শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
সিংড়ায় অগ্নিকান্ডে পুড়লো ১২ স্বর্ণের দোকান, অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ইউএসএ বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-২৪, কবিদের পদচারণায় মুখলিত সিলেটের মুসলিম সাহিত্য সংসদ কাশিনাথপুর অগ্রণী ব্যাংক শাখায় অনিয়মের অভিযোগে ম্যানেজারসহ ৩ জন আটক নাগরপুরের দুই সাংবাদিক বিএমএসএস এ-র কেন্দ্রীয় দায়িত্বে সরইতে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করলেন মোঃ মোস্তফা জামাল ইউএসএ বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে আসতে শুরু করেছেন দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকগন গোপালপুরে তাপপ্রবাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ না মানায় মুচলিকা দিলেন দুই প্রতিষ্ঠান প্রধান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর এমপি’র রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ

বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ইসলাম মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। ইসলাম শিক্ষা দেয় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য করা। তাদের দুর্দিনে আর্থিক সহায়তা, খাবার-দাবার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসা ইমানের দাবি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি অসহায়-দুর্গত মানুষদের সাহায্য করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশও রয়েছে। বন্যা বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীগুলো হারিয়েছে নাব্য, খাল-বিলে সবখানেই পানির ঠাঁই নেই। অন্যদিকে হাওর-বাঁওড়ের পানির উৎস ভারতের আসাম ও মেঘালয়। সেখানে আষাঢ়ের মৌসুমে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল নামে। প্রথমে একবার বন্যায় বোরোর আবাদ তলিয়ে গেছে বানের পানিতে, কৃষক নিঃস্ব হয়েছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবারে ঢলের পানিতে ভাসছে জনপদ, ভাসছে মানুষ। খাবার সঙ্কট, পানির সঙ্কট, ওষুধের সঙ্কট অথচ পানি থইথই চারদিকে।

ঢলের স্র্রোত পেরিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া কষ্টসাধ্য। মানুষের প্রাণহানি ও ধনসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছেই। এখন জীবন বিপন্ন। প্রতি বছরই বন্যার সাথে যুদ্ধ করতে হয় এ দেশের মানুষকে। এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আবারো প্লাবিত হয়েছে। রেকর্ড বন্যায় ডুবেছে সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ অঞ্চল। টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুরমা আর কুশিয়ারার কূল উপচে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ৯০ শতাংশেরও বেশি প্লাবিত, সুনামগঞ্জের সাথে বন্ধ হয়ে গেছে সারা দেশের যোগাযোগ। সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলার সাথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর ছিল। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে সিলেট বিভাগ কার্যত সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকে অনেক দিন। দুই জেলার কিছু উঁচু স্থান ও পাহাড়ি এলাকা ছাড়া সবখানে এখন পানি আর পানি। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের কার্যক্রম। স্থগিত করে দেয়া হয়েছে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা। জেলা দু’টির বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষের অধিক। তাদের উদ্ধারে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

সিলেট অঞ্চলের এবারের বন্যা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। সিলেটে এর আগে যত বন্যা হয়েছে, তা মূলত হাওর এলাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার গ্রাম, শহর ও উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। ভারতে আগামী দু’দিন অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতিরই আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় বিপদে সিলেট ও সুনামগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ। অনেকে ঘরের ভেতরে কলাগাছ কিংবা বাঁশের ভেলা বানিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। বন্যার্ত এসব মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়েছে। অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে। সিলেট নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা, সিলেট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের তোড়ে পানি বাড়ছে হু হু করে। সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার এক মিটারের বেশি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট-গোয়াইনঘাট, সিলেট-কানাইঘাট, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কও পানির নিচে চলে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে পানি ওঠায় সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার ও ভয়াবহ বিপর্যয় মোকাবিলায় সিভিল প্রশাসনের সাথে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীও। সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিট সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের উদ্ধার এবং সহায়তায় কাজ শুরু করেছে। নৌকা দিয়ে প্লাবিত এলাকার বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। সিলেটের তিন উপজেলা ও সুনামগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে। সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি উঠে বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে তবে বর্তমানে কিছুটা পানি নামছে। এদিকে সিলেট নগরীসহ দুই জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বন্যার্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। কোথাও কোথাও আশ্রয়কেন্দ্রেও স্থান সঙ্কুলান ছিল না।

সুরমা নদীর পানি উপচে সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নগরে নালা-নর্দমা আর বন্যার দুর্গন্ধযুক্ত পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও মানুষজন। ফলে চরম দুর্ভোগে স্থায়ি বাসিন্দারা। ঘরে রান্না করারও কোনো উপায় না থাকায় চিড়া-মুড়ি খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন অনেকেই। এই মানবিক বিপর্যয় রুখে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। মানুষের এই কান্না দেখা যায় না। এখন দল মত নির্বিশেষে দরকার মানুষেরে পাশে দাঁড়ানো। বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা। পানিবন্দি হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। খাদ্যের অভাব ও নানারকম রোগেও বহু মানুষ প্রাণ হারায়। তাই সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের পাশে সরকারসহ দল-মত-নির্বিশেষে দেশবাসীর এগিয়ে আসা উচিত। সুনামগঞ্জের অনেক এলাকায় মানুষের দুর্গতি ভাবনার বাইরে। নিঃস্বার্থভাবে, অভাবী ও বিপন্ন বানভাসি দুর্গত মানুষের পাশে সাধ্যানুযায়ী দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক ও ইমানি দায়িত্ব। এতে আমাদের জন্য রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ এবং পরকালীন অজস্র সওয়াব। সবাই একসাথে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হাত বাড়ালে এই সঙ্কটের পথ পাড়ি দেয়া সহজ হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com