সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:২৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামে পরিবেশ ও প্রকৃতি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব – মাওলানা: শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩, ৫:০৮ অপরাহ্ণ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, বিশেষ উপলক্ষে তাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তারও আগে পৃথিবীকে মানব বসবাসের উপযোগী করে তৈরি করেছেন। মানব জাতির সব চাহিদা পূরণের যাবতীয় আয়োজন করে তিনি যে উপযুক্ত প্রতিবেশ সাজিয়েছেন, তা হলো আমাদের প্রকৃতি। পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি আমাদের চারপাশের অবস্থা। এই পরিমণ্ডলে রয়েছে গাছপালা, নদ-নদী, ফুল-ফল, পশু-পাখিসহ নানান আয়োজন। এগুলো নৈসর্গিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। এ ছাড়া মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে খোদার দান প্রকৃতির মধ্যে যে ইতিবাচক কল্যাণকর পরিবর্তন সৃষ্টি করে, তা হলো সামাজিক পরিবেশ। যেমন: রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, কলকারখানা ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, সামাজিক পরিবেশ বিনির্মাণে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। সে হিসেবে মানুষের চলাফেরা, আচার-ব্যবহার, আখলাক-চরিত্র, রুচিবোধ, মননশীলতা—সবকিছু শ্রেষ্ঠ হবে, এটাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে মানুষ সামাজিক জীব, মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে; তাই মানুষের নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, পাশাপাশি জীবনকে আরও সুন্দর ও উপভোগ্য করার জন্য সামাজিক পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা এবং সুন্দর পরিবেশ তৈরির জন্য যুগে যুগে আল্লাহপাক নবী-রাসুলদেরও নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি হজরত নূহ (আ.)-এর পূর্ব পর্যন্ত নবীদের প্রধান কাজ ছিল মানব বসবাসের উপযোগী সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। ইসলামের উদ্দেশ্যও হলো ‘দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তি’।
আব-হাওয়া বা জল-বায়ু আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত
আমাদের প্রকৃতির প্রধান ও শ্রেষ্ঠ অংশ হলো ‘আব-হাওয়া’ তথা পানি ও বাতাস। এ দুটি উপাদান আমাদের প্রতিনিয়ত প্রয়োজন। তাই পানি ও বাতাস দূষণমুক্ত রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য, এ গ্রহের নিরাপত্তার জন্য আমাদের জল-বায়ু সংরক্ষণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তোমাদের
মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তোমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন।’ (১১ সূরা হুদ, আয়াত: ৬১)। পরিবেশ সংরক্ষণের
মাধ্যমে পৃথিবীতে আবাদ হতে পারে। পরিবেশ যখন সংরক্ষিত থাকবে না, তখন পৃথিবীতে আবাদ হবে না এবং বসবাসের উপযোগী
থাকবে না। পৃথিবী বাসযোগ্য থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু হলো পানি। আল্লাহ তাআলা পানি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের
ষাট জায়গায় বলেছেন। পানি ছাড়া আমাদের জীবন অচল, তাই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। পানি আল্লাহর দেওয়া এক শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। সুতরাং এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রাণবান সবকিছু পানি হতে সৃষ্টি করেছি।’ (২১ সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)। পানি হচ্ছে প্রাণ সৃষ্টির মূল উপাদান, এই উপাদান সংরক্ষণ করার জন্য কোরআনে কারিমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা#
পরিবেশ বলতে আমরা সাধারণত সুন্দর পরিবেশ, উন্নত পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বুঝি। অর্থাৎ পরিবেশের সঙ্গে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যেমন পানি হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান উপাদান। পানি ছাড়া গাছপালা, বন-বনানী, নদী-নালা, পশু-পাখি কল্পনাও করা যায় না। পানির অস্তিত্ব প্রাণীর অস্তিত্বের পূর্বশর্ত। সেই পানি কিন্তু সবচেয়ে বেশি পবিত্র, অর্থাৎ পানি নিজে পবিত্র এবং অন্যকেও পবিত্র করতে সক্ষম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তিনিই (মহান আল্লাহ) স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুবার্তাবাহী বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি (আল্লাহ) আকাশ হতে পবিত্র (ও পবিত্রকারী) বারি বর্ষণ করি। যা দ্বারা আমি মৃত ভূমিকে জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির বহু জীবজন্তু ও মানুষকে উহা পান করাই।’ (২৫ সূরা ফুরকান, আয়াত: ৪৮-৪৯)।
পরিবেশদূষণ ও অপরিচ্ছন্নতা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুন্দর পরিবেশের প্রথম বৈশিষ্ট্য। তাই প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পরিবেশকে দূষিত করবে না।’ পুকুরের পানি, নদীর পানি, আবদ্ধ জলাশয়ের পানি যেন দূষিত না হয়, সে জন্য প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘আবদ্ধ পানি ও জলাশয়ের পানিতে তোমরা প্রস্রাব করবে না। প্রস্রাব করে তোমরা পানিকে দূষিত করে সেখানে আবার গোসল করবে না।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৪২৪)।
প্রতিটি মানুষের সুস্থতার জন্য পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানির প্রয়োজন সর্বাগ্রে। তাই মহানবী (সা.) পানিকে পবিত্র রাখতে এবং পানিকে সংরক্ষণ করতে বলেছেন; কোনোভাবেই যাতে পানি অপবিত্র ও দূষিত হতে না পারে। কারণ দূষিত পানির মাধ্যমে পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘খবরদার! তোমরা পানির মধ্যে নিশ্বাস ত্যাগ করবে না বা ফুঁ দেবে না।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ১৪১০)। এই হাদিসটিতে খাওয়ার পানির কথা বলা হয়েছে। কারণ মানুষের নিশ্বাসের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়; যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পানির অপচয় সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রয়োজনের অধিক পানি অপচয় করবে না। যদিও তোমরা বহমান নদীর তীরে থাকো।’ (বুখারি)।
অতএব, আমাদের উচিত পানিকে দূষণমুক্ত রাখা এবং পানির অপচয় রোধ করা। পানির পাশাপাশি আরও যত প্রাকৃতিক সম্পদ আছে—সবকিছুর যথাযথ ব্যবহার, পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না করলে মানব সভ্যতায় নেমে আসবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের ফলে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ঘটেছে।’ (৩০ সূরা রুম, আয়াত: ৪১)। আল্লাহ তাআলা চান মানুষ সুন্দর পরিবেশে পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করুক।
সৈয়দ তানতাভী (র.) লিখেছেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের মধ্যে পাঁচ শতবার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন। পবিত্রতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যতীত সুন্দর পরিবেশ কল্পনা করা যায় না। প্রিয় নবী (সা.)
ইরশাদ করেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।’ (মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা ৩৮)।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com