আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মায়ের দুধ শিশুর জীবনে অফুরন্ত নেয়ামতস্বরূপ। এ দুধ শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ, পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত ও আদর্শ খাবার। ইসলাম শিশুকে মায়ের দুধ পান করার বিষয়ে জোর তাগিদ প্রদান করেছে। এটা শিশুর জন্মগত অধিকার ও মহান আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত। এ কারণে জীবনের নিরাপত্তার চরম হুমকি থাকা সত্তে¡ও আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.)-এর মায়ের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলেন ‘আমি মুসার মায়ের কাছে নির্দেশ দিলাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাও।’ (সুরা কাসাস : ৭)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে। অতঃপর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।’ (সুরা বাকারা : ২৩৩)
নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘স্তন্যদানকারী ও গর্ভবর্তী নারী থেকে রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ (আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস : ৩/১৬২)। রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘শিশু জন্মের পরপর মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার।’ (তিরমিজি)
যেসব নারী শিশুদের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকেন, তাদের ব্যাপারে হাদিসে কঠিন ধমকি উল্লেখিত হয়েছে। মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আবু ওমামা বাহিলি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘অতঃপর আমাকে আরও সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। এ সময় কয়েকজন নারীকে দেখলাম, যাদের বুকের ছাতি সাপ দংশন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কোন নারী? বলা হলো, তারা সেসব নারী, যারা নিজের শিশুকে নিজের দুধ পান করাত না।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ২৮৩৭)
কোনো কারণে মা শিশুকে দুগ্ধদানে অক্ষম হলে বিনিময় মূল্য দিয়ে অন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর তাগিদ করেছে ইসলাম। এর মাধ্যমে অনুমান করা যায় ইসলামে মায়ের দুধের গুরুত্ব। অবশ্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের দেহপসারিণী (ব্যভিচারী নারী) ও পাগল মহিলার দুধ পান করানো থেকে দূরে রাখ।’ (বুখারি : ২/৮৯১৬)। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে জানা যায় যে, দেহপসারিণীর (ব্যভিচারী নারীর) দুধ পানে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘এইডস’-এর মতো ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে শিশু। তাই ক্ষেত্রবিশেষ শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে।