সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

নলডাঙ্গায় পৌর মেয়র মনিরের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ

নলডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪২ অপরাহ্ণ

নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা রকম অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ভুয়া প্রকল্পের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, সুকৌশলে নিজের ঠিকাদারী লাইসেন্স ব্যবহার করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা দূর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া পৌরসভার সকল কাউন্সিলরদের সঙ্গে তার কোন সমন্বয় নেই। তার মন গড়া ভাবে পৌরসভা পরিচালিত হচ্ছে। ফলে পৌর সভার উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে, সরকারী অর্থ লুটপাট-অপচয় এবং ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভার সাধারণ নাগরিকতার তো দূরের কথা কাউন্সিলরাও তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেন না। যে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভয়ভীতি দেখানো হয়। সম্প্রতি পৌরসভার ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দরপত্রের মাধ্যমে পায় নাটোরের মৌসুমী ট্রের্ডিং এর স্বত্তাধিকারী মো. মনতাজ আলী।
মনিরুজ্জামান মনির সরকারী বিধিমালাকে তোয়াক্কা না করে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারী নাটোর নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তি নামা করে পৌরসভার আরো চারজন তালিকাভুক্ত ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে কাজটি কিনে নেন।
এরমধ্যে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলামের স্ত্রী সাবরীনা সুলতানাও রয়েছেন। মনিরুজ্জামান মনির নিজে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিধিমালা জেনে চুক্তি বাতিল করে এই সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজ থেকে নিজে সরে গেছেন দাবী করেন। তবে অংশীদার রইস উদ্দিন ও প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেছেন, মেয়রের বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি এখনো আগের মতোই অংশীদার আছেন।
পৌর সভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন বলেন, তার এলাকার ধোবাপুকুর গোরস্থান হতে তেতুল তলা পর্যন্ত গ্রামীন সড়ক খোয়া দ্বারা মেরামত করার নামে ৫ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সেখানে কোন কাজ না করে ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাত করেছেন মেয়র।
৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহসিন আলী প্রামানিক বলেন, কোন কাজেই কাউন্সিলরদের ডাকা হয় না। সব কাজ করে শুধু বিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বকর হোসেন ও কাউন্সিলর মাহবুর রহমান বলেন, গভীর রাত পর্যন্ত অফিস খুলে মেয়র তার লোকজন নিয়ে অফিসে আড্ডা দেয়। দিনেও কাউন্সিলররা অফিসে এসে বসার জায়গা পর্যন্ত পায় না। তাদের সাথে মেয়রের কোন কথাই হয়না সমন্বয়ও নেই। কিছু বললেই ক্যাডার দিয়ে হুমকি দেয়। অফিসের মধ্যে সে কারনে রড, হাতুড়ি ও জিআই পাইপ রাখা আছে বলে তারা দাবী করেন।
নলডাঙ্গা পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান ফকির মুক্তা বলেন, মেয়র গোপনে কাজ করেন  বলেই কাউন্সিলরদের রেজুলেশন দেখতে দেয় না ও কপি দেয় না। মেয়র স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন-২০০৯ ও সরকারি ক্রয় নীতিমালা অমান্য করে পৌরসভা পরিচালনা করেন, কোন কাউন্সিলর প্রতিবাদ করলে মেয়র খারাপ আচরণ করেন।
 
প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম পিয়াস বলেন, মেয়র গোপনে অনেকগুলো কাজ বাস্তবায়ন করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। মেয়র স্বেচ্ছাচারী ভাবে পৌরসভা পরিচালনা করেন, কাউন্সিলরদের মতামতের কোনো মূল্য নেই তাঁর কাছে। কাউন্সিলররা কোন বিষয় জানতে চাইলে মেয়র তাদের সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেন। পৌরসভার পরিষদবর্গ ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের ৬ মাসের বেতন ভাতা হয় আর ৬ মাসের বেতন ভাতা বাঁকি থাকে কিন্তু তারপরেও গোপনে মেয়র ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনসুর আলম শুধুমাত্র নিয়োগ বানিজ্যের উদ্দেশ্যে সকলকে বেতন-ভাতা পরিশোধ দেখিয়ে কর্মচারী নিয়োগের জন্য ছাড়পত্র চেয়েছেন। সিসি ক্যামেরা কেনা ও স্থাপনে খরচের চেয়ে প্রায় চারগুন বেশি টাকা ভুয়া বিল দাখিল করে উত্তোলন করা হয়েছে। মশক নিধনের নামে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে ভুয়া ভাউচার দাখিল করে পৌর সভার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া করোনা মোকাবিলার নামে সুরক্ষা উপকরন ক্রয় ও বিতরনেও রয়েছে নানা অনিয়ন। মুজিবজন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের নামে পৌরসভা থেকে কয়েক লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে আজ অবধি কোন কাউন্সিলরকে ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়নি। এখানেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
এছাড়া পৌর সভার নিজস্ব ট্রাক মেরামতের নামে খেয়াল খুশিমত অধিক বিল দাখিল টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। পৌরসভার ভবন রং করতে মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ সেখানে ৫ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
বিভিন্ন কোটেশন ও কাউন্সিলরদের নামে পিআইসি প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করে থাকে মেয়র। এখন জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্যের পাঁয়তারা শুরু করা হয়েছে।
মুজিব জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে একটি প্রকল্প ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন? এমন প্রশ্নেন জবাবে মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘৫নং ওযার্ডের কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানকে আহবায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে খেয়াল খুশিমত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ নেই।’
কাগজে কলমে শুধু উদযাপন কমিটির আহবায়ক করা হলেও কিছুই জানেন না দাবি করেছেন, কাউন্সিলর মাহবুবর রহমান।
পৌর সভায় গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা ও অনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘দলের কার্যালয় ও পৌরসভার কার্যালয় পাশাপাশি। সাংগঠনিক আলাপ আলোচনা করতে হয় তাই রাত হয়ে যায়।’
এছাড়া পৌর সভার ভবন গুলো রং করা ও পৌর এলাকায় ঠিকাদারি কাজের সাথে অংশীদার থাকার কথা অস্বিকার করে বলেন, ‘মেয়র হওয়ার আগে পৌর সভায় ঠিকাদারি কাজের সাথে অংশীদার থাকার কথা অস্বিকার করে বলেন, ‘মেয়র হওয়ার আগে পৌর সভায় ঠিকাদারি করেছি। এখন আর করিনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকায় পৌরসভার উন্নয়ন বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। অনৈতিক ভাবে সুবিধা না দেয়ায় পৌর সভার কিছু কাউন্সিলর আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করছে। এরআগেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শুনানিতে কোন প্রমান না পাওয়ায় প্রত্যাহার করেছে অভিযোগকারীরা।’
তবে অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে কাউন্সিলররা বলেন, প্রত্যাহারের কোন সুযোগ নেই। মেয়র নিজের খেয়াল খুশি মত পরিষদ পরিচালনা করছেন। কাউন্সিলরদের মতামতের কোন দাম দিচ্ছে না। ফলে পৌর বাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের দাবি নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের দেয়া উন্নয়ন মুলক কাজ গুলোজনগনের দোড় গোড়ায় পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাতে সরকারের ভাবমুর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। মেয়রের এসব কর্মকান্ড থেকে নলডাঙ্গা পৌর সভাকে বাঁচাতে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, দূর্নীতি দমনকমিশন (দুদক) ঢাকার সচিব, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, নাটোর জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকসহ আরো বেশকয়েকটি দপ্তরে তারা প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। মেয়রের রোষানল থেকে বাঁচতে অভিযোগকারীরা নিজেদের পরিচয় পর্যন্ত গোপন রেখেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর