পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ভাষা শহীদদের জন্য এক সময়ে নির্মিত শহীদ মিনারটি রয়েছে অবহেলিত বছরের পর বছর। শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের একটি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়েছে অনেক আগেই। তবুও নেই সংস্কারের উদ্যোগ। নিচের অংশের দিকে তাকালেই দেখা যায় অয্নে আর অবহেলার ছাপ ফুটে উঠেছে। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক সময়ে নির্মিত শহীদ মিনারটি আজও রয়েছে অবহেলিত। বিষয়টি দেখে বাংলা ভাষা প্রেমীদের মনে দাগ কাটলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ কারো মনে দাগ কাটতে পারেন নি।
এমন চিত্র দেখা গেছে, উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চর ভাঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর চর-ভাঙ্গুড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ চত্বরে নির্মিত শহিদ মিনারে। শহিদ মিনারটি এমন অবহেলায় আর অযত্নে থাকলেও সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেছেন আগামীতে গুরুত্বের সাথে শহীদ মিনারটি ঠিক করা হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চর-ভাঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর-ভাঙ্গুড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও সমাবেশের জন্য একই মাঠ ব্যবহার করে আসছে শুরু থেকেই। পাশাপাশি বিদ্যালয় দুটির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠের দক্ষিণ পূর্ব দিকে রয়েছে ‘৫২ সালের ভাষা শহীদদের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নির্মিত একটি শহীদ মিনার। পাশাপাশি তিনটি স্তম্ভ থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে দুইটি স্তম্ভ। একটি স্তম্ভ ভেঙ্গে নিঃশ্চিহ্ন হয়েছে। অপর একটি স্তম্ভের কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। শহীদ মিনারের পাদদেশ রয়েছে অযত্নে আর অবহেলায়। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।
অনুসন্ধনে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের মাঠ চত্বরে শহীদ মিনার অনেক পূর্বে লোহা দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে বছর দুই হলো শহীদ মিনারটির একটি স্তম্ভ ভেঙ্গে নিঃশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভাঙ্গা শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষক ও কমল মতি শিক্ষার্থী। ভাঙ্গা শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে উদ্বেগের জন্ম নিলেও বিষয়টি প্রধান শিক্ষকদের মনে দাগ কাটতে পারে নি। এভাবেই পড়ে আছে বছরের পর বছর।
স্কুল মাঠে ঘুরতে আসা চর-ভাঙ্গুড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা শারমিন আক্তার জানান, তিনি গত বছর ভাঙ্গা শহীদ মিনারেই ফুল দিয়েছেন। শহীদ মিনার ভাঙ্গা অবস্থাতেই দেখছেন দীর্ঘদিন। এ সময় বাংলা ভাষা প্রেমীদের অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারটি ভাঙ্গা অবস্থায় দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে চর-ভাঙ্গুড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, কিছুদিন পূর্বে রাতের আধারে কে বা কারা শহীদ মিনারের একটি স্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলে রেখে গিয়েছিল। পরে তিনি শহীদ মিনারের ওই অংশটি ঘরে উঠিয়ে রেখেছেন। তবে উর্ধ্বতন কাউকে কিছু জানানো হয় নি।
এ ব্যপারে চর-ভাঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, শহীদ মিনারটি অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় তা সংস্কার করা যাচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যালয়ের বাৎসরিক বরাদ্দ স্লিপের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরকারি বরাদ্দের টাকা ৬৫ হাজার পাপ্তির কথা স্বীকার করেন। তবে শহীদ মিনার সংষ্কারে তিনি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি বলে স্বীকার করেন।
এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ঠ উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. হাসান আলী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওই বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার যদি ভাঙ্গা থাকে তাহলে আগামীতে মেরামত করানোর ব্যবস্থা করা হবে ।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের শহীদ মিনার ভাঙ্গা বিষয়টি খুব দু:খ জনক। দ্রুত ভাঙ্গা শহীদ মিনারটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।