সিরাজগঞ্জের তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. সেলিম রেজার বিরুদ্ধে প্রকল্পের বিল, সরকারি সহায়তা কার্ড করাসহ নানা কাজে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আলী আশরাফ।আর তিনি এর প্রতিকার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সোহেল রানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. সেলিম রেজা প্রায় আট বছর পূর্বে নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করেন। আর যোগদানের কয়েক মাস পরই তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নানা প্রকল্প ও সরকারি সহায়তা কার্ডের কাজে ঘুষ আদায়, ইউপি সদস্যদের হয়রানীসহ অনিয়ম করা শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৪০ দিনের কর্মসূচীর তিনটি প্রকল্পের বিল স্বাক্ষর করতে প্রতি প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার করে টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই তিনি বিলে স্বাক্ষর করেন। আবার ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৪০ দিনের কর্মসূচীর বিল করতে তিনি ফের প্রকল্পের সভাপতিদের কাছে ঘুষ দাবী করেন। সে সময় সচিব সেলিম রেজাকে ঘুষ না দেওয়ায় চারটি প্রকল্পের সভাপতি চারজন ইউপি সদস্যের চার মাসের পরিষদ অংশের সন্মানী ভাতার ১৭ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১০ হাজার ৬০০ টাকা কেটে নিয়ে সাত হাজার টাকা করে প্রদান করেন। এ সময় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী আশরাফ প্রতিবাদ করে তাঁর সন্মানী ভাতার পুরো টাকা দাবী করেন। এতে উম্মা প্রকাশ করে ওই ইউপি সচিব ইউপি সদস্য আলী আশরাফের গত ১০ মাসের সন্মানী ভাতার টাকা নানা অজুহাতে আর দেননি। এমনটিই দাবী করেন অভিযোগকারী ওই ইউপি সদস্য।
তিনি লিখিত অভিযোগে তিনি আরো দাবী করেন বরাবর নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের কর্মরত সচিব প্রতিটা কাবিখা প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। পাশাপাশি পরিষদের সদস্যদের সাথে কোনো পরামর্শ সভা না করেই টাকার বিনিময়ে ভিজিএফ কার্ড করে দেন। শুধু তাই নয় গত বছরের ২ হাজার ৩৫০টি ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে প্রত্যেক ইউপি সদস্যকে ৮০টি করে সর্বমোট ৯৬০টি কার্ড প্রদান করেন। আর তিনি নিজে ৭৯০টি কার্ড অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রদান করে সুবিধা আদায় করেন। এ ছাড়া ইউপি সদস্যদের দেয়া ৮০টি কার্ডের দাপ্তরিক কাজের খরচের নামে প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। তাছাড়া প্রতি জন গর্ভবর্তী মায়েদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তবেই গর্ভবতী ভাতা দেবার পরিষদের অংশের কাজ করে থাকেন। এমনকি পরিষদের এলজিএসপি প্রকল্পের যাবতীয় কাজ তাঁর বাসস্থান নিজ উপজেলার ঠিকাদারদের দিয়ে করিয়ে সেখান থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নেন।
এখানেই শেষ নয়, লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে গত পাঁচ বছর যাবত ইউনিয়ন পরিষদের আদায় করা ট্যাক্সের লাখ লাখ টাকার কোনো হিসাব নেই। মুলতঃ নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। আর তাঁর অসুস্থ্যতার সুযোগ নিয়ে পরিষদের সচিব মো. সেলিম রেজা ঘুষ ছাড়া কোন কাজই করেন না এবং কাজে- কর্মে বেপোরয়া হয়ে উঠেছেন।
অবশ্য নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. সেলিম রেজা তাঁর বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আত্নপক্ষ সমর্থন করে বলেন, নিয়ম মেনে কাজ করলে অনেকেরই অসুবিধা হয়। তখন তাঁরা অভিযোগ করেন। আর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী আশরাফের দশ মাসের সন্মানী ভাতার টাকা কেন দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ব্যাস্ত আছি পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে দেন।
এ বিষয়ে নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি অসুস্থ্য এবং ঢাকায় আছি। বাড়ি গিয়ে সদস্য আলী আশরাফ ও সচিব সেলিম রেজাকে নিয়ে বসে বিষয় গুলো সমাধান করে দেব।
আর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সোহেল রানা নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. সেলিম রেজার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্য মো. আলী আশরাফের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অভিযোগ গুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয়ও ব্যবস্থা নেব।