বিশ্বের প্রায় সব দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে সরকারি হিসাব দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে সেটি আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। তার চেয়েও আশঙ্কার বিষয়, মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। তাই প্রশ্ন উঠছে, মূল্যস্ফীতি শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে? দ্রব্যমূল্য কি বাড়তেই থাকবে?
অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, একটি অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর দিয়েই এ মূল্যস্ফীতির অবসান হতে পারে। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সুদের হার বাড়ানো শুরু করেছে।
মূল্যস্ফীতি ধারণার চেয়েও বেশি
চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড পূর্বাভাস দিয়েছিল, যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশ পর্যন্ত যাবে। কিন্তু সে অবস্থান থেকে সরে তারা এখন বলছে, এটি ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। এর ফলে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। ভবিষ্যৎ কী হবে সে সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। তবে চলতি বছর যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
আগামী বছর থেকে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে ধারণা করছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। আগামী দুই বছরের মধ্যে সেখানে মূল্যস্ফীতির হার দুই শতাংশে নামবে বলে আশা করছে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার আট শতাংশের ওপর।
অর্থনৈতিক মন্দার হাতছানি
বড় অর্থনৈতিক মন্দার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির গতি থামবে কি না সে প্রশ্ন এখন অনেক অর্থনীতিবিদের। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তার ফলে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে।
তবে মন্দার ভেতর দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অবসান হলে সেটি কি ভালো হবে? এনিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
অনেকে মনে করেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য দ্রুত সুদের হার বাড়িয়ে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, মন্দা দেখা দিলে বেকারত্ব বাড়বে। এর চেয়ে বরং মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রেখে সেটি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা ভালো।
কিন্তু কবে নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমবে তা নিয়েও দ্বিধান্বিত অর্থনীতিবিদরা। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের ওপরে উঠলে তা নেমে আসতে কয়েক বছর সময় লাগে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রিকার্ডো ক্রেসেনজি বলেছেন, ২০২৩ সালেও মূল্যস্ফীতি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, এর মূল উপাদানগুলো নিকট ভবিষ্যতে পরিবর্তন হবে না। সূত্র: বিবিসি বাংলা