ইসলাম, আল্লাহ প্রদত্ত শ্বাশত জীবনব্যবস্থা। যার মাঝে নিহিত রয়েছে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ, শান্তি, মুক্তি। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগে নবী-রাসুলরা প্রেরিত হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে ইসলামের বাণী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছেছে, যা পূর্ণতা লাভ করেছে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে এবং বিশ্বের বুকে ইসলাম একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হিসেবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এ জন্যই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম।’ (সুরা আল-ইমরান : ১৯)।
বিধর্মীয় সংস্কৃতি পরিহার এবং ইসলামের সুমহান বাণী সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে নবী ও রাসুলরা বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করেছেন। মহান রবের অপার কৃপায় সমাজের মাঝে ইসলামকে একটি কুসংস্কারমুক্ত ও শান্তিপ্রিয় ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তারা সক্ষম হয়েছেন। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমান সময়ে বিজাতীয় উৎসবে বিধর্মীদের পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর একাংশ কর্তৃক বিভিন্নভাবে উদযাপনের চিত্র পরিলক্ষিত হয়। বিশেষভাবে মুসলিম যুব সমাজের মাঝে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়। যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজি নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। এছাড়া, বিধর্মীদের উৎসবের রাতে মহল্লায় মহল্লায় কিংবা বিভিন্ন শহরের অলিতে-গলিতে কিছু মুসলিম নামধারী যুবসমাজ গান-বাজনা, অশ্লীল নৃত্য, আতশবাজি ফোটানো, ফানুস ওড়ানো, ডিজে পার্টি ও কনসার্ট প্রভৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমে এই উৎসবটি প্রতিনিয়ত উদযাপন করছে। এমনকি বিভিন্ন সময় এহেন উৎসব পালনের নামে সমাজের অসংখ্য ছেলে ও মেয়ের মাঝে অবাধ চলাফেরা লক্ষ্য করা যায়, যার মাধ্যমে জেনার দ্বার উন্মোচিত হয়। অথচ আল্লাহতায়ালা এ ব্যাপারে সতর্কবাণী প্রদান করে বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩২)।
এমনকি বিধর্মীদের বিভিন্ন উৎসব পালনে যেসব কর্মকাণ্ডের দেখা মেলে, তা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। বর্তমানে বহুল আলোচিত হ্যালোইন উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন প্রভৃতি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু বিধর্মীদের এহেন জাতীয় উৎসবে একজন মুসলিমের অংশগ্রহণ কখনোই কাম্য নয়। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে নবী) আপনি বলুন : নিশ্চয়ই আমার রব হারাম তথা নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, যার পক্ষে আল্লাহ কোনো দলিল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি।’ (সুরা আরাফ : ৩৩)।
এছাড়া, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি আনুগত্যের জন্য এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন সুরা আয-যারিয়াতের ৫৬নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।’
এমনকি হাদিসে নববিতেও এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনী, সাহাবিদের জীবনী, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেঈনদের জীবনী, চার ইমামের জীবনী, বিখ্যাত মুসলিম মনীষীদের জীবনী এবং বিভিন্ন ইসলামি খেলাফতের শাসনামল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তারা কখনোই বিধর্মীদের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল এমন কোনো উৎসব পালন করেননি এবং সমর্থনও করেননি। বিজাতীয় সংস্কৃতি লালনে নবীজি (সা.) কখনও অনুমতি প্রদান করেননি। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১)।
বিধর্মীদের উৎসবে অভিবাদন জ্ঞাপন প্রসঙ্গে জমহুর উলামায়ে কেরাম মত প্রকাশ করেছেন যে, কাফেরদের দ্বীনি ও বিভিন্ন উৎসবে তাহনিয়া তথা শুভেচ্ছা জানানো বৈধ নয়। কেননা, এর দ্বারা ইসলাম নির্দেশিত ‘সৎকাজে আদেশ প্রদান এবং অসৎকাজে নিষেধ করা’ মূলনীতির লঙ্ঘন ঘটে। পাশাপাশি, এর দ্বারা সমাজে কুফরির বিস্তৃতিতেও সহায়ক হয়।
তাই প্রতিটি মুসলিমের আবশ্যক দায়িত্ব হচ্ছে, বিজাতীয় সংস্কৃতি সর্বদা পরিহার করা এবং এটা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। পাশাপাশি নিজের সন্তান, পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ সবাইকে এহেন উৎসব সম্পর্কে সতর্ক করা। কেননা আল্লাহতায়ালা নিজেই পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরীম : ৬)।
পাশাপাশি, এহেন কার্যাবলি থেকে বর্তমান প্রজন্মকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সমাজে ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষা অধিক হারে নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যথাযথ ইসলামি শিক্ষা চালু না থাকায় মুসলিম যুব সম্প্রদায় ইসলামের এহেন সত্য বিধানকে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে, নৈতিক স্খলন ঘটছে। অথচ ইসলামি শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওপর ফরজ।’ (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব : ৭২)।
অতএব আমাদের সবার উচিত, ইসলাম সমর্থিত নয়- এমন উৎসব ও সংস্কৃতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিহার করা। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন গঠন করা। তবেই দুনিয়াবি জীবনে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত ও কল্যাণ লাভ সম্ভব হবে, তেমনি আখেরাতেও মহান রবের মাগফিরাত অর্জন সম্ভব হবে।