রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামে শব্দ দৃষণের কুফল – মাওলানা: শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩, ৭:১৮ অপরাহ্ণ

মানুষ বা প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকে শব্দদূষণ (Noise Pollution)বলে। মানুষ সাধারণত ২০ হাজার হার্জের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পায় না। তাই মানুষের জন্য এই সীমার মধ্যেই তীব্রতর শব্দ দ্বারা শব্দদূষণ হয়। ৪৫ ডেসিবেলের উঁচু আওয়াজে সাধারণ মানুষ ঘুমোতে পারে না, ৮৫-১২০ ডেসিবেলের উঁচু আওয়াজে কানের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। WHO আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবেল শিল্প এলাকায় ৭০ ডেসিবেলের নিচে আওয়াজ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকে। সেখানে ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোর সামনে গড় আওয়াজের পরিমাণ ৮১.৭ ডেসিবেল। Frontiers ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার গড় আওয়াজের পরিমাণ ১১৯ ডেসিবেল। ২০২২ সালের জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে শব্দদূষণে শীর্ষে ঢাকা, চতুর্থ রাজশাহী।
শব্দদূষণের ফলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের ১১.৮ ভাগ সদস্য কানের সমস্যায় ভোগেন। শব্দদূষণের ফলে সবচেয়ে সংকটপূর্ণ অবস্থায় থাকেন গর্ভবতী মা ও ছোট শিশুরা। ৩ বছরের ছোট বাচ্চার কাছে ১০০ ডেসিবেলের হর্ন বাজালে তার আজীবনের জন্য শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে মৃত্যুও হতে পারে। ২০২২ এর ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজির উচ্চ আওয়াজে এক নবজাতকের মৃত্যু হয় ঢাকা নগরীতে।
WHO-এর মতে, দূষণ জনিত শরীর খারাপের কারণগুলোর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে বায়ুদূষণ, দুই নম্বরেই শব্দদূষণ। শব্দদূষণের কারণে প্রতিবছর হার্টের নতুন রোগী তৈরি হচ্ছে ৪৮ হাজার। করোনায় পুরো বিশ্বে মারা গেছে ৬.৩১ মিলিয়ন মানুষ, সে জায়গায় শব্দদূষণের ফলে প্রতিবছর আক্রান্ত হচ্ছে ২২ মিলিয়ন মানুষ।
দূষণ প্রভাবিত এলাকার মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়। আচরণে অস্বাভাবিকতা ও মানসিক উত্তেজনা দেখা দেয়। মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়। বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। এমনকি বধির হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। যানজট, কলকারখানা, আতশবাজি, গান-বাজনা ইত্যাদি থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়।
শব্দ দূষণ ও ইসলাম : শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ইসলাম কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। মুসলিম হওয়ার মাপকাঠিই নির্ধারণ করেছে জিহ্বা দ্বারা তথা কটু কথা বা উচ্চ আওয়াজ করে মানুষকে কষ্ট দেয়া না দেয়ার ওপর। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (বোখারি : ১০)।
নিম্নস্বরে কথা বলার মাধ্যমে শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব। যেমন যখন কথা বলবে তখন উঁচু গলায় কথা না বলে নিম্নস্বরে কথা বলবে, তখন তার দ্বারা পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে রক্ষা পাবে। পরিবেশ দূষণরোধে আল্লাহ নামাজের মতো ইবাদাতেও স্বর উঁচু না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা সালাতে স্বর উচ্চ কর না এবং অতিশয় ক্ষীণও কর না; এই দুইয়ের মাঝ পথ অবলম্বন কর।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ১১০)।
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা চুপি চুপি করার জন্য পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : ৫৫)।
আয়াতে কারিমায় চুপিচুপি ও সংগোপনে দোয়া করা উত্তম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আয়াতের শেষে এ বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে যে, দোয়া করার ব্যাপরে সীমা অতিক্রম করা যাবে না। কেননা, আল্লাহতায়ালা সীমা অতিক্রমকারীকে পছন্দ করেন না। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা যাকারিয়া (আ.) এর দোয়া উল্লেখ করে বলেন, ‘যখন সে তার পালনকর্তাকে অনুচ্চস্বরে ডাকল।’ (সুরা মারইয়াম : ৩)।
মানবকল্যাণে নিয়োজিত ও অকল্যাণ থেকে সতর্ক ইসলাম কোরআনে আরও নির্দেশ দেন, ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নিচু কর, নিশ্চয়ই সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লুকমান : ১৯)।
একইভাবে মানুষের জন্য এমনভাবে গৃহনির্মাণ করা জায়েজ নয়, যা অন্যের বসবাসের জন্য হুমকি হতে পারে। তেমনি টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির অতিমাত্রায় আওয়াজ করাও বৈধ নয়। কারণ তা প্রতিবেশীর শান্তি বিনষ্ট করে। উচ্চ স্বরে ডাকাডাকি, চিৎকার, দোয়া ও জিকিরের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইসলাম শব্দদূষণের ব্যাপারে কতটা সতর্ক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর