পরিবারের আহার ও পড়াশোনাসহ অন্যান্য খরচ যোগাতে কাজ করছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার অনেক শিশু- কিশোর। এতে পড়াশোনায় ঘাটতিসহ শঙ্কা রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকির।
উপজেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৯৪৫ হেক্টর। আর চাষ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৩ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হেক্টর বেশি। ব্রি-২৮ সহ কিছু চিকন জাতে নেক ব্লাস্ট ধরে চিটা হলেও অন্যান্য জাত ভালো হওয়ায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাধ সেধেছে মাঠ থেকে ধান কাটার শ্রমিক সংকট।
সূত্র বলছে, উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে মোট শ্রমিক রয়েছে ৮,২৪০ জন। যারমধ্যে পুরুষ ৩৭১৫ জন আর নারী রযেছে ৪৫৩৫ জন। বেশি আয়ের আশায় পুরুষ শ্রমিকরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যাওয়া এবং ধান কাটা ও সেই ধান কৃষকের বাড়ির উঠানে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নারী শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা কম থাকায় শ্রমিক হিসেবে চাহিদা বেড়েছে শিশু-কিশোরদের।
সরেজমিন দেখা যায়, মাঠে মাঠে ধান কাটছে শিশু-কিশোররা। তাদেরই কয়েকজন হলো: সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মনোজ কুমার রবিদাস, সুমন কিন্নর, বিপ্লব কিন্নর ও আরমান। মনোজ ছাড়া বাকিরা বলছে, বাবা, মা পড়াশোনার খরচ আর খাবার জোটাতে না পেরে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার পর আর স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাদের। এখন নিজের খরচ আর পরিবারের আহার জোটাতে ধান কাটছি প্রতি শতক জমি একশ টাকা হারে। এছাড়া অন্যান্য সময় পাওয়ার টিলার চালানোসহ যখন যে কাজ পাই তাই করি।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মীরগঞ্জ আদর্শ স্কুলের ওই শিক্ষার্থী বলছে, “খালার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করছি। পড়াশোনার ফাঁকে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে স্কুল, প্রাইভেট ও কোচিং-এর মাইনে দেই এবং শার্ট, প্যান্ট, কাগজ, কলম কিনি। তবে আজকের পারিশ্রমিকের টাকা দিয়ে একটা প্যান্ট কিনবো।”
শিশু-কিশোরদের কাজের এমন চিত্র দেখা মেলে সর্বত্র। কেউ করছে ইট ভাটায়, কেউ বা চালাচ্ছে অটো রিকশা। আবার কেউ বা কাজ করছে হোটেল বা টি স্টলে।
শিশু শ্রমের বিষয়ে জানতে আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, রংপুর-এর উপ পরিচালক ও গাইবান্ধা জেলা শিশু শ্রম নিরশন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, “আমরা মূলত বিভিন্ন কারখানায় শিশুরা কাজ করে কি না তা দেখে থাকি। এর আগে জেলায় আমরা ৯ জন শিশু শ্রমিককে পেয়েছিলাম, যাদের সবাইকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তবে বয়স অনুযায়ী কাজ করার উপযোগী নয়, এমন শিশু যদি কারখানায় কাজ করে তবে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।”