। এক পর্যায়ে নিজেদের শিকার করা দু’টি বস্তার মুখ খুলে ৪০টি বক উড়িয়ে দেন মুক্ত আকাশে। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় বক পাখি গুলো।
চাটমোহরে কর্মরত অতিরিক্ত উপজেলা বন কর্মকর্তা এজাহিদ হোসেন বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে বন্য পশু পাখি শিকার করা, আটকে রাখা আইনত অপরাধ। আমরা এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। উপজেলা পরিষদের সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
উল্লেখ্য, চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহরের বিলগুলোতে প্রচুর পরিমানে বক ও অন্যান্য পাখির দেখা মিলছে। এ সুযোগে আইন অমান্য করে অসাধু শিকারীরা বিভিন্ন বিল থেকে প্রায়ই ফাঁদ পেতে বকসহ অন্যান্য পাখি ধরে বিক্রি করছে।