সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামের আলোকে ভাষা শহীদদের  মর্যাদা – মাওলানা:শামীম আহমেদ 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য-অগনিত দান আর নিয়ামতে পরিপূর্ণ আমাদের জীবন-সংসার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, জীবনের শুরু থেকে বিদায় পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ মহানের দান-নিয়ামতের মুখাপেক্ষি আমরা। মহান আল্লাহর নিয়ামতভোগী মাখলুক আমরা মানুষ। ভাষা আল্লাহ তায়ালার অনন্য একটি দান।অন্যন্য একটি নিয়ামত। মানব জাতিকে প্রদান করা বিশেষ নিয়ামত। ভাষা জীবনের এমন একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়; যা ছাড়া সুস্থ ও সম্পূর্ণ জীবন কল্পনা করা যায় না। ভাষার ব্যবহার, ভাষা শিক্ষা ও মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চা করাকে বেশ গুরুত্ব প্রদান করেছে ইসলাম। পবিত্র কোরানের সুরা আর-রহমানের প্রথমদিকে আল্লাহ তায়ালা বলেছে, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তাকে শিক্ষা দিয়েছি বয়ান বা উপস্থাপনজ্ঞান’। আলোচ্য আয়াতের মাঝে মানুষকে উপস্থাপনজ্ঞান শিক্ষা প্রদান করার কথা বলার মাধ্যমেই ভাষা শিক্ষার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানবকূলকে যত নিয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে ভাষা অন্যতম। মানুষ ভাষার মাধ্যমে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারে। মনের মণিকোঠায় লুকানো সুখানুভূতি দু:খানুভূতি নিমিষেই প্রকাশ করতে পারে অন্যের কাছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন, যা অন্য কোন প্রানীকে দেননি। পশু-প্রানীরা কখনো তাদের মনের বেদনা কারে কাছে বলতে পারেনা; আনন্দ উল্লাস অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে পারে না। কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ তাঁদের সব অনুভুতি অন্যের সাথে আদান প্রদান করতে পারে। এ এক অপূর্ব নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য কুদরত ও নিদর্শন আমাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে। এইসব নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে কথা বলা বা ভাষার নিদর্শনটিই আমরা অনুভব করি এবং ব্যবহার করি। পবিত্র কোরানে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্যতম হল- আসমান জমিন সৃষ্টি, তোমাদের বিভিন্ন রং, ধরণ এবং ভাষার বিভিন্নতা’। (সূরা রূম: ২২) আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় কোটি কোটি মানুষ তৈরী করেছেন। তিনি নিপূণতার সাথে প্রত্যেকটি মানুষকে অন্য মানুষ থেকে আলাদাভাবে তৈরী করেছেন। তাদের মধ্যে দিয়েছেন রংয়ের ভিন্নতা; ভাষার ভিন্নতা; দিয়েছেন রুচীর বৈচিত্র্য। কোটি কোটি মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন ধরণ, রূপ-সৌন্দর্য্যে ও ভাষার ভিন্নতা আল্লাহ তায়ালার অপরূপ মহিমা ও কুদরতকে সাক্ষ্য দেয়। প্রমাণ করে আল্লাহ কতো সুনিপূণ কারিগর। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতিকে আলাদা আলাদা ভাষা দিয়েছেন। সব ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি; আল্লাহর দান। সব ভাষাই আল্লাহর কাছে সমান। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ.) -কে সৃষ্টির পর তাঁকে সব ধরণের ভাষা জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলামের আলোকে ভাষার মর্যাদা : আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের অফুরন্ত ভাণ্ডার ঘিরে রেখেছে সৃষ্টিকুলকে। তার কোনো নিয়ামতই গুরুত্বের দিক থেকে কম নয়। তবে কিছু কিছু নিয়ামত প্রয়োজন ও অপরিহার্যতার বিচারে একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্রষ্টা তাদের যে ভাষার নিয়ামত দান করেছেন সেটাও এর অন্তর্ভূক্ত। মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ আকুতিকে প্রকাশ করার জন্য আমরা মুখের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ যে শব্দ বের করি সেটাই ভাষা। ভাষাকে আল্লাহ তাআলা তার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছেন। পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন, ‘তার এক নিদর্শন হলো, তোমাদের রং, ধরণ এবং ভাষার ভিন্নতা। (সূরা রূম: ২২) ভাষা ছাড়া মানবসভ্যতা অচল। বাকহীন নিথর কোনো ভূখণ্ডে বেঁচে থাকা কতটা যে দুর্বিষহ তা বোঝানো মুশকিল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মানবসভ্যতাকে ছন্দময় করে তোলার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা আশরাফুল মাখলুকাত তথা মানুষকে দান করেছেন ভাষার নিয়ামত। সব প্রাণীরই স্ব স্ব ভাষা আছে, নিজেদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের মাধ্যম জানা আছে। কিন্তু মানুষের ভাষার মতো এত স্বাচ্ছন্দ্য, সহজাত ও সমৃদ্ধ ভাষা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, সেরা জীব হওয়ার মহাত্ম্য। প্রথম মানুষ হযরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর সর্বপ্রথম তাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত আদমকে সৃষ্টি করার পর যত ভাষা দুনিয়াতে আছে সবকিছুর জ্ঞান তাকে তিনি দান করেছেন। (সূরা বাকারা : ৩১) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মানব জাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং বর্ণনা করার জ্ঞান দিয়েছেন। (সূরা আর রহমান: ৪)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর