সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

পবিত্র আল কোরআন ও হাদীসের আলোকে তাহাজ্জত  নামাজের  গুরুত্ব ও ফজীলাত – মাওলানা: শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:২০ অপরাহ্ণ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উদ্দেশে কোরআন কারিমে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জত কায়েম করো, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে—মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৭৯)।
রমজান মাস রহমতের শ্রেষ্ঠ মাস। রহমতের শ্রেষ্ঠ সময় তাহাজ্জতের সময়। বছরের বিশেষ রাতসমূহে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন। তাহাজ্জতের সময়ে প্রতিটি রাতেই আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের আরজি ও আবেদন-নিবেদন শোনেন।
রাতের ইবাদত প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে আরও রয়েছে, ‘হে কম্বলাবৃত! রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তার চেয়ে কিছু কম অথবা তার চেয়ে বেশি এবং কোরআন তিলাওয়াত করো সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয়ই দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও।’ (সুরা-৭৩ মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১-৮)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত! ওঠো, সতর্ক করো, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো, স্বীয় পোশাক পবিত্র করো এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো। অন্যকে কিছু দান করে অধিক প্রতিদান আশা করবে না। আর তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে ধৈর্য ধারণ করো।’ (সুরা-৭৪ মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ১-৭)।
তাহাজ্জত নামাজের সময় রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তথা রাত দুইটার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার আগপর্যন্ত। সাহ্‌রির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জতের ওয়াক্ত শেষ হয়। তাহাজ্জত শব্দের অর্থ কষ্ট-ক্লেশ, শ্রম-পরিশ্রম। সন্ধ্যারাতে ঘুমিয়ে মধ্যরাতের পর শয্যা ত্যাগ করাকে তাহাজ্জত বলা হয়। তাই তাহাজ্জতের আগে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জত পড়া উত্তম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতেই তাহাজ্জত নামাজ আদায় করতেন। তাই এটি সুন্নাত, অতিরিক্ত হিসেবে নফল। নবীজি (সা.)-এর জন্য এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জত সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জত পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন।’ (দিওয়ানে আলী, নাহজুল বালাগা)। তাহাজ্জত হলো মোক্ষ লাভের মোক্ষম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জত।’ (মুসলিম, আলফিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৯৭, হাদিস: ৪০৫)। তাহাজ্জত সংকট উত্তরণে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন।
মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে নানা কুসংস্কার বিদ্যমান আছে। যেমন ‘তাহাজ্জত অন্ধকারে পড়তে হয়’ বা ‘তাহাজ্জত গোপনে পড়তে হয়’ ও ‘তাহাজ্জত পড়লে জিন আসে’ এবং ‘তাহাজ্জুত শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়’। এসব ভয়ে ও বিভ্রমে অনেকে তাহাজ্জত পড়েন না। প্রকৃতপক্ষে এসব ভুল ধারণা। তবে কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং প্রচার মানসিকতা যেন না থাকে, এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জত নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর