পাবনার চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে শুরু হয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত চড়ক পূজা। চাটমোহর পৌর সদরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদের পাড়ে বটবৃক্ষের শীতল ছায়ায় প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে তিন দিন ব্যাপী এ পূজা শুরু হয়। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি ভারত থেকেও এই পূজা করতে ও মেলা দেখতে আসেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পূজা প্রাঙ্গনে প্রথম থেকেই তৎপর রয়েছেন।
বোঁথর চড়ক পূজা ও মন্দির কমিটির সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ দাস জানান, তিন দিন ব্যাপী এ পূজার প্রথম দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) মন্দিরে মহাদেব স্থাপন করা হয় এবং পুকুর থেকে চড়ক গাছ তুলে পূজা স্থানে (চড়ক বাড়িতে) এনে স্থাপন করা হয়। শনিবার (১৩ এপ্রিল) পূজার আনুষ্ঠানিকতা ও চড়ক গাছ ঘোড়ানো হবে। রবিবার (১৪ এপ্রিল) প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। স্থাপন করা চড়ক গাছ পূজা শুরুর ৭ দিন পর পুনরায় পার্শ্ববর্তী পুকুরে রেখে আসা হবে।
তিনি আরো জানান, অতীতে থেকেই চলে আসছে ৩ দিনব্যাপী এ মেলা। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রকমারী পন্যসামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন দোকানদাররা। নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, যাত্রা, পুতুলনাচ, সার্কাস হয় এ পূজা ও মেলা উপলক্ষ্যে।
চড়ক মেলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পৌর সদরের ছোটশালিখা মহল্লার বিপ্লব কুমার আচার্য্য জানান, বাপ-ঠাকুরদার কাছে এবং এলাকার প্রবীনদের মুখে শুনেছি প্রায় ছয়-সাতশো বছর আগে থেকে বোঁথরে চড়ক পূজা ও মেলা হয়। প্রথম চড়কগাছ প্রতিস্থাপন করেছিলেন মাখন সান্যাল নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী। আসাম থেকে কিনে আনা তার কাঠের মধ্যে চড়ক গাছের আগমন ঘটেছিলো এখানে। আর মাখনের স্ত্রীকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেবতা মহাদেব জানিয়ে দেন চড়ক হয়ে তিনি এসেছেন। তাকে স্থাপন করে যেন পূজা দেওয়া হয়। সেই থেকে স্যানাল আর আচার্য্য পরিবার পূজা শুরু করেন হলদার আর সূত্রধরদের নিয়ে। ৩ দিনের আনুষ্ঠানিকতায় ভক্তরা চড়কগাছ পুকুরের পানি থেকে তোলেন, ভক্ত অনুসারীরা তাদের মনবাসনা পূরনের আশায়, মঙ্গলার্থে চড়ক গাছে তেল, দুধ, চিনি ঢালেন, ভরন চালান দেওয়া, ভরন নাচ, কালী নাচ, হাজরা ছুটানো এবং চৈত্র সংক্রান্তির তিথিতে চড়ক গাছ ঘোড়ানো হয়। এই দিনটাই বেশী জাকজমকপূর্ন হয়। পরের দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়।
চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্তী জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে চড়ক পূজার আনুষ্ঠানিকতা করা হয়েছে। এ পূজা উপলক্ষ্যে অন্যান্য বছরের মতো এবার মেলা বসেছে। বোঁথর ছাড়াও চাটমোহরের রেলবাজার এলাকার কুবিরদিয়ার দাসপাড়ায় চড়ক পূজা এবং হান্ডিয়াল বল্লভপুর চড়ক তলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।