রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আগৈলঝাড়ায় গৃহবধু রাশিদা হত্যা মামলায় স্বামীসহ দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২, ১:৩৯ অপরাহ্ণ
গৃহবধু রাশিদা বেগম ও বেচে যাওয়া ১০ মাসের শিশু সন্তান।

বরিশালের আগৈলঝাড়ার চাঞ্চল্যকর গৃহবধু রাশিদা বেগম হত্যা মামলায় স্বামীসহ তিন জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ।
চাঞ্চ্যল্যকর রাশিদা বেগম হত্যার সাত মাস পরে মামলার তদন্তকারী অফিসার ইন্সপেক্টর মো. মাজহারুল ইসলাম রাশিদার ঘাতক স্বামী তামিম শেখ, ভাড়াটিয়া হত্যাকারী তামিমের বন্ধু রুবেল খাঁ ওরফে রুবেল ঘরামী এবং জুলহাস শেখকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার দঃ বিঃ ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছেন। যার অভিযোগপত্র নং-৬৯।
আদালতে চাঞ্চ্যলকর গৃহবধু রাশিদা বেগম হত্যা মামলায় চার্জশীট দাখিলের সত্যতা স্বীকার করেছেন থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার।
থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, এক সন্তানের জননী রাশিদা বেগম (৩৫) হত্যাকারী হিসেবে চার্জশীটে অভিযুক্তরা হলো- নিহতের স্বামী গোপালগঞ্জ সদর থানার বেদগ্রামের (উত্তরপাড়া) মৃত আনোয়ার শেখ এর ছেলে তামিম শেখ (৪২), তার সাথে হত্যা ও পরিকল্পনায় ভাড়াটিয়া হিসেবে জড়িত তামিমের অপর দুই বন্ধু গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার ঘাঘর এলাকার মৃত ইদ্রিস ঘরামী ওরফে ইদ্রিস দাড়িয়ার ছেলে (ভাসমান) {টোকাই} রুবেল খা, ওরফে রুবেল দাড়িয়া ওরফে রুবেল ঘরামী (৪০) ও গোপালগঞ্জ সদর থানার দক্ষিণ বেদগ্রামের মৃত আ. সালাম শেখ এর ছেলে মো. জুলহাস শেখ (৪৭)।
উল্লেখিতরা গৃহবধু রাশিদা হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি হত্যার সাথে জড়িত থাকার প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমানে অভিযুক্ত হয়েছে।
পুলিশ মামলা দায়েরের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন্ স্থান থেকে মাত্র আট ঘন্টার মধ্যে তিন ঘাতককে গ্রেফতার করে। ঘাতকদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি রাশিদা হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, দেশীয় ধারালো চাকু, চারটি মোবাইল ফোন, রক্তমাখা জামাকাপড়, জুতাসহ একটি মাহেন্দ্র উদ্ধার করে তা জব্দ করে পুলিশ। অভিযুক্তরা গ্রেফতারের পর থেকেই আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে আটক রয়েছে।
আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রর বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার ও থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, দাম্পত্য কলহের জের ধরে গৃহবধু রাশিদাকে তার স্বামী তামিম শেখ চলতি বছর ২০ জানুয়ারি ফোনে গোপালগঞ্জ যেতে বললে রাশিদা তার দশ মাসের শিশু পুত্র তনিমকে নিয়ে গোপালগঞ্জ যায়। তামিম তার আগের স্ত্রীর কারণে রাশিদাকে বাড়িতে না নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল ‘রোহান’ এর ২০৭ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেয়।
হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি ওই দিন রাতের খাবার খেয়ে তারা হোটেল থেকে নেমে স্বামী তামিম ফোন করে তার বন্ধু ও ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করা হত্যাকারী টোকাই রুবেল ও মাহেন্দ্র চালক জুলহাসকে ডেকে এনে একত্রে রাত সাড়ে আটটার দিকে মাহেন্দ্রতে ওঠে। তারা রাত বেশী করতে সময় ক্ষেপন করে শহর ঘুরে গোপালগঞ্জ সদর থানার ঠুটামান্দ্রা বিলের মধ্যে যায়। রাত সাড়ে দশটার দিকে জনশুন্য ওই বিলে মাহেন্দ্র থেকে স্বামী তামিম শেখ রাশিদাকে টেনে নীচে নামিয়ে হাতুড়ি দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
এসময় ভাড়াটিয়া বন্ধু রুবেল দাড়িয়া তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে রাশিদার মুখে, মাথায় ও গলায় এলোপাথারী কোপায়। রাশিদা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পরলে মাহেন্দ্র চালক জুলহাস শেখ রাশিদার মুখ চেপে ধরে শ^াসরোধ করে রাশিদাকে হত্যা নিশ্চিত করে।
পরে ঘাতকেরা হত্যার আলামত নস্ট করা ও ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তিনজনে রাশিদার লাশ গবীর রাতে আগৈলঝাড়া-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আগৈলঝাড়ার বাইপাস ব্রীজের পশ্চিম পাশে ফেলে দেয়। লাশের ৫শ গজ দূরে জনৈক মোতালেব মোল্লার ঘরের পাশে শিশু তনিমকে ফেলে রেখে ঘাতকেরা পালিয়ে গেলে অবুঝ শিশুটির কান্না শুনে লোকজন তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসে পাশে নারীর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশ শিশু তনিমকে উদ্ধার করে ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে ঘাতক স্বামী তামিমকে গ্রেফতার করে। পরদিন বিকেলে অভিযান চালিয়ে ঘাতক তামিমের অপর দুই সহযোগী রুবেল দাড়িয়া ও জুলহাস শেখকে গোপালগঞ্জ ও বেদগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নিহত রাশিদার এটা দ্বিতীয় বিয়ে এবং ঘাতক স্বামী তামিমেরও দ্বিতীয় বিয়ে। তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তামিমের ও রাশিদার আগের ঘরে দুটি করে ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কারণে রাশিদা তার ১০ মাস বয়সী সন্তান তানিমকে নিয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার ১নং ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর